উজানের ঢলে ফের প্লাবিত ফেনীর উত্তরাঞ্চল, দুর্ভোগ চরমে

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ০১:৪০ পিএম

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবারও প্লাবিত হচ্ছে ফেনীর উত্তরাঞ্চল। ছবি : সংগৃহীত
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবারও প্লাবিত হচ্ছে ফেনীর উত্তরাঞ্চলের গ্রামগুলো। সোমবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে টানা ভারী বৃষ্টির কারণে ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানি মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রামে প্রবেশ করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এর আগে গত ৮ জুলাই উজানের ঢলে এই তিন নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪১টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। টানা মেরামতের পরও নতুন ঢলে আবারও সেই ভাঙা অংশ দিয়ে হু-হু করে পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ৪১টি ভাঙন পয়েন্টের মধ্যে ৬টি স্থানের মেরামত কাজ শেষ হলেও ২৮টি স্থানে এখনও মেরামত কাজ চলমান। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলের কারণে ২০ জুলাই মধ্যরাত থেকে নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করে। ফলে কিছু জায়গার ভাঙা অংশ দিয়ে নতুন করে পানি ঢুকে পরশুরামের পশ্চিম অলকা, পূর্ব অলকা, নোয়াপুর, চিথলিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ও ফুলগাজীর কিছু এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার পর বাঁধ মেরামতে প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও পাউবোর তদারকি, স্বচ্ছতা আর কাজের মান ঠিকমতো ছিল না। তাই বছর না ঘুরতেই আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পশ্চিম অলকার বাসিন্দা শরিফ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানিতে আমরা বারবার ডুবছি। এ দুর্ভোগ কি কোনোদিন শেষ হবে না?
বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে অলকা গ্রামের মানুষ প্রতীকী জানাজা আদায় করে ‘পাউবোর মৃত্যু’ ঘোষণা করেছেন।
পাউবোর ফেনীর উপ-সেকশন প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানান, ভারতের উজানে টানা বৃষ্টির কারণে সোমবার দুপুর থেকে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তা বিপদসীমার ১২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তবে পানি দ্রুত বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, নদীর ভাঙন রোধ ও মেরামতের কাজ দ্রুত শেষ করতে অতিরিক্ত শ্রমিক ও সরঞ্জাম মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে ভারী বর্ষণ ও ঢল একসাথে এলে বাঁধ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
দ্রুত মেরামত ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দাবি জানিয়েছেন পরশুরাম ও ফুলগাজীর ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। তারা বলছেন, প্রতিবছর একই ভোগান্তি চলতে থাকলে জীবন-জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব নয়। বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ ও টেকসই সমাধান দাবি করেছেন স্থানীয়রা।