অর্থনীতির চরম বিপর্যয়: ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস, নেপথ্যে যেসব

অনামিকা রায়
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম
গভীর সংকটে দেশের পুরো অর্থনীতি। মন্দায় ব্যবসা-বাণিজ্য। অস্তিত্ব সংকটে শিল্প-কারখানা। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের উচ্চমূল্য, জ্বালানি খাতে অস্থিতিশীলতা, ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে চরম চাপে ব্যবসা।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে। আর এমন বহুমুখী চাপে নাস্তানাবুদ দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। ৬০ শতাংশের বেশি কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে না। ব্যাংকে সুদ বেড়েছে, গ্যাস নেই, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি—সব মিলিয়ে বন্ধ হওয়ার পথে শিল্প-কারখানা।
শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। মূলধন ঘাটতির কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকট আরো গভীর হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলেই আশঙ্কা তাদের।
এদিকে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমেছে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ার অন্যতম প্রধান নিয়ামক এই খাতটিতে প্রবৃদ্ধি নেমেছে ৬.৮২ শতাংশে- যা ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অন্যদিকে, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। বর্তমানে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের পাশাপাশি আরো ৪৪ হাজার কোটি টাকা নতুন করে খেলাপি হওয়ার পথে। ব্যাংকিং খাতেও চলছে তারল্য সংকট। সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ শতাংশে। সরকারের ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতা এই চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার। যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে। এতে আর্থিক খাতে চাপ তৈরি হয়েছে- যা বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে।
এদিকে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কর্মসংস্থানে লেগেছে বড় ধাক্কা। বাড়ছে বেকারত্ব। গত এক বছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এছাড়াও, বর্তমানে দেশের শিল্প খাত চরম চাপের মুখে রয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে, আবার কিছু কারখানা আংশিক বন্ধ কোনোটা বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব সরাসরি ঋণগ্রহীতাদের ওপর পড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা। এই দুটি মিলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। চলমান এই অস্থিরতায় দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তারা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ঋণের উচ্চ সুদহার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে, যা নতুন বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভয় পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া উচ্চ সুদহারের কারণে বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারাও। সব মিলিয়েই দেশের অর্থনীতি আজ চরম সংকটের মুখে।