আফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৯ পিএম

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার। ছবি : সংগৃহীত
নতুন এক নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম থেকে নারীদের লেখা বই সরিয়ে দিয়েছে তালেবান সরকার। এই নিষেধাজ্ঞায় মানবাধিকার ও যৌন হয়রানির মতো বিষয়ে পাঠদানও বেআইনি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
‘শরিয়াবিরোধী ও তালেবান নীতির’ কারণে যে ৬৭৯টি বই কর্তৃপক্ষের উদ্বেগের কারণ হয়েছে তার প্রায় ১৪০টিই নারীদের লেখা। নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় এমনকি রাসায়নিক গবেষণাগারে নিরাপত্তা শীর্ষক বইও রয়েছে।
এক তালেবান কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শরিয়া ও শাসনব্যবস্থার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ১৮টি পাঠ্যবিষয় পড়ানো বন্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চার বছর আগে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহেই শীর্ষ নেতার আদেশে দেশটির অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করা হয়। অনৈতিকতা ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।
আরো পড়ুন : রাশিয়ায় শক্তিশালী ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি
এসব নিয়মকানুন আফগানদের জীবনে নানান প্রভাব ফেলছে। তবে নারী ও কন্যাশিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এইসব নিয়মনীতির কারণে। এখন ষষ্ঠ শ্রেণির পর তারা আর পড়তে পারছে না। ২০২৪ সালের শেষদিকে ধাত্রীবিদ্যা সংক্রান্ত কোর্স বন্ধ করে দেওয়ার পর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী-সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে সরাসরি নিশানা বানানো হলো।
যে ১৮টি বিষয় পড়ানো নিষিদ্ধ হয়েছে, তার মধ্যে আছে ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ এবং ‘উইমেন্স সোশিওলজি’সহ অন্তত ৬টি বিষয়, যেগুলোর সঙ্গে সরাসরি নারীর সম্পৃক্ততা রয়েছে।
তালেবান সরকার বলছে, তারা নারীর অধিকারকে সম্মান করে, তবে তা অবশ্যই আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামী আইনের আলোকে হতে হবে।
বই পর্যালোচনাকারী কমিটির এক সদস্য বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, নারীদের লেখা বই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হবে না। তিনি বলেন, নারীদের লেখা কোনো বই পড়ানোর সুযোগ থাকছে না।
এই নিষেধাজ্ঞায় অবাক হননি তালেবান ক্ষমতায় ফেরার আগে ন্যায়বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি। যাদের বই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই রয়েছে তার বইও। তিনি বলেন, গত চার বছরে তালেবান যা করেছে তা বিবেচনায় নিলে তাদের পাঠ্যক্রমে হাত দেবে এটা অনুমান করা কঠিন ছিল না। তাদের নারীবিদ্বেষী নীতি অনুযায়ী নারীদের পড়তে না দেওয়া, তাদের ভাবনা ও লেখালেখি দমন করা একেবারেই স্বাভাবিক।
আগস্টের শেষদিকে তালেবানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনা জারি করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো চিঠিতে মন্ত্রণালয়ের পাঠ্যবিষয়ক উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আইয়ুবি জানান, ধর্মীয় পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কেবল নারীদের লেখা বই-ই নয়, ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান সংস্কৃতিতে ইরানি উপাদানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো তালিকায় নিষিদ্ধ বইয়ের সংখ্যা ৬৭৯টি, যার মধ্যে ৩১০টির লেখক ইরানি বা বইগুলো ইরানে ছাপা।
এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ বইগুলোর অভাব পূরণ হবে না। তিনি বলেন, ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই আফগান বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈশ্বিক অ্যাকাডেমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছিল। এগুলো সরিয়ে দেওয়ায় উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হলো।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানান, এখন শিক্ষকদেরই বাধ্য হয়ে পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় তৈরি করতে হবে, তবে সেটা করতে হবে তালেবান সরকারের বিধিনিষেধ মেনে। তবে এসব লেখা বৈশ্বিক মানের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিবিসি তালেবান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।