‘সমাজমাধ্যমে কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রচনা ব্যানার্জি
এত ব্যস্ততা, সব দিক সামলে কেমন আছেন?
সব দিক সামাল দেয়াটা আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে এখন। সংসার সামলাচ্ছি, দিদি নাম্বার ওয়ান, ছেলেকে সামলাতে হচ্ছে। চোখের পলকে সময় কেটে যাচ্ছে যেন।
১৩ বছর ধরে একটানা একটা শো করা, কীভাবে সম্ভব হলো?
এখন নবম সিজনের ১০০০ পর্ব উদ্যাপন হচ্ছে। কিন্তু আমি ৫০০০-এর বেশি পর্ব করে ফেলেছি এই শো-এ। আমার কাছে এটা বিরাট সাফল্য। এই শোয়ের ভিত আমার দিদিরা। তাদের ভালোবাসা জি বাংলার কৃতিত্ব।
১৩ বছর কম সময় নয়, এই শো কী পরিবর্তন এনেছে মানুষ রচনার মধ্যে?
যে সময় কর্তৃপক্ষ আমার ওপর ভরসা করছিলেন, সেই সময় আমিও নিজেকে ভরসা করতে পারিনি। তারাই বলেছিলেন, ‘রচনা ব্যানার্জী এটা করতে পারবেন।’ তখন আমি ভরসা পেলাম। মনে হলো, নাহ্?, সত্যিই এই শো একটা ইতিবাচক কিছু করতে চলেছে। সেই বিশ্বাসে ভর করেই দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে গিয়েছে।
এত দিন ধরে একটানা একটা শো করছেন, একঘেয়ে লাগে না?
এটা কিন্তু সংলাপ মুখস্থ করে অভিনয় করে যাওয়া নয়। তাই একঘেয়ে লাগে না। প্রতিদিন ১২ জন করে দিদির সঙ্গে কথা বলি। তাদের জীবনের গল্প শুনি। তখন মোটেও একঘেয়ে লাগে না। বরং প্রতি দিন নতুন নতুন
কিছু শিখি।
বড় পর্দার মেগা তারকা, ছোট পর্দাতেও ব্লকবাস্টার এটা মানেন তো?
আমার শো হিট, সেটা মানছি। আমার ভাগ্য ও আমার জীবনীশক্তি আমাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। যদিও মানুষের ভালোবাসা ছাড়া কিছুই সম্ভব হতো না।
বড় পর্দাকে মিস্ করেন না?
অবশ্যই করি, অভিনেত্রী হয়েই তো জীবন শুরু করেছিলাম। বাকি সব কিছু তো পরে এসেছে। কিন্তু অভাব বোধটা থাকলেও আর কিছু করার নেই। এখন আর আমার সময় নেই।
এখন তো অনেক ধরনের গল্প নিয়ে ছবি হচ্ছে, আপনার কাছে এ রকম চিত্রনাট্য আসে না, না কি চাইছেন না কাজ করতে?
না, কোনো চিত্রনাট্যই আসে না। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি বড় পর্দায় অভিনয় করব না। সবাই জেনে গিয়েছেন, রচনা কাজ করছে না। তাই চিত্রনাট্য নিয়ে কেউ আসেন না। ভবিষ্যতে আবার ছবি করব কি না জানি না! কিন্তু এখন ভীষণ ব্যস্ত। ছবি করার মতো সময় নেই। আগামী দিনে ফাঁকা সময় পেলে ভেবে দেখতে পারি।
প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি নিয়ে কাজ হচ্ছে, একটা সময় রচনা-বুম্বা জুটিও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল, এই জুটির কথা কি ভুলে গেলেন সবাই?
আসলে বুম্বাদা নিজেই তো খুব কম কাজ করেন এখন। আমিও কাজ করছি না। তবে ভবিষ্যতে যে তেমন হবে না, এমন কথা বলছি না। কখন কী হবে কে বলতে পারে!
আগামী বছর কি কোনো খবর পাব এই সংক্রান্ত?
আমার ইচ্ছা আছে এক-আধটা ছবি করার। ২০২৫-এ ভেবে দেখতে পারি।
সাংসদ হওয়ার পর নিন্দুকেরা বলছেন আপনার শো ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’-এর টিআরপি পড়ছে?
আসলে লোকে অনেক কথা বলে। নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলেন। ভালোমন্দ দুই নিয়েই তো চলতে হয়। কারো মুখ বন্ধ করা আমার কাজ নয়। আমার ওপর আজকাল এ সব কিছু আর প্রভাব ফেলে না। আর ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’-এর কী হতে চলেছে সেটা দর্শক দেখতেই পাচ্ছেন ও ভবিষ্যতেও পাবেন।
ট্রোলিং আপনার ওপর প্রভাব ফেলে না বললেন, ছেলে তো এই প্রজন্মের। সারাক্ষণ নিশ্চয়ই সমাজমাধ্যমে আপনাকে দেখছে। ওর কী প্রতিক্রিয়া?
আসলে আমার ছেলে একেবারে আমার মতো। ও খেলার জগৎ নিয়ে থাকতে ভালোবাসে। ট্রোলিং, মিম, এ সব দেখে না। ছেলে জানে ওর মা সাংসদ, অভিনেত্রী। তাকে নিয়ে লোকে অনেক কথা বলবে। এ সব বিষয়ে মাথা ঘামায় না। আমার কাছে এটা ভীষণ ইতিবাচক দিক যে ছেলে এই বয়স থেকেই এভাবে ভাবতে শিখে গিয়েছে।
সামনেই ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক তো?
হ্যাঁ, সেই জন্য উদ্বেগে রয়েছি। সারাক্ষণ চিন্তা। এই সময়টাতে আসলে মায়েদের পরীক্ষা হয়ে যায়। তাই যতটা পারছি ওর সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। দিল্লি যাওয়া কমিয়েছি। যত ক্ষণ না পর্যন্ত ছেলের পরীক্ষা শেষ হচ্ছে দিল্লি যেতে পারব না। কিছু তো আত্মত্যাগ করতেই হয় মায়েদের।
রাজনীতি ব্যক্তি রচনার জীবনে নেতিবাচক না কি ইতিবাচক?
আমার জীবনে এখনো পর্যন্ত ভীষণ রকম ইতিবাচক। চার-পাঁচ মাস হলো রাজনীতিতে এসেছি। আগামী দিনগুলোও যেন সুন্দর হয় সেই চেষ্টাই করব। আর সমাজমাধ্যমে কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না। যারা আমাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন আমি যাতে তাদের সেই ভরসার মান রাখতে পারি।
সাংসদ হওয়ার পর আপনার স্বামী খুবই উচ্ছ¡সিত ছিলেন, তাহলে কি ব্যক্তিগত জীবনে সম্পর্কের উত্তরণ ঘটেছে?
হ্যাঁ, প্রবাল নিজের কাজ দেখছে, তেমনই আমার ব্যবসার কাজও পুরোটাই সামলাচ্ছে। এ ভাবেই চলছে।
রচনা ব্যানার্জী এত কাঁদেন কেন?
আমি খুব আবেগতাড়িত একটা মানুষ। মানুষের দুঃখের কথা শুনলে চোখে জল চলে আসে। আমি মানুষটাই নরম প্রকৃতির। ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’-এর মঞ্চে আমি কেঁদে ফেলি মানুষের কথা শুনে।
আরজি কর-কাণ্ডের পর আপনার করা লাইভ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। চোখের জল থেকে চোখের কাজল সব কিছু নিয়ে কটূক্তি হয়েছে। সহ্য করতে পেরেছেন?
আমি আসলে মানুষটাই এ রকম। নির্যাতিতাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে এসেছিল। সেখানে কোনো অভিনয় ছিল না। কিন্তু লোকে যা বলার বলবেই। আমি গায়ে মাখি না। আমি আবেগতাড়িত মানুষ বলেই লোকে ট্রল করে। আমাকে নিয়ে আলোচনা করলে কর। আমার কিছু যায়-আসে না। কারণ আমাকে কষ্ট দেয়া অত সোজা নয়। আসলে সে দিন আমার যেটা মনে হয়েছিল, সেটাই করেছিলাম। মনে হয়েছিল লাইভে এসে নিহত চিকিৎসককে নিয়ে ক’টা কথা বলব। তাই করেছিলাম। যা করেছি খুব সহজাতভাবে করেছি, কোনো ভান-ভনিতা করিনি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পদবি ছাড়া নিজের আর কোনো মিল খুঁজে পেয়েছেন?
আসলে আমি দিদির (মমতা) সঙ্গে কোনো মিল খোঁজার চেষ্টা করি না। তার কথায় আমি এই জায়গায় এসেছি। দিদি ভরসা রেখেছেন আমার ওপর। আমি যেন মর্যাদা রাখতে পারি।
আচ্ছা অভিনেত্রী মানেই তাকে সুন্দর দেখতে হবে এ রকম ধারণা রয়েছে। আবার সুন্দর দেখানোর জন্য কেউ বোটক্স ফিলার করলেও রেহাই পান না সমালোচনা থেকে। কী মত আপনার?
হ্যাঁ অভিনেত্রীদের তো সুন্দর থাকতে হবে, এমন সবাই ধরেই নেন। উনিশ থেকে বিশ হলেই কড়া সমালোচনা। কেউ যদি বোটক্স, ফিলার করান, করাতেই পারেন। সেটা তার অধিকার। এ ধরনের কথাবার্তা একদম পছন্দ করি না। যারা এমন সমালোচনা করেন তাদের নিজেদের দিকে তাকানো উচিত।
আপনার কি কখনো ভয় হয় বার্ধক্যের?
না, আমি মনে করি নিজের বয়সটা উপভোগ করা উচিত। বার্ধক্য না এলে অমিতাভ বচ্চন বুড়ো হতেন না হেমা মালিনীও বুড়ি হতেন না।