সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের মা
ছেলে এখন বিদেশে, এলিফ্যান্ট রোডের হামলায় জড়িত নয় সে

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে ব্যবসায়ীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। চাঁদা দাবির পাশাপাশি ইন্টারনেট, পানি ও ময়লার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এবং মার্কেট রাজনীতি নিয়ে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
যদিও মামলার অন্যতম আসামি ইমনের মা ডা. সুলতানা জাহান দাবি করেছেন, তার ছেলে এ ঘটনায় জড়িত নন। ইমন বর্তমানে বিদেশে আছেন, তাকে ষড়যন্ত্র করে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও তার ভাই ওয়াহিদুল হাসান দিপু তাদের সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক প্রধান ডা. সুলতানা জাহান বলেন, আমার ছেলে ইমন আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীদের রোষানলে পড়ে একাধিক মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলখানায় আটক ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইমন জামিনে মুক্তি পায়। ইমন বর্তমানে বিদেশে। কিন্তু তাকে এলিফ্যান্ট রোডের হামলায় আসামি করা হয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারির হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মার্কেটের সিসিটিভি ও একাধিক ডিভাইসে ধারণকৃত ছবি ও ভিডিও ফুটেজে কোথাও ইমনের উপস্থিতি নেই। আমার সন্তান ইমন যদি তাদের কারো কাছে কখনো চাঁদা চেয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি এতদিনে পুলিশ, র?্যাব, ডিবি, সেনাবাহিনীকে জানানো হয়নি কেন? সশরীরে বা ফোন কলে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করলে কল রেকর্ড বা সিসিটিভি ফুটেজ প্রশাসনের কাছে পাঠায়নি কেন?
ইমনের মা সুলতানা জাহানের অভিযোগ, মামলার বাদী ওয়াহিদুল হাসান দিপু পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের আপন বড় ভাই। গত ৫ আগস্টের পর বসিলায় জোড়া খুনের ঘটনা তিনি নিজের হাতে ঘটিয়েছেন বলে ওই মামলার তদন্ত সূত্রে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ১ নম্বর আসামি পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল। আর বিএনপি কমিশনার রাজু হত্যার ২ নম্বর আসামি এই ওয়াহিদুল হাসান দিপু।
ডা. সুলতানা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের আরো জানাচ্ছি যে, এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সভাপতি নির্বাচনে শুধুমাত্র একটা ফরম বিক্রি হয়েছে। অন্য কাউকে ফরম কিনতে দেননি এই শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল। তিনি সবাইকে হুমকি দিয়ে সভাপতি পদের ফরম কেনা থেকে বিরত রাখায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় মার্কেটের সভাপতি পদে বিজয়ী হন ওয়াহিদুল হাসান দিপু। আমাদের ধারণা, তিনি এই মার্কেটটি নিজের দখলে রাখার জন্য হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।
তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও তার ভাই ওয়াহিদুল হাসান দিপু আমাদের সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই। যদিও এর আগে গত ১২ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেছিলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট একটি বিরোধ আগে থেকেই ছিল। আমাদের ধারণা এই নির্বাচনের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে অথবা অন্য যে কোনো কারণেই হতে পারে।
পুলিশ বলছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- আসিফুল হক ওরফে আসিফ ওরফে ঝন্টু (৩২), মো. কাউসার মৃধা (২৪) ও এনামুল ওরফে মুরগি এনামুল। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত আসামি। আর এনামুল সন্ত্রাসীদের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেন। তবে মামলার প্রথম আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনসহ (৫২) অন্য গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের মধ্যে আছেন মুন্না, এ কে এম চঞ্চল ও জসিম ওরফে কালা জসিম। যদিও ইমনের বিদেশ থাকার বিষয়ে পুলিশের কোনো ধারণা নেই বলে জানা গেছে।