পদ বাণিজ্যের অভিযোগ
আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী জসিম মোল্লা এখন বিএনপির নেতা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

মোহাম্মদ জসিম মোল্লা সদস্য, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপি ও সাধারণ সম্পাদক, নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম, মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধা গ্রহণকারী মো. জসিম মোল্লা বর্তমানে নিজেকে বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার সান্নিধ্যে থেকে একাধিক পদ হাতিয়ে নিয়ে সেসব পদকে পুঁজি করে পদ বাণিজ্যের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করছেন তিনি।
জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কুকুটিয়া ইউনিয়নের বিবন্ধি গ্রামের বাসিন্দা জসিম মোল্লা গত পাঁচ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন, তার স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সোহানা তাহমিনা ও তাদের পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য হাজী ফয়সাল বিপ্লবের অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সুবিধা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরকার পরিবর্তনের পর তিনি দ্রুত বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিজেকে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা পরিচয় দিয়ে তদবির ও প্রভাব বিস্তারের ঘটনাও শোনা যাচ্ছে।
আইনজীবী পরিচয় নিয়ে ক্ষোভ
অভিযোগ রয়েছে, পেশায় আইনজীবী না হয়েও জসিম মোল্লা নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ গ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আইনজীবী জানান, “জসিম আইনজীবী না হয়েও আমাদের পরিচয় ব্যবহার করছেন, যা পেশাগত ও নৈতিকভাবে অত্যন্ত দুঃখজনক।”
অতীত রাজনৈতিক যোগসাজশ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীনগরের বাসিন্দা হলেও জসিম মোল্লা প্রথমে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জামাল মণ্ডলের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ শহরে আসেন। পরে কথিত জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য হয়ে বিভিন্ন অপকর্মের বৈধতা নেয়ার চেষ্টা করেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ওই প্রেসক্লাবটি পরিচালনা করতেন এডভোকেট সোহানা তাহমিনা। তার হাত ধরেই জসিম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের আস্থা অর্জন করেন।
নারী ও শিশু অধিকার ফোরামে পকেট কমিটি
অভিযোগ রয়েছে, জসিম মোল্লা বর্তমানে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’-এর নামে বিভিন্ন উপজেলায় পকেট কমিটি গঠন করছেন। এসব কমিটিতে এমন অনেককেই রাখা হচ্ছে, যারা বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী নন। এই পদসমূহকে হাতিয়ার করে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দফতরে তদবির বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এতে ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, সুবিধাবাদী এ ধরনের নেতাদের কারণে দলে সৎ, ত্যাগী ও আদর্শবান নতুন নেতৃত্বের প্রবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
তৃণমূলের ক্ষোভ ও প্রত্যাশা
বিএনপির একাধিক স্থানীয় নেতা ও কর্মী বলেন, “সরকার পাল্টালেও কিছু সুবিধাবাদীর চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এদের কারণেই বিএনপির প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া না হলে তারাই দলের জন্য বিষফোঁড়ায় পরিণত হবে।”
তারা আরও বলেন, “আমরা চাই দলের শুদ্ধি অভিযান চলুক। এ ধরনের নামধারী নেতা ও তদবিরকারীদের বিরুদ্ধে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”