ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন, যা বলল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)-এর নতুন মিশন চালু হচ্ছে—যা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশের মানবাধিকার উন্নয়ন, সুরক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে এই মিশন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) ওএইচসিএইচআর এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এ কথা বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার ফলকার টুর্ক ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম তিন বছরের জন্য এই সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেন। সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই অংশীদারিত্ব দেশের মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি রক্ষার সক্ষমতা, আইনি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সরকারপ্রধানের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই উদ্যোগ আমাদের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এবং জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে—বিশেষত ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে।
আরো পড়ুন : মার্কিন স্বার্থে মানবাধিকার মিশন খুলতে দেওয়া হবে না
প্রসঙ্গত, গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ দমনে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারে।
সরকার জানিয়েছে, যদি তখন এই ধরনের একটি মানবাধিকার অফিস থাকত, তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গণগ্রেপ্তারের অনেক ঘটনাই তদন্ত ও নথিভুক্ত হয়ে বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারত।
তবে এই মিশন স্থাপনে আপত্তি তুলেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তাদের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অতীতে মানবাধিকারের নামে ইসলামী শরিয়াহ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।
সরকারপ্রধানের দপ্তর এ বিষয়ে জানিয়েছে, আমরা স্বীকার করি, দেশের কিছু গোষ্ঠী জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার আদর্শিক অবস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমাজ—কোনো আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে আমাদের মূল্যবোধের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা থাকতে হবে।
সরকার স্পষ্ট করেছে, ওএইচসিএইচআরের মিশন কেবল গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও পূর্ববর্তী সরকারের অপরাধের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মিশন বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, সমাজব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হবে না। স্বচ্ছতা বজায় রেখে স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে এবং যদি কখনো মনে হয় অংশীদারিত্ব জাতীয় স্বার্থের বিরোধী, সরকার এমওইউ থেকে সরে যাওয়ার অধিকার রাখে।
জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের এই সময়ে মানবাধিকারের সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। নতুন মিশন তথ্যানুসন্ধান ও মৌলিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে, যা সরকার, নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ করে দেবে।
ওএইচসিএইচআরের সদরদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গত বছরের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি কাজ করছে কমিশন। গণবিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের ঘটনায় বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধানও করা হয়েছে।
সরকার বলছে, এই অংশীদারিত্ব জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার এবং নাগরিকদের সুরক্ষা বৃদ্ধির সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে—যা দেশের আইন, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে গঠিত এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতাশীল।