‘এবার আমাদের বাড়ির পূজার ১০০ বছর’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কোয়েল মল্লিক
প্রতি বছরই মহালয়ার অনুষ্ঠানে দুর্গারূপে দেখা যায় অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিককে। এবারো একটি জনপ্রিয় বাংলা চ্যানেলের ‘রণংদেহী’ অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যাবে মা দুর্গার ভূমিকায়। ২ অক্টোবর, মহালয়ায় ভোর ৫টা থেকে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হবে। দুর্গাপূজা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য
এত বছর, এত বার মা দুর্গার চরিত্রে আপনাকে দর্শকরা দেখেছেন। প্রতিটা পারফরম্যান্স আলাদা করেন কী করে?
অশুভ শক্তির নাশ করা মা দুর্গার আসল কাজ। প্রতি বছরের অনুভূতিটা আলাদা হয়। প্রত্যেকবার মনে হয় এটাই আমার প্রথমবার। প্রত্যেকবার একটা স্ট্রেংথ, একটা পাওয়ার চলে আছে পারফর্ম করার সময়ে। যখন মেকআপ করি, পোশাক পরি, অটোমেটিক্যালি সেই ফোর্সটা অনুভব করতে পারি। ‘রণংদেহী’-তে মহিষাসুরমর্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করার সময়েও তাই হয়েছিল।
মল্লিকবাড়ির পূজার কি কোনো প্রভাব থাকে পারফরম্যান্সে?
সেটা ঠিক জানি না। তবে ছোট বয়স থেকে বাড়ির দালানে প্রতিমা গড়া দেখেছি। আমার সব সময় মনে হয় মা আসছেন মানে সব ঠিক হয়ে যাবে। এটাই আমার সব থেকে বড় সান্ত¡না। প্রতিটা দিন আমাদের শুধু আনন্দে আর খুশিতে কাটতে পারে না। কষ্ট থাকে, বেদনা থাকে। কিন্তু এই পূজার সময়ে আকাশে-বাতাসে যেন মায়ের শক্তিটা ফিল করা যায়। মনে হয় উনি আসছেন, সব ঠিক করে দেবেন। সব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়ে যাবে। সবাই এই ক’টা দিন আনন্দে কাটাবেন। এই অনুভূতিটা চিরন্তন।
এ বছর পূজার প্ল্যান কী? ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়?
প্রত্যেকবার পূজায় যা করি, এই বছরও তাই করব। বাড়িতে পূজা হয় বলে আলাদা করে ছেলেকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হয় না। পূজার চার-পাঁচদিন কীভাবে কেটে যায় বুঝতেই পারি না। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আত্মীয়স্বজন আসেন। সারা বছরের গল্পটা তাড়াহুড়ো করে এই চার-পাঁচদিনে সেরে ফেলতে হয়। আমার একটা কথা মনে হয়, পশ্চিমবাংলার প্রতিমা শিল্পীরা অসাধারণ প্রতিমা গড়েন। এই সময়টা পশ্চিমবঙ্গ সারা বিশ্বের কাছে দেখার মতো হয়ে ওঠে। আমরা ইউরোপিয়ান আর্টের কথা বলি অনেক সময়, তারা যদি এই সময়ে আমাদের প্রতিমা দেখার সুযোগ পান, একইরকম প্রশংসা করবেন। পূজায় হয়তো বেরোনো হয় না, কিন্তু তেমন কোনো প্রতিমা চোখে পড়লে মনে হয়, বাহ! কী সুন্দর। এই বছর আমাদের বাড়ির পূজা ১০০ বছরের। তাই অন্যরকম একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। তবে পূজাটা অনেকটাই প্রাইভেট হবে।
ছোটবেলার পূজার সময়ের কোন স্মৃতিটা খুব প্রিয়?
প্রত্যেকবারই নতুন নতুন স্মৃতি তৈরি হতো। আসলে ছোট থেকেই আমার কাছে পূজা মানে অন্যরকম একটা আনন্দ। আমার বাবা (রঞ্জিত মল্লিক) বলেন, পূজার সময় আমরা সবাই আবার বাচ্চা হয়ে যাই। ছোটদের সঙ্গে সঙ্গে আমরা, বাবা-জ্যেঠা সবাই আবার ছোট হয়ে যাই। একটা অন্য আহ্লাদ, অন্য মজা, অন্য হুল্লোড় কাজ করে। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় ভাবতাম তথাস্তু ভগবান বলে একজন কেউ আছেন। যিনি তার মুড অনুযায়ী হঠাৎ হঠাৎ তথাস্তু বলেন। আর তখনই আমাদের প্রার্থনা সার্থক হয়ে যায়। উনি তথাস্তু বললে তবেই যা চাই তা পাওয়া যায়। এই ধারণাটা আমার মনে বদ্ধমূল হয়ে গেঁথে গিয়েছিল। এখন সেই কথা মনে পড়লে বেশ মজা লাগে।
এ বছর মা দুর্গার কাছে কী চাইবেন?
এখন যেরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, একটাই জিনিস চাইব, তিলোত্তমার জাস্টিসটা ঠিকমতো হোক। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তারা যেন কঠোরতম শাস্তি পায়। যাতে ভবিষ্যতে আর একবারের জন্যও এরকম ঘটনা না ঘটে। এটাই যেন শেষবার হয়। মনের মধ্যে যা চলছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। প্রত্যেক দিন আমাদের প্রত্যেকের একটাই প্রার্থনা মেয়েটি যেন জাস্টিস পায়। আমি এবারে সেটাই চাইব। সবার শুভবুদ্ধি হোক। সবাই যেন শান্তিতে, আনন্দে থাকেন। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেকটা মানুষদের কর্তব্য অন্য মানুষকে ভালো রাখা। নিজেদের ভালো রাখার পাশাপাশি এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।