×

জাতীয়

কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে ড. ইউনূসকে মার্কো’র ফোন: ফের আলোচনায় ইন্দো-প্যাসিফিক

Icon

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম

কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে ড. ইউনূসকে মার্কো’র ফোন: ফের আলোচনায় ইন্দো-প্যাসিফিক

ছবি: সংগৃহীত

বেশ কিছুদিন আলোচনায় ছিল না ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’। এরই মধ্যে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের বছর পূর্তি হতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হওয়ার খবরে চাউর হয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন খুব একটা নজর দিতে পারেনি। এরকম পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের নজর ঘুরে যায় ইন্দো-প্যাসিফিকে। ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে গঠিত কোয়াডের সদস্যদেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুক্তরাষ্ট্রে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। তার আগে আচমকা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন। বাংলাদেশ সময় সোমবার (৩০ জুন) রাতে এই ফোনালাপ হয়। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই ফোনালাপ নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে চলা এই ফোনালাপ শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয় নয় বলে তারা মনে করেন। রহস্যের ডালপালা আরো মেলে, এই ফোনালাপের পর দুই দেশের দুই রকম বিবৃতির কারণে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, এই ফোনালাপ উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ফলপ্রসূ, যা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রমাণ বহন করে। তার বিবৃতিতে ইন্দো-প্যাসিফিকের বিষয় উল্লেখ ছিল না। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে ইন্দো-প্যাসিফিকের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশ্লেষক ভোরের কাগজকে বলেন, ফোনালাপ নিয়ে প্রেসসচিব যে বিবৃতি দিয়েছেন তা ভাসা ভাসা। দুই রাষ্ট্রের সরকার প্রধান এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে ফোনালাপ হলে স্বাভাবিকভাবেই বলা হয় সৌর্হাদ্যর্পূণ এবং চমৎকার আলোচনা। কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এটি জানালেও মানুষ বুঝতে পারত। রহস্যের জন্ম নিত না। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের যে বিবৃতি তাতে বোঝা যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও ফোন দিয়েছেন এবং সেই আলাপে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর করার কথা হয়েছে। একইসঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। তার মতে, ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশল অনেক পুরনো। মাঝখানে এটি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে আচমকা চীনের প্রভাব বেড়েছে। চীনের প্রভাব বেড়েছে ইন্দো-প্যাসিফিকেও। কিন্তু চীনকে মোকাবিলার মাধ্যমে এই অঞ্চলে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তার করতে চায়। 

নিউইয়র্ক থেকে সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক জোন নিয়ে কোয়াডের সদস্য ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসছে। এদিকে বাংলাদেশে উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ইন্দো-প্যাসিফিক জোনে নিরাপত্তা ঝূঁকি তৈরি হয়েছে। কোয়াডের বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনা হবে। তার আগে মার্কো রুবিও ফোন করে ড. ইউনূসের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিকের শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক জোনে বাংলাদেশ অংশ নয়, তবু দেশটির কাছে আমেরিকা কী চায় সেটি সেই ফোনালাপে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসন বলছে সেখানে কোনো জঙ্গি নেই। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিকের অংশ মালয়েশিয়ায় সম্প্রতি একাধিক বাংলাদেশি ধরা পড়েছেন। মালয়েশিয়া পুলিশ বলছে, এরা জঙ্গি। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রের মহড়া চলছে। তারা আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ করবে। সবমিলিয়ে একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, চীনকে প্রতিহত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায় সেখানে বাংলাদেশ না থাকলেও আছে। এজন্যই ড. ইউনূসের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিকের শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে। এমনকি চীনের সঙ্গে ইউনূসের যে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার চেষ্টা চলছে সেটি নিয়েও ফোনালাপে একটি বার্তা দেয়ার জন্য এই ফোনালাপ হয়েছে। 

ফোনালাপের খবর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে : বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর টেলিফোনালাপের খবর দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে তাদের অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (ইন্দো-প্যাসিফিক) নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতেও অভিন্ন অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন তারা।

রুবিও’র প্রথম ফোনালাপ ইউনূসের সঙ্গে : মার্কো রুবিও বাংলাদেশের ইউনূসের সঙ্গে প্রথম ফোনে ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন। রুবিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর দুই নেতার মধ্যে এটাই ছিল প্রথম কথোপকথন। 

কেন ইন্দো-প্যাসিফিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

গত দুই দশকে চীন একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, দ্রুত তার বাণিজ্য নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং কূটনৈতিক নাগালের প্রসার ঘটিয়েছে। এর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি এবং এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপ জুড়ে কৌশলগত বিনিয়োগ এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে অবস্থান করছে। এই উত্থানের ফলে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, যেটি বেজিংয়ের পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের অবনমন, জবরদস্তিমূলক বাণিজ্য অনুশীলনে জড়িত এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।

এর প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মৈত্রি জোরদার করে, সমালোচনামূলক প্রযুক্তির উপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কের মত বিকল্প বাণিজ্য কাঠামোর প্রচার করে চীনের প্রভাব রোধ করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। ওয়াশিংটন কোয়াডের মত ফোরামে অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বেজিংয়ের দৃঢ়তাকে ভারসাম্যহীন করতে এবং একটি মুক্ত, উন্মুক্ত এবং নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। কয়েকমাস আগে রুবিও অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওয়াশিংটন ডিসি-তে একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন, যেখানে তারা একটি মুক্ত এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিককে শক্তিশালী করার জন্য কোয়াডের ভাগ করা অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, কোয়াড, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের যৌথ উদ্যোগকে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাবের পাল্টা হিসাবে দেখা হচ্ছে। চীন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য হুমকিস্বরূপ, রুবিও এর আগে বলেছিলেন, এই অঞ্চলটিকে বেইজিংয়ের জোরপূর্বক এবং অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন থেকে মুক্ত থাকতে হবে। সম্প্রতি কানাডায় অনুষ্ঠেয় জি-৭ সম্মেলনে রুবিও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার সময় ইন্দো-প্যাসিফিকের মুখোমুখি সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জগুলো উত্থাপন করেছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত

যুক্তরাষ্ট্রে বিমান বিধ্বস্ত, সব আরোহী নিহত

বন্ধ হয়ে গেল আইফেল টাওয়ার

বন্ধ হয়ে গেল আইফেল টাওয়ার

ফুসফুস পরিষ্কার রাখে যে ৫ প্রাকৃতিক উপাদান

ফুসফুস পরিষ্কার রাখে যে ৫ প্রাকৃতিক উপাদান

দায় স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা

দায় স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App