সাদিক এগ্রোর মাফিয়া ইমরানের দাম্ভিকতা ও পৈশাচিকতা ফাঁস

সাহিদুল ইসলাম সাঈদ
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম

সাদিক এগ্রোর মাফিয়া ইমরানের দাম্ভিকতা ও পৈশাচিকতা ফাঁস
প্রিয় মোহাম্মাদ ইমরান হোসেন ভাই। আমার এই লেখাটা যেন আপনার গোচরিত হয় সেজন্যে আপনাকে ট্যাগ দিলাম। এই লেখাটা লেখার সন্ধিক্ষণে আপনার মনের অবস্থাটা কেমন তা কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারছি। কারণ একটা খামার গোছাতে একজন উদ্যোক্তাকে কতটুকু কাঠখড় পোহাতে হয় তা একজন খামারী হিসেবে আমি অনুধাবন করতে পারি। সরকারি জায়গা উদ্ধারজনিত কারণে আপনার যে যৎসামান্য ক্ষতি হয়েছে তা আপনি শিগগির কাটিয়ে উঠবেন ইনশাল্লাহ। সেই হিম্মত ও মনের জোড় আপনার আছে।
কিন্তু আপনার হারানো সম্মান ও পাবলিক পারসেপশন ফিরে পেতে হলে নেলসন ম্যান্ডেলার সেই বিখ্যাত “ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন” তত্বের দ্বারস্থ হতে হবে। এই তত্বের মূল বক্তব্য হলো ভুল স্বীকার করে নতুন করে শুরু করা। ভুল স্বীকার বলতে আমি প্রকাশ্যে কারো নিকট ভুল স্বীকারকে মিন করি নাই। আপনি আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারেন। মনে মনে চিন্তা করে বের করতে পারেন কোন কোন জায়গায় আপনার গ্যাপ ছিল যার কারণে এ ধরনের পাবলিক পারসেপশন তৈরি হলো। সবজায়গায় খামারীদের ষড়যন্ত্র তত্ব না খুঁজে নিজেকে শুধরে নিন। আমার দৃষ্টিতে আপনার কিছু ভুলের অবতারণা করি। যেমন-
ঘটনা- ১
আপনার মনে আছে কিনা জানি না। আমি ২০১৮ সালের দিকে সিলেটের খামারীদের ট্রেনিং করানোর জন্য সিলেটে গিয়েছিলাম। আমি তখন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)-এর প্রচার সম্পাদক ছিলাম। আপনি খামারীদের ট্রেনিং করানোর অপরাধে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন। আমি নোটিশের জবাবও দিয়েছিলাম। ব্যাপারটি আমাকে তখন অনেক আশ্চর্যান্বিত করেছে যে, খামারীদের কল্যাণের জন্য তৈরি সংগঠনের সদস্য খামারীদের শিখাতে পারবে না! ভেরি সেলুকাস! এরপর থেকেই কিন্তু আপনাদের সাথে আমার দূরত্ব তৈরি হয়।
ঘটনা- ২
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)-এর কন্সটিটিউশন মোতাবেক কারো যদি খামার না থাকে তাহলে সে এক্সিকিউটিভ বডিতে থাকতে পারবে না। সে হিসেবে যেহেতু মো. জাহিদ হোসেন ভাই খামার বন্ধ করে দিয়েছে সেহেতু উনি এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে থাকার অধিকার রাখে না। কিন্তু অফিসিয়াল প্রক্রিয়ায় না গিয়ে আপনি ব্যক্তি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অফিসের পিওন দিয়ে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ওনাকে বহিষ্কার করে ওনার সম্মানহানি করলেন। যার প্রতিবাদে আমিই সর্বপ্রথম ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলাম। যার সূত্র ধরে বড়দের সাথে অসদাচরণের দায়ে আমাকেও বিডিএফএর প্রচার সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। অথচ দেখেন ২০১৮ সাল থেকে শাহ্ এমরান ভাইয়ের খামার বন্ধ তারপরও উনি এখনো আপনার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। হতে পারে আপনারা কন্সটিটিউশন পরিবর্তনের মাধ্যমে টেকনোক্রেট সাধারণ সম্পাদকের পদ তৈরি করেছেন!
ঘটনা- ৩
খামারীরা নিজের প্রয়োজনে বিভিন্ন সোর্স থেকে ভালো ওষুধ/ভেকসিন/প্রিমিক্স সংগ্রহ করতেই পারে। সেরকমই আল আমীন তালুকদার রুবেল নিজের খামারে ব্যবহারের জন্য ইন্ডিয়া থেকে রাখশা এফএমডি ভেকসিন নিয়ে এসেছিল, আপনিসহ অনেকেই ওর কাছ থেকে ভেকসিন এনে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু আপনি কি করলেন? আপনাদের বিরুদ্ধে কোন একটা পোস্টে রুবেলকে ওই পোস্টদাতা ট্যাগ করেছিল। আপনি পোস্টদাতাকে না ধরে মধ্যরাতে পুলিশ দিয়ে রুবেলকে বাসা থেকে তুলে মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে আসলেন। থানায় দুদিন আটকে রেখে প্রাণী সম্পদের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে তার বিরুদ্ধে ভেকসিন চোরাচালানের মামলা দিয়ে দিলেন। আর পরের দিন মিডিয়াতে প্রচার করে দিলেন ভেকসিনসহ রুবেলকে নাকি পুলিশ চেকপোস্টে আটক করেছে! আর এই নিউজ আমার প্রিয় সাজিদুর রহমান ভাইসহ আপনার লয়েল পাপেটগুলো ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় একযোগে ফেসবুকে প্রচার করা শুরু করলো। কিন্তু ছেলেটার ফ্যামিলি এই মামলার ঘানি টানতে পারবে কিনা ক্ষমতার দাপটে একটুও চিন্তা করলেন না! মামলার বাদী ছিল সরকারি লোক অথচ আপনি উকিল নিয়োগ করে রিমান্ড চাইলেন। সে জেলে থাকাবস্থায়ই শুনে তার বিরুদ্ধে নাকি আরেকটা আইসিটি মামলাও দিয়েছেন। সে জেলে থাকাকালীন তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তিন চারদিন পর পর তার সাথে দেখা করতে যাইতাম। ছেলেটি খুব পড়ুয়া ছিল আমি জেলখানায় তাকে বিভিন্ন ধরনের মোটিভেশনাল বই দিয়ে আসতাম। আর বলতাম একাকিত্বকে জয় করার একমাত্র ওয়ে হচ্ছে বই পড়া। বিশ্বাস করেন, সে একবারও আপনার দোষ দেয়নি জাস্ট নিজের নিয়তিকে দোষ দিয়েছে। কিন্তু তার দীর্ঘশ্বাস সাত আসমান ভেদ করে আল্লাহর দরবারে পৌঁছেছে। যাই হউক দীর্ঘ এক ১৭ দিন জেল খাটার পর জামিনে বের হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ট্রমা এখনো কাটেনি। তার অশ্রু, দীর্ঘশ্বাস, বিনা দোষে ভোগান্তির কি কোন বিচারই হবে না। একদিন হবে এই দুনিয়ায়ই হবে এটাই আমাদের মতো মজলুমদের একমাত্র ভরসার জায়গা।
ঘটনা- ৪
কারো কারো অতি উৎসাহের কারণে হয়তোবা আপনার সংগঠনের নামেই আরেকটি প্যারালাল সংগঠন করা হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমি, রুবেলসহ অনেকেই যেটার বিরোধী ছিলাম। এই ক্ষোভে আপনি আমাদের ১৬ জনের নামে আপনার খামারে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে বসলেন। মামলার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে বেনজীর আহমেদের প্রভাব খাটিয়ে ওই সময় অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ দিয়ে মধ্যরাতে বাসায় রেইড দেওয়ালেন। বাড্ডার ডেইরি খামারী আনোয়ার ভাইকে মধ্যরাতে অ্যারেস্টও করাইলেন। আমার যাত্রাবাড়ির বাসায় আমাকে না পেয়ে আমার রিলেটিভকে তুলে আনার হুমকি দিয়ে আমার মগবাজারের বাসার ঠিকানা নিয়ে ওখানেও রেইড দেওয়ালেন। কেনোরে ভাই! আমার প্রতি আপনার এতো ক্ষোভ? আমার মতো একজন ক্ষুদ্র লোককে ধরার জন্য ১২ জন পুলিশ পাঠাতে হয়? বাই হুক অর বাই ক্রোক আমাকে অ্যারেস্ট করাতেই হবে? জামিন নেওয়ার আগ পর্যন্ত ১৭ দিন বাসায় থাকতে পারিনি। অথচ দেখেন, বগুড়ার তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবও একই মামলার আসামি ছিল। আপনার প্রভুত্ববাদ মেনে নেয়ার কারণে তাকে পাশে বসিয়ে বিভিন্ন মেলা, প্রোগ্রাম করলেন কিন্তু আমি নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে আপনার স্বেচ্ছাচারিতায় সামিল হইনি বলে আমাকে দৌড়ের উপর রাখলেন। কেনরে ভাই জগতের সবাই আপনার ডোমিনেশন মেনে নিবে এই ধারনা পোষণ করলে তো এক সময় আপনি মেন্টাল হয়ে যাবেন।
ঘটনা- ৫
মানুষ ব্যবসা করলে কাস্টমার সাইড থেকে পজিটিভ ও নেগেটিভ দুটো রিভিউই আসতে পারে। বাট আপনি নেগেটিভ রিভিউ টলারেট করতে পারেন না। মনে আছে! তৎকালীন গরু পাগলাদের জনপ্রিয় গ্রুপ বিডিজিএইচ-এর এডমিন জেবরুলের কথা? যে আপনার কাস্টমারের দেওয়া নেগেটিভ রিভিউকে বিডিজিএইচে অ্যাপ্রুভ করার কারণে সদ্য বিবাহিত ছেলেটাকে তাকে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে এসেছিলেন? ছেলেটা এতিম ছিল, তার মা খালা সারা রাত আপনার বাসার সামনের রাস্তায় বসে ছিল। আর এগুলো আপনারা বুক ফুলিয়ে আমাদেরকে বলতেন। কিন্তু তখন কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছি! আমরাও আপনার তৈরি ডার্ক ব্যাকহোলের ভিতরে পড়ে গেছি! আপনার মতের বিরুদ্ধে গেলে আমাদেরকেও জেবরুলের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে। এরপর রাসেলের কথা মনে আছে? জিজিবিডি না কোন গ্রুপের এডমিন বা মোডারেটর ছিল। খুবই বাচ্চা ছেলে ছিল। তাকে তুলে এনে শিবলি ভাইসহ আপনারা থাপ্পড় দিয়ে লাইভে এনে মাফ চাওয়াইছেন? ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বলতে ছিল, “আর কি কি বলতে হবে বলে দেন।” আহ ভাই ক্ষমতার এত্তো এত্তো দাপট দেখাইছেন! একবারও মনে হয় নাই! যে উপরে একজন বসে সবকিছু দেখতেছে?
যাই হোক যারাই আপনার বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদেরকেই আপনি আপনার ক্ষমতার অপব্যবহার করে হয়রানী করেছেন। জানি আপনি আমার এই লেখার প্রতিটি লাইন অ্যানালাইসিস করে আইসিটি বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন ধারায় আমাকে ফাঁসানো যায় কিনা সেই চেষ্টা করবেন। এক সাঈদকে না হয় নিষ্ক্রিয় করে রাখলেন! আরো সাঈদ যে জন্ম হবে না তার নিশ্চয়তা কি? এক ছাগল যে সবকিছু তছনছ করে দিবে এইটা কেউ ভেবেছিল? কতজনের বিরুদ্ধে আপনি মামলা দিবেন? সোশ্যাল মিডিয়ায় গিয়ে কমেন্টগুলো একটু পড়ে আসুন। দেখুন আপনার ব্যাপারে পাবলিক পারসেপশন কেমন? এতো এতো মানুষের ক্ষোভ, দীর্ঘশ্বাস ও অভিশাপের লোড কি নিতে পারবেন? মানুষ টাকা উপার্জন করে সম্মানের জন্য, অভিশাপের জন্য না। তাই মামলা মামলা খেলা বাদ দেন।
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই খামারীদের ইউনাইটেডের ডাক দিয়েছে। কিন্তু ভাই ইউনাইটেডের জন্য দরকার ভালোবাসার, ভালো কর্মের। বাট আপনি তো জোড় করে, জুলুম করে এই সেক্টরের অধিপতি হতে চাচ্ছেন। হয়তোবা আপনার বলয়ের ক্ষমতা ব্যবহার করে হয়েও যাবেন কিন্তু টেকসই হবে না। তাই নিজেকে একটু সংশোধন করুন, অনেক কিছু হজম করতে শিখুন। আপনি এই সেক্টরে যে জায়গা তৈরি করেছেন ওইটা আপনারই থাকবে, আপনার পরিপূরক এখনো তৈরি হয়নি, আর এতো সহজে তৈরি হবেও না। প্রান্তিক খামারীরা ট্রেনিং নিয়ে সমৃদ্ধ হলে আপনারই লাভ। তাদের কাছ থেকে কমদামে কিনে কম্পারেটিভলি একটু বেশি দামে বেচতে পারবেন। তাই তাদেরকে শিখতে দিন।
সবশেষে বলবো আমি ভাই সরাসরি ফিল্ডে কাজ করা খামারী। প্রতিনিয়ত কৃষি ও লাইভস্টক নিয়ে নিরলসভাবে পড়াশোনা করে নতুন নতুন ইনোভেশন খামারীদের সামনে উপস্থাপন করছি। আমাদের মতো অ্যানার্জেটিক, দেশপ্রেমিক খামারিদের মামলা হামলা দিয়ে দমিয়ে রাখলে এই সেক্টরের তথা এই দেশের জন্য অনেক বড় রকমের ক্ষতি। কারণ ইকোনোমিক্যাল আসপেক্ট অ্যানালাইসিস করলে অর্থনীতিতে আপনার চেয়ে আমাদের মতো প্রান্তিক খামারীদের অবদান অনেক অনেক বেশি।
তাই এই সেক্টরের উন্নতির জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার, ইউনিটি দরকার এটাই রুঢ় বাস্তবতা। এই বাস্তবতাটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন তত তাড়াতাড়ি আপনি সত্যিকার অর্থে এই সেক্টরের অধিপতি হয়ে উঠতে পারবেন। আপনার প্রতি অবিরাম ভালোবাসা ও দোয়া রইলো। আশা করি খুব শিগগির আপনি সমস্ত কনফিউশনকে জয় করে ঘুরে দাঁড়াবেন ইনশাল্লাহ।
লেখক: সাহিদুল ইসলাম সাঈদ, কাশফুল এ্যাগ্রো, [ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া]