×

পুরনো খবর

উতরোল : আনোয়ারা সৈয়দ হক > গল্প

Icon

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উতরোল : আনোয়ারা সৈয়দ হক > গল্প
রাজিয়া বানুর চেম্বার আজ খালি। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। এটা শ্রাবণ মাস, বৃৃষ্টির মাস। আগামীকাল শুক্রবার। ঢাকার মানুষেরা আজ রাজধানী ছেড়ে চলে যাবে ঢাকার বাইরে। কাছাকাছি যাদের গ্রাম তারা তাদের দেশে গিয়ে দুদিন কাটিয়ে আবার ফিরে আসবে রোববার ভোরে। বা বিশেষ অসুবিধা হলে শনিবার রাতে। রাজিয়া তার জন্য বিশেষ চিন্তিত নন। বরং রোগী একটু কম হলেই তিনি খুশি। মনে মনে ভাবেন, এই বয়সে আর কত? এমন সময় সাহায্যকারী সুধাময় খবর দিল, আপা, রোগী পাঠাই? রাজিয়া আপন মনে মোবাইলে কি যেন দেখছিলেন। একটু চমকিত হয়ে উঠে বললেন, পাঠাও। একটু পরে রোগী ও তার স্বামী ভেতরে ঢুকল। রাজিয়া তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা বসুন। রোগী চিনতে সাধারণত রাজিয়ার কোনো কষ্ট হয় না। বস্তুত কোনো ডাক্তারেরই তাদের রোগী চিনতে কষ্ট হয় না। তিনি তার কেস শিটে নামও দেখে নিয়েছিলেন, মমতা বেগম। রাজিয়া দেখলেন মহিলার স্বামীটি বেশ শান্ত ও সুশীল চেহারার একজন মানুষ। নি¤œবিত্ত পরিবারের একটি নিরীহ চেহারার মানুষ। বয়স মধ্য তিরিশ। মহিলাটির পরনে বোরকা। মাথায় হিজাব। বয়স তিরিশের দিকে। রাজিয়া তাদের বসতে বললেন। তারপর মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন, কেমন আছেন মমতা? মহিলা রাজিয়ার দিকে চেয়ে বললেন, ভালো নেই। আমার সব সময় মাথা ধরা থাকে। মুখে অরুচি। রাতে একেবারে ঘুম হয় না। কিছু ভালো লাগে না। রাজিয়া চিন্তা করে বললেন, অসুখটা শুরু হলো কবে থেকে? মমতা বলল, অনেকদিন। আগে কম ছিল, এখন বেশি বেড়ে গেছে। কেন, আগে কোনো চিকিৎসা হয়নি? মমতা বলল, অনেক। কিন্তু একটু কম থাকে কিছুদিন, আবার শুরু হয়। আপনার শরীরের মামুলি পরীক্ষা কিছু করা হয়েছে, মা? রাজিয়া এবার কোমল স্বরে জিজ্ঞেস করলেন। উত্তর দিল মমতা, অনেকবার করা হয়েছে, ম্যাডাম। এমন কি মাথার সিটি স্ক্যানও করা হয়েছে। রক্ত পরীক্ষা তো অনেকবার। আমরা এত স্বচ্ছল মানুষ না, তবু আমি সব রকমের চেষ্টা করেছি! স্বামী বলে উঠল পাশ থেকে। মহিলা স্বামীর কথায় একটু বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকাল। আপনারা থাকেন কোথায়? এবার জিজ্ঞেস করলেন রাজিয়া। আমরা গ্রামে থাকি, ম্যাডাম। মহিলা বলল। আপনাদের সন্তান আছে? একথা শুনে মহিলা বলল, একটিই সন্তান। ছেলে। তাকে বাড়িতে রেখে এসেছি। এরপর রাজিয়া মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি কি আলাদা কথা বলতে চান? আপনার স্বামীকে কি বাইরে বসতে বলব? একথা শুনে মহিলা বলল, ওকে বাইরে বসতে বললে তো কোনো লাভ হবে না, ম্যাডাম। কারণ ওই তো আমার অশান্তির কারণ! রাজিয়া মহিলার কথা শুনে মনে মনে বললেন, সেটা তো আগেই জানতাম রে, বাপু। অধিকাংশ নারীরই সমস্যা হচ্ছে তাদের সংসারের পুরুষটি, যার স্বভাব হয় খারাপ। হয় অন্য মেয়ের প্রতি আসক্তি, নতুবা কোনো মাদকদ্রব্যে আসক্তি, নতুবা তাস খেলা অথবা ইন্টারনেট অথবা ফেসবুক- এসব একের পর এক। এসব তো আমি জানি! আর কি? কিন্তু মনের কথা মুখে তো বলা যায় না, যাবেও না। সুতরাং চুপ করে সব শুনতে হবে। রাজিয়া তাই চুপ করে থাকলেন। তিনি জানতেন রোগী নিজেই একে একে তার বর্ণনা দেওয়া শুরু করবে। এদিকে স্ত্রীর বিরক্তিপূর্ণ চেহারা দেখে স্বামীটি চুপ করে গেলেন। এই ফাঁকে রাজিয়া স্বামীর দিকে তাকিয়ে কিন্তু কোনো প্রকারের অস্বাভাবিকতা দেখতে পেলেন না। তবে পুরুষদের চেহারা দেখে সব সময় সবকিছু ধরা যায় না, এটা রাজিয়া জানতেন। তাই তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। মমতা তখন বলল, আমার মাঝে মাঝে এমন মনে হয় ম্যাডাম যে আমি আত্মহত্যা করি! একদিন করেও ফেলব, ঠিক দেখবেন! এই কথা শুনে রাজিয়া বানু মনে মনে নড়েচড়ে বসলেন। যদিও এ ধরনের কথার গুরুত্ব কম। কিন্তু আজকাল পৃথিবীর সময় কাল এভাবে প্রবাহিত হচ্ছে যে কোনো কথাই আর ফেলে দেওয়ার মতো নয়! বিশেষ করে আজকাল বাংলাদেশে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেশ বেড়ে গেছে। যে সে যখন তখন আত্মহত্যা করে বসছে! মানুষের টলারেন্স ক্ষমতাও অনেকখানি যেন কমে গেছে। ধৈর্য অনেক চোট খেয়ে গেছে। মানুষের ভেতরে সবকিছু খুব দ্রুততার সঙ্গে হাতে পাওয়ার একটি ঝোঁক এসেছে। নতুবা কিছু বিপজ্জনক কিছু করবার দিকে ঝোঁক চেপে বসছে। হিয়ার অ্যান্ড নাউ, এই যেন হচ্ছে মানুষের বর্তমানের জীবন দর্শন। মানুষেরা যেন আজকাল বড় বেশি অভিমানী হয়ে উঠেছে। মানুষের ভেতরে, বিশেষ করে পূর্ণবয়স্ক মানুষের ভেতরে কিশোরীসুলভ বা কিশোরসুলভ দৃষ্টিভঙ্গীর জন্ম হচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের মনের প্রগ্রেশন না হয়ে যেন রিগ্রেশন হচ্ছে! মানুষ আজকাল আত্মহত্যা করবার আগে এমনও বার্তা পাঠাচ্ছে, যা দেখে আরো ১০ জন মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে, কিন্তু যুক্তিবাদী হওয়া থেকে দূরে থাকে। ‘অনেক চেষ্টা করলাম বেঁচে থাকতে কিন্তু হায়, আর পারলাম না!’ ফেসবুকে এই ধরনের স্ট্যাটাস দিয়ে মানুষেরা আত্মহত্যা করছে। ঠিক যেমন মানুষ একটা গায়ে দেওয়া জামা পছন্দ না হলে খুলে রেখে আরেকটি জামা পরে! সবকিছু মিলিয়ে একটা জড়ঘট অবস্থা! তবে রাজিয়া এটাও জানেন এই পৃথিবী নামক মহাদেশে নারীর জীবন এক দুঃখের জীবন, বঞ্চনার জীবন, মানুষের প্রতি বিশ্বাসহীনতার জীবন। যুগে যুগে নারীদের এই একই অবস্থা। এ তো আশ্চর্য কিছু নয়। তবে বাংলাদেশের অবস্থা আরো একটু বেশি রকমের খারাপ। কারণ এখানে মেয়েদের নানাভাবে বঞ্চিত করা হয়। বিশেষ করে মেয়েরা যাদের প্রতি বেশি আস্থা স্থাপন করে, তাদের কাছ থেকেই যেন বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পৃথিবী পাল্টে যাচ্ছে। বা হয়তো পাল্টেও গিয়েছে। কিন্তু রাজিয়ার মতো মানুষের কিছু করার নেই। শুধু সহানুভূতি দেখানো ছাড়া। রাজিয়া সহানুভূতির সঙ্গে মহিলার কথা শুনতে লাগলেন। আর মাঝে মাঝে তার স্বামীটির দিকে আড় চোখে তাকাতে লাগলেন। ভাবতে লাগলেন এই ভদ্রলোকটি কি পরকীয়া, না কি মোবাইল অ্যাডিক্ট, না কি জুয়াড়ি? আজকাল অবশ্য মোবাইল নামক যন্ত্রটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভীষণ একটি সমস্যার সৃষ্টি করে চলেছে। এই মোবাইলের নানা রকমের বাহারি সব জানালা আছে। কোনোটা ফেসবুক, কোনোটা মেসেঞ্জার, কোনোটা ইমো, কোনোটা টুইটার, কোনোটা হোয়াটসঅ্যাপ আর তার ভেতরে যত রকমের ঝামেলা। এই সময় রাজিয়া নিজেও মনে মনে একটু অপ্রতিভ হয়ে ভাবলেন আজকাল তারও কেমন যেন ঘুমোবার আগে একটু ফেসবুক নেড়েচেড়ে বা ইউটিউব খুলে কিছু খবরটবর- কিন্তু ভাবনাটাকে তিনি আর পাত্তা দিলেন না! রাজিয়া একটু নড়েচড়ে বসলেন। গলার স্বরে পেশাদারি স্বর এনে গম্ভীর মুখে বললেন, আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি মা? শুনে মমতা বলল, আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন না ম্যাডাম! আর আমি তো আপনার কাছে আসতেও চাইনি, আমার স্বামীই আপনার কাছে আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে। সে তো জানে সে একজন কালপ্রিট, সে দোষী, এ নিয়ে তার মনে খটকা আছে, সে জন্যে সে আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে। তারপর একটু থেমে মহিলা বলল, তার দোকানপাটে মন নেই, ঘর সংসারের দিকে মন নেই, ভালো করে বাসায় থাকতে পারে না, মন শুধু উড়– উড়– করে। শুধু সুযোগ খোঁজে কখন বাইরে যাবে, কখন সে গঞ্জে যাবে, কখন সে হাটে যাবে। শুধু কি তাই? নতুন কিছুর খবর পেলেই সে তখুনি রওনা দেবে! কোথায় রওনা দেবে? কোথায় আবার, এই বারোবাজার, নতুবা ঝালাইপুর, নতুবা মোহনগঞ্জ, নতুবা ধুপখোলা, কোথায় না কোথায়, কোনো ঠিক ঠিকানা নেই! শুধু একজন সঙ্গী পেলেই হলো। রাজিয়া বানুর কাছে এখন ব্যাপারটা বেশ জটিল মনে হতে লাগল। আগে ভেবেছিলেন সোজাসাপ্টা কেস। এখন মহিলার কথা শুনে মানসিক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ রাজিয়া বানু মনের মধ্যে একশো ভাগ নিশ্চিত হলেন যে মহিলার এই নিরীহ চেহারাটার স্বামীটি একজন জুয়াড়ি। এ রকম জুয়াড়ি তিনি বহু দেখেছেন। ঘরসংসার ছেড়ে খেলার নেশায় সে চলে যায় যেখানে সুযোগ পায়। এই সময় মহিলার স্বামীটি নরম সুরে বলে উঠল কিন্তু আমিতো সংসারের সব দায়িত্ব পালন করে কাজটা করি! তুমি কি কখনো বলতে পারবে যে তোমাকে কোনো অভাবের মধ্যে রেখেছি? মহিলা বললেন, শুধু খাওয়া পরা পেলেই বুঝি সব দায়িত্ব সারা হয়ে গেল? রাজিয়া বানু এবার বলে উঠলেন, আজ কত বছর ধরে আপনার এই জুয়া খেলার নেশা? রাজিয়া বানুর প্রশ্নে ঘরের মধ্যে নেমে এলো একটা নিস্তব্ধতা। মমতা ফ্যাল ফ্যাল করে রাজিয়ার দিকে তাকাল। তার স্বামীটিও রাজিয়ার কথা শুনে হঠাৎ তার নাক চুলকাতে লাগল। মমতা তখন বলে উঠল, সেই নেশা থাকলেও তো ছিল ভালো, ম্যাডাম! কত জুয়াড়ি আমার বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাওয়ার সময় বাড়ি এসে খেয়ে যাচ্ছে আবার ফিরে জুয়ায় বসছে। জুয়া হলেও তো ভালো ছিল ম্যাডাম। এ নেশা জুয়ার চেয়েও খারাপ! এবার অধ্যাপক রাজিয়া বানুর ব্যক্তিত্বে একটু চোট লাগল। গম্ভীর মুখে তিনি বলে উঠলেন, তাহলে কীসের নেশা, বলবেন কি? আমার হাতে সময় কম। আমার আরো রোগী বাইরে অপেক্ষা করছে! কিন্তু মূল কথা কেউই তখন অপেক্ষা করছিল না! কিন্তু নিজের ওজন ধরে রাখবার জন্য কথাটা বললেন অধ্যাপক রাজিয়া। মমতা এবার বলল আমার শত্রæ তো মানুষ নয়, ম্যাডাম! মানুষ শত্রæ হলেও তো ভালো ছিল। তবুতো কিছু হইচই করতে পারতাম। কিন্তু আমার শত্রæ তো মানুষ নয়। রাজিয়া বানু মনে মনে একটু বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন, তাহলে, কে আপনার শত্রæ? মমতা এবার বলল, আমার শত্রæ হলো, পাখি। পাখি? মানে? রাজিয়া যেন ভালো করে কথাটা বুঝতে পারেননি, সে জন্য কানটা একটু রোগীর দিকে এগিয়ে নিয়ে এলেন। মমতা এবার ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলে উঠল, পাখি, ম্যাডাম, পাখি। আমার ঘরের আনাচে-কানাচে পাখি, ঘরের বাইরে পাখি, সামনের উঠোনে আমের বাগানে পাখি। এসব পাখি রাতদিন বাড়িতে কিচমিচ কিচমিচ কিচমিচ। এক ফোঁটা আমার জানে শান্তি নেই। কিন্তু এতসব পাখি দেখেও তার প্রাণে শান্তি নেই। যেই একজন খবর দিল, ওমুক বাগানে, তমুক বিলে, অমুক হাওরে, তমুক জলায় নতুন কোনো পাখি চোখে পড়েছে কি, খবর দেওয়া মাত্রই সে ছুটে চলে যাবে। তখন তাকে পায়ে শিকল বেঁধেও বাড়িতে রাখা যাবে না! রাজিয়া গালে হাত দিয়ে মহিলার কথা শুনতে লাগলেন। তার চোখের সামনে যেন একটা বাড়ি, বাড়ির চৌহদ্দি, বাড়ির আমের বাগান, সেসব ছাড়িয়ে আরও দূরে একটা জলাশয়, একটা হাওর, একটা বিল, সেখানে চেনা-অচেনা সব পাখিরা ভিড় করে চরে বেড়াচ্ছে, দূরে দূরে বড় বড় মাটির টিলা, টিলার আড়ালে আরো জলা, আরো জলাশয়, আরো জঙ্গল, আরো হাওর- সেখানে আরো অনেক নাম না জানা সব পাখিরা। নিজেকে সামলে নিয়ে রাজিয়া এবার স্বামীর দিকে তাকালেন। ভদ্রলোক এবার অপরাধীর মতো মাটিতে চোখ রেখে বলতে লাগলেন, বিশ্বাস করেন ম্যাডাম, আমি ওকে কোনোদিন খাওয়া পরার কোনো কষ্ট দিই না। আমার কোনো বাজে অভ্যাস নেই। আমি বিড়ি সিগারেট খাই না, পান তামাক খাই না, আমার বাজে কোনো নেশা নেই, আমি শুধু একটু পাখি দেখতে ভালোবাসি। অচেনা পাখি শুধু নয়, যে কোনো পাখি চোখে দেখতে আমার ভালো লাগে। যে কোনো পাখিরই যে কত ধরনের বাহার, কত ধরনের প্রজাতির তারা উত্তরসূরি চোখে না দেখলে আপনি বুঝতেও পারবেন না, ম্যাডাম। যেমন আপনাকে একটা সাধারণ ঘুঘু পাখির কথাই বলি। কবুতরের মতোই দেখতে, কিন্তু কবুতর নয়। এ পাখিগুলো খুব লাজুক আর চঞ্চল। একসময় আমাদের দেশের সবখানে ছিল এর বিচরণ। আমরা নিজেরাও ছেলেবেলায় ফাঁদ পেতে ঘুঘু পাখি ধরতাম। পায়ে দড়ি বেঁধে ওদের নিয়ে খেলা করতাম। কিন্তু আজকাল পরিবেশ পাল্টে যাওয়ায় এসব পাখি দিনে দিনে আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আমাদের দেশে এখনো যে কত রকামের ঘুঘু চোখে দেখা যায়। যেমন রাজ ঘুঘু, তিলা ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, রাম ঘুঘু। এ রকম আরো দু’তিনটে ঘুঘু। সেদিন আমার এক বন্ধু আমাকে মোবাইল করে বলল, ওদের বাড়ির কাছে বিলে নাকি লাল ঘুঘু চরে বেড়াচ্ছে। আমাকে বলল, দেখতে যদি চাও তো শিগগির চলে আসো! তো বলেন ম্যাডাম, সেই লাল ঘুঘু যা আমি একবার ছেলেবেলায় চোখে দেখেছিলাম, এতদিনের মধ্যে আর চোখে দেখিনি। তার এই ডাক শুনে কি না গিয়ে থাকা যায়, আপনিই বলেন? আর আপনি যদি কখনো এদের চোখে দেখতে পান তো একেবার অবাক হয়ে যাবেন। আঃ, কী সুন্দর যে এদের চেহারা ম্যাডাম! এদের ডানার ওপরের দিকের পালকগুলো টুকটুকে লাল, গলায় কালো ডোরা, যেন কালো রুমাল গলায় জড়িয়ে রেখেছে! চোখের মণিদুটো যেন পুঁতির মতন চকচকে। মাথাটা ছাই রং আর পা দুটো লালচে। এই পাখি চোখে না দেখে ম্যাডাম চুপ করে ঘরে বসে থাকা যায়? একে তো লাজুক পাখি, এই আছে তো এই নেই! তো এ রকম সুযোগ- থেরাপিস্ট রাজিয়া লোকটির কথা মন দিয়ে শুনছেন বলে সে যেন আরো উৎসাহিত হয়ে বলল, আর তাছাড়া ম্যাডাম, আমরা এ পৃথিবীতে আসি মাত্রই কয়েক দিনের জন্য। আর আমাদের চোখের সামনে এতবড় দুনিয়া আল্লাহ মেলে রেখেছেন, যেন ছেলেবেলার ধারাপাত খুলে মেলে রাখা মানুষের চোখের সামনে, এরপর যে যত নামতা মুখস্ত করতে পারে, তো আমিও তেমনি পাখিদের ধারাপাত যতদূর সম্ভব চোখের মধ্যে ধরে রাখতে চাই। পাখি আমার খুব ভালো লাগে ম্যাডাম। আমার মনে হয়, আল্লাহতালা এ পৃথিবীকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন, কিন্তু পাখি যদি দুনিয়াতে না দিতেন তো এ দুনিয়া কিছুতেই পরিপূর্ণ হয়ে উঠত না। আমার তাই মনে হয় ম্যাডাম। কিন্তু আমি একথা আমার স্ত্রীকে কিছুতে বোঝাতে পারিনে! আবার ধরেন ম্যাডাম, মাছরাঙা। বিল বাঁওড়ের ধারে প্রায় তাদের মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ে। একেবারে যেন ধ্যান ধরে পানির দিকে চোখ ফেলে বসে থাকে, কখন একটি মাছ পানির ভেতর থেকে ছোঁ মেরে তুলবে! তখন তার মনের অবস্থা কী রকম যে চঞ্চল হয়ে থাকে , আমরা কি কেউ বুঝি? না। এ হচ্ছে তার বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম। একে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। জানেন ম্যাডাম, পাখিরাও কিন্তু অযথা জিব হত্যা করে না। ওদেরও বিবেক আছে। পেট যেই ভরে যাবে, ওরা আর শীকার করবে না। মজা করার জন্য পাখিরা কেউ শীকার করে না। কিন্তু মানুষের পেট ভরা থাকলেও অন্য মানুষের খাবার কেড়ে নেয়। অন্য মানুষের ক্ষতি করার চিন্তাভাবনা করে। আপনি বাদামি মাছরাঙা পাখি দেখেছেন, ম্যাডাম? আহা এত সুন্দর দেখতে। এ পৃথিবীতে প্রায় চুরানব্বই প্রকারের মাছরাঙা পাখি আছে, জানেন? শাদা বুক মাছরাঙা, নীল ছিটা মাছরাঙা, এ রকম কত ধরনের মাছরাঙা। বাদামি মাছরাঙার চেহারা কখনো দেখেছেন, ম্যাডাম? এর মাথা, গলা, পেট, ল্যাজ সব বাদামি। আর সেই শরীরের বাদামি রঙের সঙ্গে যেন ম্যাচ করে আল্ল্াহ তালা তাকে বিশাল একটা ঠোঁটের অধিকারী করেছেন, যে ঠোঁটের রঙ টকটকে লাল। বুঝতে পারছেন ম্যাডাম, আমাদের আল্লাহ কতবড় একজন শিল্পী? আর কতবড় প্রকৃতি রসিক? এ পৃথিবীর মানুষ তাকে কতটুকু চেনে, কতটুকু উপলব্ধি করতে পারে? সৃষ্টিকর্তাকে চিনতে গেলে আগে তো আমাদের তার সৃষ্টিকে চিনতে হবে, তাই না ম্যাডাম? তার সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে। সাইকোথেরাপিস্ট রাজিয়া বানু লোকটির কথা শুনতে শুনতে নিজেই যেন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলেন। অথচ এ রকম হওয়ার কথা নয়। তিনি মূলত খুব ঝানু প্রকৃতির মানুষ। তবু তাঁর ভেতরে কেমন যেন নড়াচড়া শুরু হয়ে গেল! একসময় মহিলাটি, যার নাম মমতা, বলে উঠল, এখন ম্যাডাম বলেন, আপনি কাকে ওষুধ দেবেন? ওকে না আমাকে?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সালাহউদ্দিন আহমদের অনুরোধে অনশন ভাঙলেন তারেক

সালাহউদ্দিন আহমদের অনুরোধে অনশন ভাঙলেন তারেক

মেট্রোরেলের সবার সব ধরনের ছুটি বাতিল

মেট্রোরেলের সবার সব ধরনের ছুটি বাতিল

দেশের বাজারে ভিভোর ৮ বছর: বিশেষ অফারে ৭০,০০০ টাকা ক্যাশব্যাক

দেশের বাজারে ভিভোর ৮ বছর: বিশেষ অফারে ৭০,০০০ টাকা ক্যাশব্যাক

‘বেস্ট ইন এগ্রো বিজনেস অ্যাওয়ার্ড’ পেলো জোবায়ের ইসলাম

‘বেস্ট ইন এগ্রো বিজনেস অ্যাওয়ার্ড’ পেলো জোবায়ের ইসলাম

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App