×

সাক্ষাৎকার

দৃষ্টি হারিয়েও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আলো ফিরিয়ে দিচ্ছেন সাইদুল হক

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

দৃষ্টি হারিয়েও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আলো ফিরিয়ে দিচ্ছেন সাইদুল হক

দৃষ্টি হারিয়েও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আলো ফিরিয়ে দিচ্ছেন সাইদুল হক

চোখে নেই আলো, তবুও আলোর পথযাত্রী হয়ে দ্রুতি ছড়িয়েছেন। কাজ করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য। রাজধানীর মিরপুরে ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (বার্ডো) নির্বাহী পরিচালক ২০২৩ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজসেবক মো. সাইদুল হক। বাল্যকালে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে চোখের আলো নিভে যায় সাইদুর রহমানের। চোখের আলো নিভে গেলেও তিনি হাল ছাড়েননি। জ্ঞান স্পৃহা ও আলোকিত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন তাকে সফলতার পথ দেখিয়েছে। এ যেন ধণুভাঙা পণ।

একুশে পদক ছাড়াও তিনি পেয়েছেন রোটারি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ১৯৯৪, সিবিআই পুরস্কার ২০০১ ও বাবিসাস পুরস্কার ২০২২। এছাড়াও তার ঝুড়িতে আছে অশোকা ফেলোশিপ (১৯৯৫) ও  রবার্ট এস. ম্যাকনামারা ফেলোশিপস (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-২০০১) কাজের সুবাদে বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। 

১৯৬৭ সালের ১০ মে বরিশালের বাকেরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন সাইদুর হক। শৈশব কেটেছে এখানে। সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় বরিশাল থেকে এসএস সি (১৯৮৩), বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচ এসসি (১৯৮৫) ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। সেখানে ১৯৮৮ সালে অনার্স ও ১৯৮৯ সালে দর্শনে মাস্টার্স শেষ করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা করে এমন বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। এরপর পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে ঢাকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের একটি স্কুলে অধ্যাপক হিসেবে ছিলেনও পরে একটি সরকারি চাকরি করেন। তবে তিনি সব সময় ভাবতেন চাকরি করলে নিজে চলতে পারবো, কিন্তু আমার মতো যাদের চোখের আলো নেই তাদের জন্য তো কিছু করতে পারবো না। এই চিন্তা থেকে তিনি বার্ডো প্রতিষ্ঠা করেন। মিরপুরের রূপনগরে গড়ে তুলেছেন বার্ডো নামে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের স্কুল, হাসপাতাল, বেইল প্রেস ও একটি লাইব্রেরি। এখানে প্রথম শ্রেণী থেকে এইচ এসসি পর্যন্ত সুযোগ পাচ্ছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। 

ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি জানিয়েছেন তার সফলতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার  কথা। 

প্রশ্ন: বার্ডোর পরিকল্পনা কিভাবে করলেন ও ধাপে ধাপে এত দূর এলেন?

উত্তর: কর্মসংস্থান ও সামাজিক মর্যাদায় পিছিয়ে আছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। তাদের সহযোদ্ধা হতে এই প্লাটফর্ম করার পরিকল্পনা করি। ১৯৯১ সালে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ সকল প্রতিবন্ধীদের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য  বার্ডো প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময়ে ডেল্টা লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফায়েত আহম্মেদ চৌধুরী তার অফিসের একটি রুমে  আমাদের বসার ব্যবস্থা করে দেন সেখানে ৯ মাস) আমার বন্ধু এরশাদ ও জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কাজ শুরু করি। । এরপর শ্যামলীতে ১০ বছর ও পরে রূপনগরে স্থায়ীভাবে স্কুল খোলা হয়। প্রথমে টিনশেট পরে একতলা থেকে এখন ৫ তলা হয়েছে। এ মহতি কাজে অনেকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধকতা কি?

উত্তর: অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের সংকট প্রকট। প্রতিবন্ধী মানুষ চাকরি পায় না, ব্যবসা করতে পারছে না, ব্যাংক তাদের সাপোর্ট করছে না। এমনকি ব্যাংকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষেরা একাউন্ট করতে পারছে না। এছাড়া তারা সহজে বাসে উঠতে পারে না। এছাড়া পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো প্রতিবন্ধী বান্ধব নয়। এছাড়া চলার পথে  হাজারো প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। 

প্রশ্ন: আপনার এই সফলতার পেছনে অনুপ্রেরণা কারা দিয়েছেন?

উত্তর: চলার পথে আমার স্ত্রী একজন অনুপ্রেরণাকারী। তার আগে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও আমার ভাই-বোনদের কারণে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। তারা সব সময়ে বলছেন কাজটি যেন কন্টিনিউ করি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষকে যেন মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসি। 

প্রশ্ন:  দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য ভবিষ্যতে আরও কি কি করার পরিকল্পনা আছে?

উত্তর: ১৫ জেলায় ৮টি বিভাগীয় শহরে বার্ডো কাজ করেছে। ২’শ প্রতিবন্ধী মানুষকে আমরা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও সাড়ে ৭ হাজার প্রতিবন্ধী নারীকে কর্মসংস্থানের জন্য ট্রেনিং দিয়েছি (ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প)। দুটোই ছিল সরকারি প্রজেক্ট। ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী মেয়েদের হোস্টেল,  প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ সেন্টার,  আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং ও গবেষণা কেন্দ্র করতে চাই।

প্রশ্ন: আপনার একুশে পদক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই পদক প্রাপ্তির অনুভূতি জানতে চাই। 

উত্তর: আমি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কাজ করায় পদটি পেয়েছি। একুশে পদক আমার নয়, এটা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর পদক। 

প্রশ্ন: আপনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন? দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আপনি কি বার্তা দিতে চান?

উত্তর: নিজেকে যোগ্য করো, সমাজে ভূমিকা রাখো। 

প্রশ্ন: বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির সাথে কি সাক্ষাতের কোনো অনুভূতি মনে পড়ে?

উত্তর: লন্ডনে ডেভিড ব্লাংকেট নামে একজন শিক্ষামন্ত্রী ও সৌদি আরবে একজন মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল খানেম (সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিনিস্টার ছিলেন)। এই দুই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর জন্য এসব দেশ অনেক এগিয়ে। 

প্রশ্ন: কাজের সুবাদে কয়টি দেশ ভ্রমণ করেছেন?

উত্তর: বিভিন্ন ট্রেনিং ও সভা সেমিনারে যোগদানের জন্য  বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছি। এশিয়া, ইউরোপ ও লন্ডন বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছে। এসব দেশে দেখেছি  প্রতিবন্ধী মানুষেরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আমরা পিছেয়ে। দেশের সরকারের কাছে অনুরোধ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষকে যেন সম্মান, অধিকার দেওয়া হয়। তারাও যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় যেতে পারে সেভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সিন্ডিকেট, শোষণ এবং আসন্ন নির্বাচনের সামনে নাগরিকের প্রশ্ন

চট্টগ্রাম থেকে নহাটা বাজার সিন্ডিকেট, শোষণ এবং আসন্ন নির্বাচনের সামনে নাগরিকের প্রশ্ন

দৃষ্টি হারিয়েও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আলো ফিরিয়ে দিচ্ছেন সাইদুল হক

দৃষ্টি হারিয়েও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আলো ফিরিয়ে দিচ্ছেন সাইদুল হক

শহীদ জিয়া আরাফাতের ময়দানে নিম গাছ লাগিয়ে দেশের সুনাম বাড়িয়েছেন

শহীদ জিয়া আরাফাতের ময়দানে নিম গাছ লাগিয়ে দেশের সুনাম বাড়িয়েছেন

ড. শিশির মনিরকে ধুয়ে দিলেন বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির

ড. শিশির মনিরকে ধুয়ে দিলেন বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App