সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের খবরে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক
গাজীপুর

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

এম নজরুল ইসলাম, গাজীপুর থেকে : গাজীপুর-ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের সার্ভিস লেনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এমন খবরে সড়কের পাশে হিড়িক পড়েছে ভবন নির্মাণের। যাতে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মনীতি। এটি বন্ধ করতে ইতোমধ্যে সওজের প্রকল্প পরিচালক স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকা ও অপসারণের জন্য নির্দেশনা না দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না। জানা গেছে, সাপোর্ট টু জয়দেবপুর দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা-বাইপাস) পিপিপি প্রকল্পের অধীনে সড়কের উভয় পাশে ৩০ ফুট সার্ভিস লেন নির্মাণের জন্য উলুখোলা, সেনপাড়া, কুচিলাবাড়ী, রাথুরা ও গলান মৌজায় মোট ২ দশমিক ৫৫৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য গত ৭ নভেম্বর জেলা প্রশাসককে জমি অধিগ্রহণের চিঠি দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এরপর থেকে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবিত এলাকায় কোথাও জমির মালিক, কোথাও জমির ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বেশি আদায় করার অসৎ লক্ষ্য নিয়ে ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতায় নেমেছন। এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য কোনো নকশা অনুমোদন বা কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি।
বিষয়টি নজরে আসায় ইতোমধ্যে সওজের প্রকল্প পরিচালক স্থাপনা নির্মাণকারীদের চিঠি দিয়ে নির্মাণ থেকে বিরত থাকার জন্য এবং নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানায় একাধিক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এই নির্দেশ অমান্য করে ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে জমির ক্ষতিপূরণ দেয়ার সময় সরকারের বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত খরচ করতে হতে পারে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-বাইপাস সড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার গরান এলাকায় অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণে কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ করূ হচ্ছে না। দ্রুত সময়ে ভবন নির্মাণের জন্য নি¤œমানের ইটখোয়া ব্যবহার হচ্ছে। দিনরাত টানা কাজ করে যাচ্ছে শ্রমিকরা। এসব স্থাপনায় ব্যবহার হচ্ছে ৬ থেকে আট মিলি রড। চায়ের দোকান, সেলুন, মুদি দোকানও ইটের গাঁথুনি ও ছাদ পেটা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ২-৩ তলা ভবনের উপর নতুন করে আরো কয়েক তলা করা হয়েছে। নি¤œমানের সামগ্রী ও নির্মাণ ত্রæটির কারণে এসব ভবন যে কোন ভেঙ্গে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। চায়ের দোকানদার নাজমুল ইসলাম বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে এখানে চায়ের দোকান করি। নতুন করে এটি মেরামত করছি। সবাই করছে কিন্তু কেনো করছে জানি না। ভবনের মালিকদের বক্তব্য, মৌজা রেটের সঙ্গে জমির মূল্যের তফাৎ থাকায় অধিগ্রহণ হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তৈরি করা হচ্ছে এসব স্থাপনা। তারা জানায়, এ উপশহরে প্রতি কাঠা জায়গার মূল্য প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা কিন্তু সে অনুযায়ী সরকারিভাবে মৌজা রেট অনেক কম। তাই আমাদের দাবি, সরকার জমি অধিগ্রহণের সময় জমির দাম বাড়িয়ে দেয়া হোক।
এদিকে, সড়ক জনপদ বিভাগ বলছে, অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়ার পরই রাতারাতি তৈরি হচ্ছে স্থাপনা। ঢাকা বাইপাস প্রকল্প, সওজ উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, গত অক্টোবর মাসে সার্ভিস লেন উন্নতি করার জন্য আমরা একটি জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছি। যা বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চলমান আছে। এখন ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে সড়কের পাশে এসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছ। এ বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন সিংহ বলেন, ঢাকার যানজট এড়িয়ে পণ্য ও যানবাহনের চলাচলের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নিরাপদে স্থানীয় পরিবহনের জন্য সড়কের উভয়পাশে সার্ভিস লাইন নির্মাণ করতে জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। আমরা প্রস্তাব দেয়ার পর কিছু অসাধু লোক বেশি ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য রাতারাতি অবৈধভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে। প্রকল্পের বাড়তি খরচ কমাতে আমরা এসব স্থাপনা নির্মাণ বন্ধসহ যেগুলো নির্মিত হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন জানান, যদি কোথাও সরকারি কোনো জায়গায় এ ধরণের স্থাপনা নির্মাণ হয়ে থাকে। আর সেটা যদি পাওয়া যায় তাহলে আমরা অবশ্যই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাব।