×

মতামত

এক নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ডাক

জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৪ এএম

জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

বাংলাদেশ—একটি রাষ্ট্র, যার জন্ম হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। কিন্তু জন্মের পাঁচ দশক পর আমরা দাঁড়িয়েছি এমন এক সন্ধিক্ষণে, যেখানে রাষ্ট্র আর জনগণের সম্পর্ক যেন ছিন্ন। সংবিধান বলে, “রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।” অথচ বাস্তবতা বলে—রাষ্ট্র এখন কেবল গুটিকয় ক্ষমতাবান, ধনিক শ্রেণি ও সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দী।

নাগরিকদের অধিকারের জায়গা দখল করে নিয়েছে লুটপাট, প্রতারণা, নীরব রাষ্ট্রদ্রোহ। সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়—যে সব প্রতিষ্ঠান মানুষের ভরসার জায়গা হবার কথা ছিল, তারাই আজ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ এই বিরূপ বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়েই এক শ্রেণির মানুষ, যাদের আমরা “টোকাই” বলে অবজ্ঞা করি, তারাই বারবার রাজপথে দাঁড়িয়ে সত্যিকারের রাষ্ট্রগঠনের দায়িত্ব নিয়েছে।

তবে রাষ্ট্র শুধু শহীদের রক্তে গড়ে ওঠে না—তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে চাই চিন্তার গভীরতা, নীতির দৃঢ়তা। আর সেইখানেই বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীর সংকট—এই রাষ্ট্রে শিক্ষিত শ্রেণি হয়ে উঠেছে নির্বোধ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে প্রাসাদসুলভ কোচিং সেন্টার।

১. রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্কের ছিন্নতা: সংবিধানের আশ্বাস বনাম বাস্তবতা

বাংলাদেশের সংবিধান বলেছে—“প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।” কিন্তু বাস্তবে এই মালিকানা এখন নিছক আনুষ্ঠানিকতা। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে এক শ্রেণির মানুষ কর্তৃত্ব করছে, যাদের সঙ্গে জনগণের জীবনের সংযোগ নেই। আইনের ভাষা, নীতিনির্ধারণের পদ্ধতি, এমনকি রাষ্ট্রচালনার চিন্তাও সাধারণ নাগরিকের জীবনবোধ থেকে আলাদা। জনগণের কণ্ঠ নেই, শুধু নিঃশ্বাস আছে। আর এই নিঃশ্বাসের ভিতরেই জমে আছে বঞ্চনা, ক্ষোভ আর ক্রমাগত ভাঙনের ইতিহাস।

২. গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা একচেটিয়া করার ট্র্যাজেডি

একদা যে গণতন্ত্র আমাদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা আজ পরিণত হয়েছে নির্বাচনের নামে ক্ষমতা বৈধতার এক উপকরণে। জনগণ ভোট দেয়, কিন্তু নীতি ঠিক করে অলিখিত ক্ষমতাকেন্দ্র। সংসদ চলে, কিন্তু তাতে নেই জনগণের কথা। বিরোধী কণ্ঠকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী, আর প্রতিবাদ মানে হয় ‘উসকানি’। ফলে জনগণ হয়ে পড়ে কেবল ভোটদাতা, রাষ্ট্রের মালিক নয়। গণতন্ত্র এখন একপাক্ষিক সম্প্রচারে পরিণত—যেখানে কথা বলে শুধু ক্ষমতা, আর মানুষ চুপচাপ শুনে।

৩. রাজনৈতিক দলগুলোর পণ্যায়িত রূপ এবং চিন্তার দেউলিয়াত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আজ আর আদর্শে বিশ্বাসী কোনো আন্দোলনের প্রতিনিধি নয়। বরং তারা হয়ে উঠেছে পণ্য—নির্বাচনের বাজারে বিক্রি হয় প্রতিশ্রুতির মোড়কে। দলীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন ‘ক্ষমতা’—নীতি নয়, নৈতিকতা নয়, এমনকি জনগণের দুঃখ-বেদনা নয়। ছাত্রসংগঠনগুলো এখন ক্যারিয়ারের সিঁড়ি, আর কেন্দ্রীয় দলগুলোর মাথায় বসে থাকে অলিখিত সিন্ডিকেট। ফলে রাষ্ট্রচিন্তা আজ আর কোনো দল করে না, বরং দলগুলোই রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে তাদের নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে।

৪. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতন ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা

আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত—সবই ক্রমশ দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্পোরেট স্বার্থের হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তারা আজ সাধারণ মানুষের সমস্যা বোঝেন না—তারা বোঝেন টেন্ডার, কমিশন, আর মিডিয়ার নাটকীয়তা। প্রতিষ্ঠানগুলো শাসকের ‘টুলবক্স’ হয়ে উঠেছে—নাগরিকের সুরক্ষা বা মর্যাদা রক্ষার বাহন নয়। রাষ্ট্রের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে এক অবিচারমূলক ভারসাম্যের ওপর—যেখানে আইনের ভাষা শুধুই দুর্বলকে দমন করতে ব্যবহৃত হয়।

৫. টোকাই জনগণের উত্থান: রাষ্ট্রসংস্কারের নতুন চেতনা

এই ভাঙনের ভিতরেই জন্ম নিচ্ছে এক নতুন চেতনা—যা শহরের বস্তিতে, গ্রামবাংলার চায়ের দোকানে, কিংবা রিকশাচালকের ক্লান্ত মুখে জমে উঠছে। তারা হয়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞান জানে না, কিন্তু বোঝে অবিচার কাকে বলে। তারা সংবিধান মুখস্থ করেনি, কিন্তু জানে কীভাবে বঞ্চিত হতে হয়। এই ‘টোকাই জনগণ’, যাদের রাষ্ট্র কখনো গোনায় ধরেনি, তারাই আজ প্রশ্ন তুলছে—এই রাষ্ট্র কে চালায়? কেন চালায়? কাদের স্বার্থে চালায়? আর এই প্রশ্নই নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি—নীরবতার ভিতর জন্ম নেওয়া এক সাহসী ডাক।

৬. শিক্ষিত শ্রেণির নির্লিপ্ততা ও জ্ঞানচর্চার পতন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় ছিল মুক্তচিন্তা, ত্যাগ ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু আজ এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ রূপ নিয়েছে সুবিধাবাদী ও পদলেহী শ্রেণির চারণভূমিতে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষক এখন গবেষণার নামে থিসিস কপি করেন, শিক্ষা কার্যক্রমকে নামিয়ে এনেছেন বিসিএস কোচিংয়ে। বিসিএস একটি চাকরির পরীক্ষা—কিন্তু এখন সেটাকেই চূড়ান্ত ‘জ্ঞান’ মনে করা হয়। ফলে প্রশাসনে যেমন ঢুকছে মেধাহীন, নীতিহীন একদল মানুষ, তেমনি রাষ্ট্রচিন্তাও হয়ে পড়েছে শুষ্ক, ঠান্ডা, কাগুজে।

একসময় যাঁদের মতো জ্ঞানী শিক্ষক দেশকে পথ দেখিয়েছেন—যেমন আব্দুর রাজ্জাক বা সরদার ফজলুল করিম—আজ তাঁদের জায়গা নিয়েছে এমন কিছু মানুষ, যারা নিজেদের বানান ভুল ধরালে ক্ষেপে যান, ক্ষমতার দম্ভে বলেন, “বাংলা একাডেমির বানানই ভুল।” এই ঔদ্ধত্য আর বুদ্ধিহীন আত্মবিশ্বাসই জ্ঞানের মৃত্যু ঘটিয়েছে।

এদের বড় অংশ মাঠে নামে না, বরং ঘরে বসে হিসাব কষে—“সরকার গেলে কী পাব, না গেলে কী হবে?” যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা তখন সেই সরকারের গুণকীর্তনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সরকার পরিবর্তন হলে আবার অন্যদিকে ঘেঁষেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে ক্ষমতাবানদের হাতের পুতুল।

এমনকি শেয়ারবাজার ধ্বংসের পেছনেও এই শিক্ষিত শ্রেণির ভূমিকা অনস্বীকার্য। খাইরুল হোসেন থেকে শুরু করে শিবলি রুবাইয়াত—বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এই শিক্ষকরা যখন চেয়ারে বসেন, তখন তাঁরাও পরিণত হন লুটপাটের সহযোদ্ধায়। তাঁদের মাধ্যমে গড়ে ওঠে এক “জ্ঞানহীন লুটপাটের অর্থনীতি।”

সব শিক্ষকই অবশ্য একরকম নন। এখনও অনেকেই আছেন, যাঁরা সংগ্রাম করেন, সত্য বলেন, সাহস দেখান। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কম, আর তারা মূলধারার বাইরে।

সুতরাং, আজকের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো—জ্ঞান নেই, কিন্তু জ্ঞানীর দম্ভ আছে। বিবেক নেই, কিন্তু পদ-পদবি আছে। শিক্ষা নেই, কিন্তু সার্টিফিকেটের পাহাড় আছে। আর এদের হাতে যখন জাতির ভবিষ্যৎ, তখন রাষ্ট্রের দিক হারানো অবশ্যম্ভাবী।

৭. এখন দরকার নতুন নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রচিন্তা

যারা যুগের পর যুগ এই রাষ্ট্রকে লুটে খেয়েছেন, তারাই এখন আবার রাষ্ট্র সংস্কারের বুলি দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা কেউই রাষ্ট্র পরিবর্তনের অনুরাগী নন—বরং তারাই শোষণযন্ত্রের মেরামতকারী। সুতরাং, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে চাই নতুন নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব হবে—দলগত নয়, শ্রেণিগত; ধানমণ্ডি থেকে নয়, উঠবে পথঘাট, শ্রমিকবস্তি, গ্রাম আর গার্মেন্ট ফ্লোর থেকে।

নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি গড়তে হলে চাই—

 •    লজ্জাহীন সত্য বলার সাহসী সাংবাদিকতা

 •    গা বাঁচিয়ে না চলা বাস্তবভিত্তিক বুদ্ধিজীবী

 •    এক্সেলশিট নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ

 •    স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি—যা ‘শত্রু নয়, প্রতিবেশী’কে সঙ্গী ভাববে

 •    এবং সর্বোপরি, জনতার নেতৃত্বে একটি গণমুখী, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা

পুরনো মুখ আর দলীয় চক্রের হাতে রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। তাদের ক্ষমতার সূত্র ভেঙে নতুন মালিকানার ভিত্তিতে গড়া রাষ্ট্রই হতে পারে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বাংলাদেশ।

৮. চার স্তরবিশিষ্ট রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা

(১) সরাসরি জনগণের মালিকানা ও পর্যবেক্ষণাধিকার:

ভোট দেওয়ার পর ৫ বছর চুপচাপ বসে থাকা গণতন্ত্র নয়। জনগণকে দিতে হবে প্রতিনিধি প্রত্যাহারের অধিকার, স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জবাবদিহির কাঠামো।

(২) প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু করা:

প্রধানমন্ত্রীর অনির্দিষ্ট ক্ষমতার বদলে জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের সীমিত ম্যান্ডেট চালু করতে হবে। শেখ হাসিনা বা অন্য কোনো নেতার অনির্দিষ্ট শাসন দেশের জন্য আত্মঘাতী।

(৩) বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক জবাবদিহি:

প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জনগণের অর্থে চলে—তাদের জনগণের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকতে হবে। বিচারপতি ও জেনারেলরা যেন ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার না হয়ে ওঠেন, তা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক সংস্কার দরকার।

(৪) টোকাই জনগণের পূর্ণ নাগরিক স্বীকৃতি:

বস্তির মা, পথের শিশু, গার্মেন্ট শ্রমিক, ময়লা কুড়ানো কিশোরী—তাঁদের জন্য চাই স্বতন্ত্র নাগরিক সুরক্ষা কমিশন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চয়তা, এবং সংরক্ষিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব। তাদের আর ‘দয়া’র নয়, ‘অধিকারের’ ভিত্তিতে রাষ্ট্রে স্থান দিতে হবে।

৯. রাষ্ট্র যখন ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’, তখন টোকাই জনগণই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি

আজ রাষ্ট্রের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’, কিন্তু বাস্তবে এটি হয়ে গেছে ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’। এবং এই কোম্পানিতে সবচেয়ে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হয়ে পড়েছে সেই মানুষগুলো, যাদের ঘাম-রক্তে এই রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়া।

তারা এখন প্রশ্ন করছে—

 •    যাঁরা দেশের প্রতিরক্ষার নামে বেতন নেন, তাঁরা সেই বিপদের দিনে কোথায় ছিলেন?

 •    যারা ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র বুলি কপচায়, তারা আসলে কাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে?

 •    যারা বারবার নির্বাচন ছিনিয়ে নিয়েছে, তারা কি সত্যিই রাষ্ট্রকে ভালোবাসে, নাকি এটা তাদের লুটপাটের লাইসেন্স?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যতও অন্ধকারময়। আর এই অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে সেই ‘টোকাই’ জনগণ—যারা অস্ত্রহীন, কিন্তু সাহসে ভরপুর; যারা পদ-পদবীহীন, কিন্তু নৈতিকতায় পূর্ণ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ ও সমালোচনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করে বলেনি—ড. ইউনূস একজন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, যার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।

তার বদলে, সবাই বরং এই সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। ফলে না হয়েছে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার, না সম্ভব হয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই শূন্যতার সুযোগে বাড়ছে সন্ত্রাস ও নিপীড়ন, আর দেশ পিছিয়ে পড়ছে আরও পঞ্চাশ বছর। এখন সময় এসেছে অজুহাত ত্যাগ করে সমাধানের দিকে এগোনোর। আসল প্রশ্ন হলো—এখন কী করা উচিত?

শেষ কথা: ইতিহাস এখন অপেক্ষায়, টোকাই জনগণের দিকে তাকিয়ে

আমরা যারা নেই রাষ্ট্রীয় ভাষণে, নেই রাজপথের মিছিলে কিংবা টেলিভিশনের বিতর্কে—আমরাই এখন কথা বলছি। এবং আমাদের কথাগুলো আজ আর ফিসফিস নয়, সরাসরি দাবি:

   •    আমরা উন্নয়ন চাই, তবে মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচার শর্তে।

   •    আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে ভোট মানে পেটভরার খাদ্য নয়, নাগরিকের অধিকার।

   •    আমরা চাই নেতৃত্ব, যেখানে ক্ষমতার নয়, জবাবদিহির ছায়া থাকবে।

   •    আমরা এমন ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হবে সত্য ও মুক্ত চিন্তার আশ্রয়স্থল—ভয়ের কারাগার নয়।

আমরা আর কেবল ‘ভোটার’ নই, আমরাই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক।

আর এই মালিকানা কেউ স্বেচ্ছায় দেয় না—তা আদায় করে নিতে হয়, সংঘর্ষ নয়, বরং চিন্তার মাধ্যমে।

নতুন নেতৃত্ব কোথায়?

পুরনো নেতৃত্ব মুখোশ বদলে বারবার ফিরে আসে। তারা জানে কীভাবে স্লোগান দিতে হয়, জানে কীভাবে ত্রাণ বিলিয়ে ছবি তুলতে হয়—কিন্তু তারা জানে না, কীভাবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিকানাটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হয়। এই নেতৃত্বে আর চলবে না।

আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব—যারা ক্ষুধার্ত থেকেও অন্যের খাবারের চিন্তা করে, যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখে, যারা শ্রেণিকক্ষে নয়, টোকাই জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এই নেতৃত্ব তৈরি হবে:

   •    রিকশাচালকের হাড়ভাঙা ঘাম থেকে,

   •    কৃষকের জমির কাদা থেকে,

   •    অভাবী মায়ের নিঃশব্দ কান্না থেকে,

   •    কিংবা সেই ছেলেটির বুকের ভেতর থেকে,

যে একদিন বলেছিল: “ভাই, আমাকেও একটা রাষ্ট্র দ্যান না?

রাষ্ট্র মানে কী?

রাষ্ট্র কেবল সংবিধানের পাতায় বন্দি নয়,

রাষ্ট্র থাকে মানুষের অন্তরে ও চিন্তায়।

রাষ্ট্র কেবল শহীদের রক্তে নির্মিত হয় না,

রাষ্ট্র বেঁচে থাকে জ্ঞানের দীপ্তিতে, নীতির দৃঢ়তায়।

আর যখন সেই জ্ঞান ও নীতি হারিয়ে যায়,

তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে শূন্য, লজ্জাহীন,

এবং জনগণের ঘাড়ে বসা এক নির্মম বোঝা।

এখনই সময়…

এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রকে নতুন করে কল্পনা করার—

টোকাই জনগণের নামে এক বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তা প্রতিষ্ঠার।

শুধু ভাষণে নয়, চেতনায়, কাঠামোয়, এবং নীতিতে—

একটি জনগণের রাষ্ট্র গড়ার।

যারা একসময় ছিল ‘রাষ্ট্রহীন’,

আজ তারাই হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রের ভাবনা ও প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দু।

তারা যদি সত্যিই জেগে ওঠে,

তবে শুধু সরকার নয়—পুরো ব্যবস্থাই বদলে যাবে।

তাদের হাতে এখন ইতিহাসের পাসওয়ার্ড।

যদি তারা রাষ্ট্রের ভেতরে প্রবেশ করে,

সিস্টেম বদলায়, নেতৃত্ব নেয়—

তবে গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ।

যেখানে—

   •    সেনাবাহিনী হবে জনগণের রক্ষক,

   •    আমলা হবে সেবক,

   •    আর রাজনীতি হবে নীতিনির্ভর নেতৃত্বের অনুশীলন।

প্রশ্ন এখন রাষ্ট্রের দিকে:

রাষ্ট্র কি এই টোকাইদের ফিরিয়ে দেবে? না কি, তাদের ঘাম-রক্ত ব্যবহার করে আবার এক নতুন লুটেরা শাসন কায়েম করবে? এই প্রশ্নের জবাব দেবে ইতিহাস। আর ইতিহাস এখন রচিত হচ্ছে রাস্তায়, জনতার মিছিলে, সাহসে ও সংকল্পে।

রহমান মৃধা, সুইডেনপ্রবাসী বাংলাদেশি, গবেষক ও লেখক, (সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন), [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

এক নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ডাক জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

আটাবে প্রশাসক নিয়োগে সদস্যদের প্রতিবাদ

আটাবে প্রশাসক নিয়োগে সদস্যদের প্রতিবাদ

স্বচ্ছ ও প্রতিহিংসামুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ার অঙ্গীকার বিএনপির

স্বচ্ছ ও প্রতিহিংসামুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ার অঙ্গীকার বিএনপির

বর্ষাকালে সজনে পাতা খাওয়ার ৫ জাদুকরী উপকারিতা

বর্ষাকালে সজনে পাতা খাওয়ার ৫ জাদুকরী উপকারিতা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App