×

মেলা

‘এখন আর করার মতো কোনো চরিত্র নেই’

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘এখন আর করার মতো কোনো চরিত্র নেই’

সব্যসাচী চক্রবর্তী

   

মাঝে আপনার শরীর অসুস্থ ছিল। এখন কেমন আছেন?

এক মাস আগে আমার স্ত্রীর ক্যানসারের অস্ত্রোপচার। তার পরেই আমি! পাল্স ৩৪! বুকে পেসমেকার বসল। ডাক্তার জানালেন, তিন মাস বিশ্রামে থাকতে হবে। একদম জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলাম।

এখনো ধূমপান করছেন?

না, ছেড়ে দিয়েছি! ভাবতে পারছেন? আমার পকেটে একটাও বিড়ি নেই। সঙ্গে কোনো দেয়াশলাই নেই। তবে শুটিংয়ে লুকিয়ে ধূমপান করেছি। কিন্তু অনেক চর আছে আশপাশে। স্ত্রীর কানে খবর পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু ৪০ বছর ধরে ধূমপান করার পর হঠাৎ বন্ধ করলে মেজাজ একটু খিটখিটে হয়ে যায়। বাড়িতেও তার প্রভাব পড়ে। স্ত্রী বয়সের কথা বললে আমি তখন বলি ধূমপান করছি না, তাই মেজাজটা খিটখিটে হয়ে গিয়েছে। ও তখন অবাক হয়ে বলে, ‘এটাই তোমার অজুহাত!’

আপনি তো এখন কাজের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন...

কিছুই করছি না! প্রায় বছর দুয়েক আগে থেকে এটা শুরু হয়েছে। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। কাজ কমিয়ে দিলাম। ফেলুদা আর করলাম না। ফলে ভালো লাগার জায়গাটাও বন্ধ হয়ে গেল।

এখন কি আপনি অবসর নিতে চাইছেন?

হ্যাঁ, এখন আমি অবসর গ্রহণ করতে চাইছি। কারণ আমার এখন আর করার মতো কোনো চরিত্র নেই।

ফেলুদার বাইরেও তো চরিত্র রয়েছে। প্রস্তাব তো আসে নিশ্চয়ই...

আমাকে বলা হলো, ‘আপনি না থাকলে ছবিটা হবে না।’ কী চরিত্র জিজ্ঞাসা করতে বলা হলো, হিরোর বাবা। দেখা যাবে, হয়তো তার আগের ছবিগুলোতেও একই চরিত্র এবং একই সংলাপ। আমার যুক্তি, নতুন কিছু না হলে আমি অভিনয় করব না।

‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিতে তা হলে অভিনয় করতে রাজি হলেন কেন?

শুভ্রজিৎ খুব ভালো পরিচালক। ওর প্রথম ছবি ‘আগুনপাখি’তে একটা সুন্দর চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। কোনো অজ্ঞাত কারণে ছবিটা মুক্তি পায়নি। ও যখন ‘অভিযাত্রিক’-এর প্রস্তাব দেয়, তখনো আমি অবাক হই। কারণ আমি নাকি শঙ্কর! তার পর ছবিটা প্রশংসিত হলো। তার পর এই ছবিটার প্রস্তাব এলো। প্রথমে রাজি হইনি। জোর করে আমাকে নিল। তার পর আটকে গেল ছবি! আমার জন্য ওদের খুব ভুগতে হলো।

বাংলায় তা হলে নতুন চরিত্র তৈরি হচ্ছে না বলতে চাইছেন?

আসলে শহুরে বহুতলের দর্শকের কথা ভেবে ছবি তৈরি করা হলে, এটাই হবে। নেপথ্যে থাকেন কিছু মার্কেট অ্যানালিস্ট। কী লিখতে হবে, তারাই ঠিক করে দেন। আমি তখন পরিচালককে বলি যে, এই ধরনের ছবি দেখে শহরের বহুতলের দর্শক প্রশংসা করতে পারেন, কিন্তু বৈঁচি গ্রামের দর্শক ছবিটা দেখবেন না।

এই দর্শক বিভাজনের প্রবণতা কি বাংলা ছবির ক্ষতি করছে বলে মনে হয়?

গ্রামের মানুষ অশিক্ষিত নন, এটা সবার বোঝা উচিত। তাদের একাংশ গরিব হতে পারেন, কিন্তু অশিক্ষিত নন। আসলে পার্থক্যটা সংস্কৃতিগত। গ্রামের মানুষও এখন জিন্স পরেন। তারাও মোবাইল ব্যবহার করেন এবং অনলাইনে কেনাকাটা করেন। গ্রামের দর্শক যে ছবি দেখেন, সেখানে সামাজিক মূল্যবোধ রয়েছে। সেই ছবিতে ভালো-খারাপের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। আমি স্পষ্ট বলে দিই যে, ছবি করতে চাই না, কারণ তিনি লিখতে পারছেন না।

আপনি কী ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাইছেন?

আমার বাড়ির কাছে যে বস্তিগুলো রয়েছে, সেখানকার বাচ্চাদের কাছে এখনো আমি ‘দেবের বাবা’ হিসেবে পরিচিত। কারণ তারা পরিবারের সবার সঙ্গে দেখার মতো বিনোদনমূলক ছবিগুলো দেখে। চরিত্র নিয়ে আমার কোনো বাছবিচার নেই। ভালো বা খারাপ যে কোনো ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি। আমি কমেডিও করতে পারি, আবার ফেলুদার মতো অন্য ধরনের কোনো চরিত্র হলেও আমি রাজি। যেমন অনীকের (অনীক দত্ত) ‘মেঘনাদবধ রহস্য’ তো করেছি। কিন্তু তার আগে চরিত্রটাকে মনের মতো হতে হবে।

হিন্দি ছবির প্রস্তাবও কি ফিরিয়ে দিচ্ছেন?

গত দুই বছরে ছবি এবং সিরিজ মিলিয়ে অন্তত ২২টা হিন্দি কাজ ফিরিয়ে দিয়েছি। ফোন এলে সোজা বলে দিই, আমি এখন কাজ করছি না। ইচ্ছা হলে আমি ফোন করে নেব। বাংলার তুলনায় বলিউডের বেশি কাজ ফিরিয়েছি। কাজ করব না মানে বাংলা, হিন্দি কোথাও করব না।

আপনার অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্তকে পরিবারের সদস্যরা কি সমর্থন করেছেন?

ওদের প্রত্যেকেরই খুব আপত্তি। সবচেয়ে বেশি আপত্তি আমার স্ত্রীর। কারণ ওর মতে, আমি খিটখিটে বুড়ো হয়ে বাড়িতে বসে থাকব।

বাড়িতে তা হলে এখন কীভাবে আপনার সময় কাটে?

তিনটি বই লিখে ফেলেছি। বাবার নাটকের সংগ্রহ তৈরি করলাম। শারদীয়তে লিখলাম। বাড়িতে সিনেমা দেখি। আগে শুটিংয়ের জন্য খেলা দেখার সময় পেতাম না। এখন বাড়িতে ক্রিকেট এবং ফুটবল দেখি। ফর্মুলা ওয়ান, টেনিসও দেখি। ইলেকট্রনিক কিছু প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। দিব্যি সময় কেটে যায়।

নিজের ছবি দেখেন?

একদম নয়। খুব খারাপ!

ফেলুদাও দেখেন না?

মাঝেমধ্যে দেখি। কিন্তু এখন খুব খারাপ লাগে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পর আপনার ফেলুদা হিসেবে জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। আর স্বয়ং সব্যসাচীর সেই ফেলুদা পছন্দ হচ্ছে না!

হ্যাঁ। কারণ এখন দেখলে মনে হয়, আমি আরো ভালো করতে পারতাম। তবে কয়েকটা জায়গায় শুধু মনে হয় যে, মন্দ করিনি।

অন্যদের অভিনীত ফেলুদা দেখেন?

সকলের ফেলুদা দেখেছি। শুধু পরমের (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সাম্প্রতিক ফেলুদা দেখা হয়নি। টোটা (টোটা রায়চৌধুরী), আবীর (আবীর চট্টোপাধ্যায়), ইন্দ্রনীল (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) সকলের ফেলুদা দেখেছি। এমনকি বাংলাদেশে আহমেদ রুবেল অভিনীত ফেলুদাও দেখেছি। কিন্তু কোনো তুলনায় যেতে চাই না। কারণ তারা প্রত্যেকেই নিজের নিজের মতো করে ভালো অভিনয় করেছে।

আপনার অভিনীত ফেলুদার জনপ্রিয়তার নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে বলে মনে হয়?

বলা কঠিন। আমাকে কেউ বলেন, আমার কণ্ঠস্বর। আমি তাদের বলি, তা হলে তো কোনো বাচিকশিল্পী অভিনয় করলে ভালো হতো। কেউ বলেন, আমার চেহারা। তাদের বলি, আমার মতো দাগ অন্য কারো মুখে নেই। আর যারা বলেন, আমার উচ্চতা, তাদের প্রশ্ন করি, তা হলে কি দ্য গ্রেট কলি অভিনয় করলে আরো ভালো হতো! যিনি বলেন, আমার অভিনয়, তাকে বলি, কী এমন অভিনয়, যার জন্য কোনো দিন আমি কোনো পুরস্কার পাইনি!

তার জন্য কোনো খারাপ লাগা...

একদম নয়। অজস্র অভিনেতা ছিলেন বা রয়েছেন, যারা সারা জীবন তাদের মতো করে লড়াই করে গিয়েছেন এবং ভালো অভিনয় করে গিয়েছেন। অথচ তারা প্রাপ্য সম্মান পাননি। কেন? উত্তমকুমারের থেকে তুলসী চক্রবর্তী, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল বা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় কি অভিনয়ের নিরিখে কোনো অংশে কম ছিলেন! কিন্তু তাদের প্রত্যেককে একটা স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। অতগুলো স্তম্ভ ছিল বলেই ‘উত্তমকুমার’ নামক বড় বাড়িটি দাঁড়িয়ে ছিল।

আজকের ইন্ডাস্ট্রিতে কি এ রকম স্তম্ভের অভাব রয়েছে?

না না, বহু অভিনেতা রয়েছেন। রনি (রজতাভ দত্ত), রুদ্র (রুদ্রনীল ঘোষ) বা বিশ্বনাথ (বিশ্বনাথ বসু) কোনো দিন নায়কের চরিত্র পাবে না। কিন্তু এরা কোন নায়কের থেকে কম? তাই আমি ফেলুদা করলাম, সেটা মানুষের ভালো লেগেছে বলে যে মাটিতে আমার পা পড়ছে না- এটা খুবই খারাপ ধারণা।

ব্যোমকেশকে নিয়ে বড় পর্দায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। ফেলুদার যদি কখনো বয়স বাড়ে, প্রস্তাব পেলে রাজি হবেন?

তা হলে তো বাবুদা (সন্দীপ রায়) নিজেই লিখে ফেলতেন! সত্যজিৎ রায়ের লেখা অবলম্বনেই ফেলুদা তৈরি হবে। অন্য কেউ লিখলে বা এক্সপেরিমেন্ট করলে, সেটা অন্তত ‘ফেলুদা’ হবে না।

আপনি সমাজমাধ্যমে নেই। কিন্তু আপনার অনুরাগীরা কি আপনার অবসরের সিদ্ধান্ত সমর্থন করবেন বলে মনে হয়?

আমি নেই, কিন্তু আমার একটা ফ্যানক্লাব আছে। সব মহিলা সদস্য এবং অল্পবয়সি। ওরা নাম রেখেছে ‘সব্যসাচী চক্রবর্তী ফ্যান আর্মি’। ওরা আমাকে খুবই সাহায্য করে। মাঝে আমার নামে ফেসবুকে একটা ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়। ওরাই কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে সেটা বন্ধ করায়। এখনো জন্মদিনে আমার বাড়িতে তারা কেক নিয়ে হাজির হয়। উপভোগ করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App