ক্ষমতায় থাকতে সরকার দেশকে ‘পরনির্ভরশীল’ করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তারা আজকে অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে কার স্বার্থে? অর্থনীতিকে ধবংস করে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে বিদেশীদের স্বার্থে। পরনির্ভরশীল একটা জাতিতে পরিণত করেছে।

রবিবার (৯ জুন) দুপুরে এক আলোচনা সভায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (সরকার) খুব বড় বড় কথা বলেন, বিএনপির সময় বাজেটের পরিমাণ ছিলো এতো, এখন হয়েছে এতো।

তিনি বলেন, বিএনপি দেশটাকে ভালোবাসতো, বলে তারা চটকরে জনগণের ওপরে করের বোঝা, ঋণের বোঝা আমরা চাপাবো না। আজকে ঋণের বোঝা জনগণের ওপর চাপানো হয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তির ওপরে এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা ঋণ, চিন্তা করতে পারেন। মাথাপিছু ঋণ এটা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের সমস্যা সমাধানে কোনো দিক নির্দেশনা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো ব্যবস্থা বাজেটে নেই। যে সমস্ত জিনিসপত্র-ম্যাসিনারিজ আমদানি করলে উৎপাদন বাড়তে পারে সেগুলোর ওপরে ট্যাক্স আরোপ করেছে। তাহলে কর্মসংস্থান হবে কিভাবে?

আরো পড়ুন: জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাবের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। জিয়াউর রহমানের ওপর দুইটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক কামরুল আহসান ও অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম।

‘আওয়ামী লীগের রসায়নই হচ্ছে দুর্নীতি-সন্ত্রাস’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের কেমিস্ট্রে হচ্ছে চুরি, দুর্নীতি, সন্ত্রাস। এখন তো দেখছেন চুরি, দুর্নীতি কিভাবে হচ্ছে। এতো চুরি যে ওই সময়ে তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলছেন, অন্য নেতারা দেশে পায় সোনার খনি আর আমি পাই চোরের খনি। এটা তার আক্ষেপের কথা।

এরা সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দিয়েছে। দেশটাকে ওরা জাহান্নামে নিয়ে গেছে। এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে। সমস্ত সুন্দর তারা ধবংস করে দিয়েছে। মানুষের মধ্যে যে একটা সৌহার্দ ছিলো, ভ্রাতৃত্ব ছিলো সেগুলো তারা ধবংস করে দিয়েছে।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দলীয়করণের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থাকে বন্ধ করে রেখেছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, কারা আসছে আজকে আমাদের নেতৃত্বে? তাদের কোয়ালিটি দেখেন, কি অবস্থা। এভাবে তো একটা দেশ ধবংস করতে আমাদের সব জায়গায় নেতৃত্বের সংকট। কেনো? পরিকল্পিতভাবে সমস্ত জায়গায় যেনো নেতৃত্ব সৃষ্টি না হয় সেই ব্যবস্থা তারা করেছে।

আরো পড়ুন: প্রশাসন এখন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান

নেতৃত্ব তৈরি হবে কিভাবে? ছাত্র সংসদের নির্বাচন নাই, ডাকসুর নির্বাচন নাই, কোথাও নির্বাচন নাই। নির্বাচন যেখানে তারা (সরকার) করে সেখানে জবরদস্তি করে জিততে পারে।

জিয়াউর রহমান জীবনাদর্শ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ছাত্র দলের নেতাদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করতে চাই। সেই ওয়ার্কশপে আপনার শিক্ষকরা জিয়াউর রহমানের বিষয়গুলো, দেশ-জাতি সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দেবেন। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আমাদের সর্বক্ষেত্রে সরকার বন্ধাত্ব সৃষ্টি করেছ, একটা ব্যানক্রাফট সৃষ্টি করেছে। লাভটা তাদের। কারণ তারা টাকা কামাচ্ছে, বিদেশে টাকা পাচার করছে… কোথাও কোনো কাজে তাদের সমস্যা হচ্ছে না। এজন্য দেখবেন তাদের চেহারা চক চক করে। আমাদের বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের চেহারা খারাপ হয়ে গেছে, এটা বাস্তবতা।

ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাবেক সাংসদ ফজলুল হক মিলন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইউট্যাবের অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, অধ্যাপক আবদুর রশীদ, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক আলীমুর রহমান, অধ্যাপক আমজাদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।