×

লাইফ স্টাইল

বাচ্চা দেখলে জড়িয়ে ধরতে বা গাল টিপতে ইচ্ছে করে কেন?

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

বাচ্চা দেখলে জড়িয়ে ধরতে বা গাল টিপতে ইচ্ছে করে কেন?

ছবি: সংগৃহীত

আমার ছেলে যখনই আমাদের বিড়ালছানাটিকে দেখে, তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তারপর সে ছানাটিকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমরা যতই তাকে শান্ত হতে বলি না কেন, নরম তুলতুলে প্রাণীটিকে দেখলেই তার ভেতরে ওকে চেপে ধরার এক ধরনের তীব্র ইচ্ছে জাগে। এটা কোনো দুষ্টুমি নয় কিংবা বিড়ালছানাটিকে আঘাত করাও তার উদ্দেশ্য নয়- বরং এটা তার প্রবল আবেগের প্রকাশ।

আমার ছেলের বয়স ১৪। কিন্তু নিজে থেকেই আদুরে জিনিসকে জাপটে ধরা বা জোরে চেপে ধরার এই প্রবণতা সব বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। আমার সহকর্মীদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০-এর কোটায় থাকা অনেকেই এ অনুভূতির কথা স্বীকার করেছেন। একজন বলেছেন, যখনই গোলাপি গলুমলু গালওয়ালা কোনো শিশুকে দেখি, মনে হয় যেন তাকে খেয়ে ফেলি! নতুন বাবা হওয়া আরেকজন সহকর্মী জানান, তিনি তার ছোট ছেলেকে ‘কষে জড়িয়ে ধরে তার ছোট ছোট গলুমলু পা কামড়ে দিতে চান। মনোবিজ্ঞানীরা একে বলেন কিউট অ্যাগ্রেশন, আর চরম মায়াবী কোনো জিনিস আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে নেয় এটা তারই এক বিস্ময়কর প্রকাশ।

কিউট অ্যাগ্রেশন কী?

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস'র সামাজিক মনোবিজ্ঞানী লিসা এ. উইলিয়ামস বলেন, কিউট অ্যাগ্রেশন আসলে এক ধরনের প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে আমরা অতিরিক্ত মায়াবী কিছু দেখলে যে তীব্র ইতিবাচক আবেগ তৈরি হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এই প্রবল আবেগ বা অনুভূতির উদ্দেশ্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। বরং আমাদের আনন্দ ও মমতার অতিরিক্ত এবং তীব্র আবেগকে সহনীয় ও সামলানোর জন্য এটি মস্তিষ্কের একধরনের কৌশল। কোনো শিশু, ছোট্ট বিড়ালছানা বা বড় চোখের কুকুরছানা দেখলে আমরা প্রায়ই এমনটা অনুভব করি।

উইলিয়ামসের মতে, এটা এমন এক অনুভূতি, যেখানে আমরা প্রিয় জিনিসকে চেপে ধরতে বা টিপে দিতে চাই, কিন্তু সেখানে আসলে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে থাকে না।

আদুরে কিছু দেখলে আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হয় কেন?

অনেক বেশি মায়াবী কিছু দেখলে আবেগপূর্ণ ভঙ্গিতে তা প্রকাশের প্রবণতা আসলে এক ধরনের জটিল প্রতিক্রিয়া। মনোবিজ্ঞানীরা একে বলেন ডাইমরফাস ইমোশনাল এক্সপ্রেশন—যেখানে আমাদের বাহ্যিক আবেগের প্রকাশ ভেতরে বোধ করা অনুভূতির সঙ্গে মেলে না। এটি অদ্ভুত মনে হলেও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্রবণতা সব বয়স ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যেই বিদ্যমান।

আদুরে কিছু দেখলে মস্তিষ্কে কী ঘটে?

আদুরে বা মায়াবী কিছু দেখলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামের এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যাকে ‘ভালো বোধ’ বা পুরস্কার হরমোন বলা হয়ে থাকে। সুস্বাদু খাবার খাওয়া, প্রেমে পড়া কিংবা কোনো লক্ষ্য অর্জনের পরও নিঃসৃত হয় এই হরমোন। এই ইতিবাচক অনুভূতিগুলো কখনো কখনো মস্তিষ্ককে এতটাই আচ্ছন্ন করে যার কারণে সক্রিয় হয়ে ওঠে আবেগ-নিয়ন্ত্রক অংশ—অ্যামিগডালা।

অ্যামিগডালা দ্রুত আবেগের ব্রেক কষে দেয়, যাতে আমরা ভেতরের আবেগকে বাস্তবে আচরণে রূপ না দিই। শ্রীলঙ্কার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার ড. কান্থি হেট্টিগোডা বলেন, রিওয়ার্ড সিস্টেম বা পুরস্কার প্রক্রিয়া যখন সক্রিয় হয়, তখন আমাদের ভেতরে চেপে ধরা, টিপে ধরা, কামড়ানো বা ভেঙে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু একই সঙ্গে সক্রিয় হয় আবেগ নিয়ন্ত্রণের অংশ, ফলে আমরা আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করি। এখানে সেটাই ঘটছে। এই টানাপোড়েনের প্রক্রিয়াই এই বোধ তৈরি করে যাকে আমরা বলি কিউট অ্যাগ্রেশন।

কিউট অ্যাগ্রেশন কি ক্ষতিকর?

গবেষকদের মতে, কিউট অ্যাগ্রেশন আসলে তীব্র আবেগ ও অনুভূতি বের করার এক স্বাস্থ্যকর উপায়। এটি আমাদের নিরাপদে অতিরিক্ত ইতিবাচক আবেগ সামলাতে সাহায্য করে। এটি এও দেখায় যে মস্তিষ্ক একই সময়ে পরস্পর বিরোধপূর্ণ আবেগ সামলাতে সক্ষম। মনোবিজ্ঞানীরা একে এমন এক ধরনের টিকে থাকার উপায় হিসেবে দেখেন, যা আমাদের তীব্র ইতিবাচক আবেগকে নিরাপদ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য উপায়ে প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে। তবে সমস্যা দেখা দিতে পারে যখন মানুষ সাধারণভাবে তাদের আবেগপ্রবণ তাড়না নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. কপিলা রানাসিংহে বলেন, যেকোনো প্রবল তাড়নায়— তা মায়ার হোক, রাগের হোক বা আকাঙ্ক্ষার— তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো বিপজ্জনক। আমাদের এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে।

সবাই কি কিউট অ্যাগ্রেশন অনুভব করে?

বেশিরভাগ (মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ) মানুষ কিউট অ্যাগ্রেশন অনুভব করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ তা করেন না। এর মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে। এখনও মনোবিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন—যারা কিউট অ্যাগ্রেশন অনুভব করেন না, তাদের তীব্র আবেগের অভিজ্ঞতা কি তুলনামূলক কম, নাকি তারা নিজেদের প্রকাশ করার ভিন্ন কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

চাকসু নির্বাচনে ১০ প্যানেল ঘোষণা, শীর্ষ তিন পদে যারা

চাকসু নির্বাচনে ১০ প্যানেল ঘোষণা, শীর্ষ তিন পদে যারা

বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন ও সাশ্রয়ী জ্বালানি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

সাইবার স্পেসে জুয়ার শাস্তি ২ বছর জেল ও কোটি টাকা জরিমানা

সাইবার স্পেসে জুয়ার শাস্তি ২ বছর জেল ও কোটি টাকা জরিমানা

বাচ্চা দেখলে জড়িয়ে ধরতে বা গাল টিপতে ইচ্ছে করে কেন?

বাচ্চা দেখলে জড়িয়ে ধরতে বা গাল টিপতে ইচ্ছে করে কেন?

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App