বৈঠকে সম্মত দুই পক্ষ
করাচি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করবে বাংলাদেশ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পাকিস্তানের করাচি সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এই বন্দরের মাধ্যমে চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও পণ্য বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে। তবে কবে থেকে এবং কীভাবে এই কার্যক্রম শুরু হবে, তা নির্ধারণ করবে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। এখনো ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ–পাকিস্তান নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আর পাকিস্তানের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো এই বৈঠক—এর আগে সর্বশেষ জেইসি বৈঠক হয়েছিল ২০০৫ সালে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের পক্ষ থেকেই করাচি বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ বেশি দেখানো হয়েছে। এখন যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বন্দরের ব্যবহার পদ্ধতি, খরচ, সুবিধা ও বাণিজ্যিক কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তিনি বলেন, আলোচনার ফলেই নির্ধারণ হবে করাচি বন্দর বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভজনক হতে পারে।
আরো পড়ুন : অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সরকার প্রস্তুত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
জেইসির প্রস্তুতি সভায় জানানো হয়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও করাচি বন্দর ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। এতে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশেও পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও পাকিস্তান শিপিং করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। পাশাপাশি বিমান যোগাযোগ, বিনিয়োগ সুরক্ষা, কৃষি, ব্যাংকিং, আর্থিক সেবা, জ্বালানি, শিক্ষা ও প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নৌ চলাচল ও আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ানোসহ কৃষি, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও খাদ্য খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এগুলো দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, এই বৈঠক দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর করবে। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাট ও ওষুধ আমদানির বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশা করছি।
জেইসি বৈঠকের পর বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটি (পিএইচএ)-এর মধ্যে হালাল বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশের পক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এবং পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকাস্থ হাইকমিশনার ইমরান হায়দার এতে স্বাক্ষর করেন।
এদিকে পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক মঙ্গলবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে দুই দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে হবে এবং পারস্পরিক সুবিধা বাড়াতে হবে।
পাকিস্তানের মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন সময় এসেছে সেই সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার।
