×

জাতীয়

৪৩তম বিসিএস: বাদপড়া ১৬৮ জনের মধ্যে ৭১ জনই সংখ্যালঘু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৭ পিএম

৪৩তম বিসিএস: বাদপড়া ১৬৮ জনের মধ্যে ৭১ জনই সংখ্যালঘু

ছবি: সংগৃহীত

   

এক বছর আগে থেকে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগের আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়েছে; নতুন তালিকায় ১ হাজার ৮৯৬ জন নিয়োগ পাচ্ছেন। এতে এবার বিভিন্ন ক্যাডারের ১৬৮ জন প্রার্থী বাদ পড়েছেন। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের ১৫ জানুয়ারি ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগে চাকরিতে যোগ দিতে বলেছে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

আগের প্রজ্ঞাপনে ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল; যেখান থেকে এবার নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়লেন ১৬৮ জন। বাদপড়াদের মধ্যে ৭১ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে। সোমবার রাত থেকে বাদপড়াদের আহাজারিতে ‘ফেসবুক’ ভারাক্রান্ত। 

এর আগে এই বিসিএস থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া ২ হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে থেকে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্যাডারে ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে ১৫ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন করে নিয়োগ দিয়েছিল। সবশেষ প্রজ্ঞাপনের পর সব মিলিয়ে ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়লেন মোট ২৬৭ জন। পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর পিএসসি চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করেছিল। সোমবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির সুপারিশ পাওয়া ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের প্রবেশ পদে নিয়োগ দেয়া হল। নতুন প্রজ্ঞাপনে সই রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নব-নিয়োগ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. উজ্জল হোসেনের। বাদ পড়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতনরা বলতে পারবেন। 

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরে, যাতে অংশ নিতে বিসিএসের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আবেদন ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জনের জমা পড়েছিল। কোভিড মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী অংশ নেন। পরে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তাদের মধ্যে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন ২ হাজার ১৬৩ জন।

জনপ্রশাসন সূত্র বলছে, পিএসসি নিয়োগের সুপারিশ করে তালিকা পাঠায় জনপ্রশাসনে। এই তালিকা ধরে জনপ্রশাসন পুলিশের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেয়। পুলিশ প্রতিবেদনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা থাকলে বা নেতিবাচক কিছু পাওয়া গেলে তারা বাদ পড়েন। তবে পুলিশ প্রতিবেদন নেতিবাচক হলে প্রার্থীরা জনপ্রশাসনে আবেদন করতে পারেন। পরে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তারা নিয়োগ পান। অনেকে হাইকোর্টে মামলাও করেন এবং রায় পেলে চাকরি পেয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মামলা এবং এজেন্সি কর্তৃক নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে ১৬৮ জনকে চূড়ান্ত গেজেট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। যারা নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কারো বিরুদ্ধে মামলা থেকে থাকলে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এজেন্সি কী ধরনের নেতিবাচক প্রতিবেদন দেয় এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মূলত রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পুলিশ নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেজন্য হয়তো তাদের বাদ দেয়া হতে পারে।

এদিকে, গত সোমবার ৪৩তম বিসিএসের নতুন প্রজ্ঞাপন জারির পর বাদ পড়াদের আহাজারি নিয়ে ব্র্যাকের অভিভাসন বিষয়ক প্রধান শরীফুল হাসান ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস লিখেন। তাতে তিনি বলেন, এই দেশের কোটি তরুণ আর চাকরিপ্রার্থীসহ দেশবাসীকে জানাচ্ছি যে দুই মাসের ব্যবধানে আগের গেজেট বাতিল করে আজ দ্বিতীয়বার ৪৩তম বিসিএসের গেজেট হলো। এই এক বিসিএসে প্রায় আড়াইশ জনকে রাজনৈতিক রং খোঁজার নামে বাদ দেয়া হয়েছে, যা আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের সব বিসিএসের যোগফল থেকে বেশি। তরুণরা নিশ্চয়ই এমন দেশের স্বপ্নে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করেনি? যারা বাদ পড়লেন অধিকাংশই জানেন না কেন বাদ পড়লেন, তাদের অপরাধটা কী! 

তিনি বলেন, বিসিএসে চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের ভেরিফিকেশনের নামে বাদ দেয়ার এই নোংরা সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ আমলেও এগুলো দেখেছি এবং তখনও এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখেছি এবং বিএনপি জামায়াত শিবির ট্যাগ খেয়েছি। তবে সত্যি তো সত্যিই তখনো অন্যায় হয়েছে এবং এবারের অন্যায় সব রেকর্ড ছাড়ালো। কারণ এক বিসিএস থেকে প্রায় আড়াইশ প্রার্থীকে বাদ দেয়ার ঘটনা ইতিহাসে বোধহয় প্রথম। সবমিলিয়ে ৪৩ বিসিএসের গেজেট নিয়ে যা হলো সেটা ভয়াবহ অন্যায়। এভাবে চললে দেশের ক্ষতি, জনপ্রশাসন সবার ক্ষতি।

কয়েকদফায় পুলিশ যাচাই, সর্বশেষ জুলাইয়ের পর আবার যাচা-বাছাই, এরপর গত ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ১৭ নভেম্বরে তাদের যোগ দেয়ার কথা ছিল। সেটা পিছিয়ে ১ জানুয়ারি করা হয়। অবাক কাণ্ড হলো এই সরকারের অমলে গেজেট প্রকাশ করে আবার এই সরকার সেটি বাতিল করে নতুন করে আবার প্রজ্ঞাপন জারি করলো। নতুন গেজেটে যোগদানের তারিখ করা হয়েছে ১৫ জানুয়ারি। 

তবে ভীষণ মন খারাপ লাগছে আজকে বাদ পড়া ১৬৮ জন এবং আগের প্রথম দফায় বাদ পড়ে আরো ৯৯ জনের জন্য। যদিও এদের মধ্যে অল্প কিছু অন্য চাকরি পেয়েছেন। তারপরও এক বিসিএস থেকে ২২২ জন বাদ! নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়লেন ১৬৮ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে বাদ পড়েছেন ২৬ জন। পররাষ্ট্র ক্যাডারে তিনজন বাদ পড়েছেন এবং পুলিশে ৮ জন বাদ পড়েছেন। শুনে অবাক হবেন রাজনৈতিক বিবেচনায়, ছাত্রলীগ করে এমন কথা বলে, গোপালগঞ্জ কিংবা ফরিদপুর অঞ্চলে বাড়ি বলে, পাশাপাশি হিন্দু হওয়ার কারণে অনেককে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে যেগুলো ভীষণ দুঃখজনক। 

সরকারের উচিত এর ব্যাখ্যা দেয়া। কারণ ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া কাউকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ এরা তো লাখো প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই করে উত্তীর্ণ হয়েছিল। কী অপরাধে বাদ দিলেন? অনিয়ম দুর্নীতি ফৌজদারি অপরাধ করলে বাদ দিন। বিনা কারণে কেন? এদের অধিকাংশই রাজনীতি থেকে বহুদূরে। অথচ রাজনৈতিক রং দিয়ে তাদের বাদ দেয়া হলো। চূড়ান্ত ফল বা গেজেট হবার পর এই বাদ দেয়ার যে আইনগত কোনো বৈধতা নেই সেটা তো যে সবার জানার কথা।

এদিকে উচ্ছ্বাস পাল নামে আরেকজন রীতিমত গবেষণা করে দেখিয়েছেন,  এডমিন, পুলিশ, ফরেন, অডিট, ট্যাক্স, এবং কাস্টম- শীর্ষ এই ছয়টি ক্যাডারে নতুন করে বাদ পড়েছে ৫৬ জন, যার মধ্যে ১৯ জন সংখ্যালঘু। শতকরা হিসাবে এটি ৪১.৩ শতাংশ। এর মধ্যে সংখ্যালঘুদের বাদ পড়ার হার যথাক্রমে: এডমিনে- ৩৫, ফরেনে-৬৭, পুলিশে-১২.৫, অডিটে-১০০, ট্যাক্সে ৭১ এবং কাস্টমসে -৩৩.৩৩ শতাংশ।

নতুন এবং পুরাতন গেজেটের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে তিনি দেখিয়েছেন, পুরাতন গেজেটে ২০৬৪ জনের মধ্যে ২৫৬ জন সংখ্যালঘু ছিলেন, অর্থাৎ ১২.৪ শতাংশ। সেটা নতুন গেজেটে কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৭৫ শতাংশ। (১৮৯৬ জনের মধ্যে ১৮৫ জন)। আবার পুরাতন গেজেটে যেখানে সংখ্যালঘু ছিল ১২ শতাংশের কিছু বেশি, সেখানে তাদের বাদ পড়ার হার ৪২ শতাংশেরও বেশি নতুন গেজেটে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App