ফিফার শান্তি পুরস্কার, ট্রাম্পের জন্য আগাম শর্ত দিয়েছিল হোয়াইট হাউজ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফিফার ‘শান্তি পুরস্কার’ প্রদান ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি জানা গেছে, এই পুরস্কার দেওয়ার আগে হোয়াইট হাউজ নাকি বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার কাছে একাধিক শর্ত জুড়ে দিয়েছিল।
গত নভেম্বরে ফিফা ঘোষণা দেয়, বিশ্বজুড়ে মানুষকে একত্রিত করা এবং শান্তির জন্য ব্যতিক্রমধর্মী অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ফিফা পিস প্রাইজ’ চালু করা হচ্ছে। পরে ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে, ৫ ডিসেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। শুরু থেকেই বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দেয়।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো যে নতুন এই পুরস্কার চালু করেন, সেটি নিয়ে আগেই ফিফার কাছে শর্ত দেয় হোয়াইট হাউজ। প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বড় শর্ত ছিল— ফিফার প্রথম শান্তি পুরস্কারের ট্রফির আকার যেন ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির সমান হয়।
আরো পড়ুন : অস্থিরতার মাঝেও বিপিএলের শুরু নির্ধারিত সময়েই: বিসিবি
উল্লেখ্য, ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির উচ্চতা ১৪ দশমিক ৫ ইঞ্চি এবং এতে ১৮ ক্যারেট খাঁটি সোনা ব্যবহার করা হয়। যদিও শান্তি পুরস্কারের ট্রফির সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে এর উচ্চতা অন্তত এক ফুট। এছাড়া পুরস্কার গ্রহণের সময় ট্রাম্পের পাশে দু’জন সেনা সদস্য দাঁড়িয়ে থাকার দাবিও জানানো হয়েছিল হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে অনুষ্ঠানে দুইজন মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য ট্রাম্পের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
টাইমসের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পুরস্কার ঘোষণার আগে ট্রাম্প ও ফিফা প্রকাশ্যে এমনভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করেন যেন আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বাস্তবে ট্রাম্প নিজেই ফিফার সঙ্গে সমন্বয় করে এই সম্মান নিশ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ নভেম্বর ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার না পাওয়ার পরপরই ফিফা নতুন এই ‘শান্তি পুরস্কার’ চালুর ঘোষণা দেয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হোয়াইট হাউজ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
শান্তি পুরস্কার বিতর্কের আগেও ট্রাম্প ও ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সবার নজরে ছিল। অভিযোগ উঠেছে, ফিফার নীতিমালা লঙ্ঘন করেই ট্রাম্পকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ফিফার নৈতিকতা পর্যবেক্ষক সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
অধিকারকর্মী সংগঠন ‘ফেয়ারস্কয়ার’ অভিযোগ করেছে, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার বাধ্যবাধকতা ভেঙে ইনফান্তিনো ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, দেশ ও বিদেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে ফিফার নিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে, যা ফুটবল ও ফিফার সুনাম ও অখণ্ডতার জন্য গুরুতর হুমকি।
ট্রাম্পকে ‘বিশ্ব শান্তিতে অবদান’-এর স্বীকৃতি হিসেবে একটি ট্রফি, একটি মেডেল এবং একটি সনদ দেওয়া হয়। যেখানে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীরা কেবল একটি মেডেল পান, সেখানে ট্রাম্পকে অতিরিক্ত সম্মান দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এছাড়া ইনফান্তিনো যে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পরিকল্পনার আগাম ধারণা রাখতেন, তারও ইঙ্গিত মিলেছে। কেনেডি সেন্টারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ড্র অনুষ্ঠানে ইনফান্তিনো ভেন্যুটিকে ‘ট্রাম্প-কেনেডি সেন্টার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এর দুই সপ্তাহ পর ট্রাম্প মনোনীত কেনেডি সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নাম পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দেয়। যদিও এ জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
