হারিসুল হকের কবিতায় জমিন

আলফ্রেড খোকন
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

-সরে দাঁড়াও
একজন তকমা আঁটা লোক আমাকে ঠেলতে ঠেলতে বলল
আমি নিজেকে সামলে নিতে নিতে উত্তর দিলাম
-আর কত সরব?
আক্কার জোর আরো একমাত্রা বাড়িয়ে সে বলল
-সেটা আমার দেখার নয়, তোমার
হায় সবাইকে জায়গা ছেড়ে দিতে দিতে
অবশেষে দেখলাম
আমারই দাঁড়ানোর জয়াগা নেই।
(কবিতা : আমার সংকট
গ্রন্থ : সময়ের বিশিষ্ট পেরেক ২০২২)
এই যে সবাইকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজেরই দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না- এটাই কবি হারিসুল হকের কবিতায় জমিন, দাঁড়ানোর জায়গা। কবিতা প্রসঙ্গে অনেক কথা বলার চেয়ে আমি বেশি আরাম বোধ করি কবিতার পাঠে। কারণ কবির কবিতা পাঠের মধ্যে দিয়ে একজন পাঠক কবির ধ্যানের জগৎ, মনের জগৎ, মনের বাইরের জগতে এবং তার ভেতরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক নির্মাণ করতে পারেন। সেটা একেবারেই কবি ও কবিতা পাঠকের মধ্যে একটি নিরঙ্কুশ সম্পর্ক রচনা করে ফেলে। সুপারিশ লাগে না। যদি সে সম্পর্ক রচনা করতে কোনো কবি ব্যর্থ হন, তাহলে হয়তো আমরা দুই ধরনের উক্তি করতে পারি- ১. এই কবির কবিতা ভ্রমণে পাঠক হিসেবে নিজেকে আরো উপযুক্ত করে তুলতে হবে। ২. না হলে এই কবিকে প্রকৃত পাঠকের জন্য আরো তৈরি হতে হবে। এযাবতকাল ধরে কবিতা নিয়ে যত রকমের আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তাতে কবি ও কবিতার বিশেষ কিছু হয়নি। কবির হাতে কবিতাটা ফললেই তা বিশেষ হয়ে ওঠে। আলোচনা করে তাকে বিশেষ করতে হয় না।
কবি হারিসুল হকের কবিতার আমি পাঠক। তার কবিতার প্রসঙ্গে এ কথাটা বলা আমার পক্ষে সত্যিই আরামদায়ক। তার কবিতা কত আগামীকালের, তার কবিতায় চিত্রকল্পের অবিস্মরণীয় প্রয়োগ আছে কিনা, তার কবিতার ছন্দ নিখুঁত কিনা, কিংবা ছন্দ ভেঙে ছন্দকলায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারলেন কিনা- এমন আলোচনার চেয়ে, বরং পড়ি না তার কয়েকটি কবিতা। তা যদি মর্মকে স্পর্শ করে মুগ্ধতার দিকে নিয়ে যায়, তবে সব আলোচনা ছাপিয়ে যাবে। কবির যা কাজ কবি হারিসুল হক নিভৃতে তা কিছুটা করছেন বলে একজন পাঠক হিসেবে আমি তা বোধ করি। জয় হোক তার কবিতার।
স্বপ্নে সৈকতে
ক.
কেউ আমাকে ঝাঁকাচ্ছিল। আর আমি স্বপ্নবৃক্ষকে।
তখন বৃন্তচ্যুত হতে থাকল কয়েকটি ডালিম
-স্বপ্নতরলপূর্ণ। আমি চূর্ণ ঘুমের দিকে হাত বাড়ালাম
-শুধুই প্রচ্ছায়া। জানলাম বৃন্তচ্যুত ডালিম সর্বদাই
পলায়নপর হয়।
মুষ্টিমুক্ত ফড়িং যেভাবে আকাশে দৌড়োয়
খ.
সেন্টমার্টিনে একটি কাছিম দেখেছিলাম
আকাশের দিকে পিঠ করে তীরের বালুতে শুয়ে।
আমি ওর কাছাকাছি থাকছিলাম।
শক্তপিঠে ছ-টি টোকা দিতেই-বন্দুকের নলের মতো
গলা বাড়িয়ে দিল।
ঠিকমতো টোকা পড়লে দরজা খুলবেই জানলাম।
(গ্রন্থ : দুরন্ত ঘুণ জীবনের ভাঁজে-২০০)