দেশ ‘পুরোপুরি দুবৃর্ত্তদের কবলে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি দুবৃর্ত্তদের কবলে, বাংলাদেশ এখন লুটেরা মাফিয়াদের কবলে। একদিকে তারা (সরকার) রাজনৈতিক অধিকার হরণ করছে, অন্যদিকে তারা অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। এবং তাদের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে এটাকে পরনির্ভরশীল একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা।'  

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা আমাদের মহান নেতা স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে শাসকগোষ্ঠি আওয়ামী লীগ তারা বিভিন্ন কলাকৌশল করে জনগনের ভোটের অধিকার হরণ করে নিয়ে তারা আজকে ক্ষমতাকে দখল করে আছে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে ভিন্ন পদ্ধতিতে।

তাই তার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আমরা শপথ নিয়েছি যে, আমরা যুবক-তরুণ-আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা আজকে আমাদের অধিকার রক্ষার জন্যে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনকে আরো বেগবান করব এবং এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ যে দানবীয় সরকার তাদেরকে পরাজিত করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।

‘জিয়ার কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য’

জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১১টায় জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুস্পমাল্য অর্পনের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন নেতা-কর্মীরা।

আরো পড়ুন: নেতাকর্মীদের জেগে ওঠার আহ্বান মির্জা ফখরুলের

এই সময়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনার, হাবিবুর রহমান হাবিব, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উ্ন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম,  রফিক শিকদার, আমিরুজ্জামান শিমুল,আনিসুর রহমান তালুকদা্র খোকন, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগরের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে কবর প্রাঙ্গনে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলেও নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই থেকে এই দিনকে ‘শাহাদাত’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে দলটি।

সকালে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আগে খালেদা জিয়াই দলের প্রতিষ্ঠার কবরে গিয়ে পুস্পমাল্য অর্পন করতেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় সাজায় কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে দলের মহাসচিব স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করছেন।

আরো পড়ুন: খালেদা জিয়ার জন্য ফল পাঠাল জামায়াত

বিএনপি ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদাভাবে জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করা হয়।

সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হয়েছে। দিনব্যাপী এই ক্যাম্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দুঃস্থ রোগীদের দেখে বিনামূল্যে ঔষধ দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো পোষ্টার প্রকাশ করেছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ লাগিয়েছে।

জিয়ার কবরের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে আগারগাঁও লায়ন চক্ষু হাসপাতাল, হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গনে, সেগুন বাগিচা, শাহজাহানপুর, নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ একাধিক স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। এই সময়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগরের দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক প্রমুখ নেতারা ছিলেন।

মিরপুরের পল্লবী শপিং সেন্টারসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।