×

রাজশাহী

সংকটে কারিগরের জীবিকা

প্রতিমা তৈরিতে দ্বিগুণ খরচ, বাড়েনি পারিশ্রমিক

Icon

পলাশ হোসেন, পাবনা থেকে

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম

প্রতিমা তৈরিতে দ্বিগুণ খরচ, বাড়েনি পারিশ্রমিক

প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত একজন কারিগর। ছবি : ভোরের কাগজ

পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়ার বাসিন্দা ধনঞ্জয় পাল ৪০ বছর ধরে বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করছেন। এবছরও তিনি ছয়জন কারিগর নিয়ে ৯টি মন্দিরের জন্য প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তার বানানো সর্বোচ্চ বাজেটের প্রতিমা ১ লাখ টাকা, যা পাবনা শহরের পাথরতলার রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম মন্দিরের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে রঙ ও ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। বাকি ৮টি প্রতিমার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা ব্যস্ততার মধ্যে কারিগররা এখন বিপুল পরিশ্রমের পর খুশি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ধনঞ্জয় পাল জানান, আগের মতো প্রতিমা তৈরিতে লাভ নেই। দিন দিন মণ্ডপগুলোর বাজেট কমছে। সুনিপুণ কারুকাজ থাকলেও কম বাজেটে পূজা সম্পন্ন করাটাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, গত দশ বছরে প্রতিমা তৈরিতে খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, কিন্তু আয় বাড়েনি। এতে পেশাটি দুর্দশায় পড়েছে।


লাখ টাকা বাজেটের প্রতিমার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এক লাখ টাকার চুক্তিতে কমপক্ষে ৪৫-৪৮ হাজার টাকার কাঠ ব্যবহার হয়েছে। মাটি লেগেছে ৩,৫০০ থেকে ৪,০০০ টাকা। খড়, কাপড়, রঙসহ অন্যান্য উপকরণের খরচ মিলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। বাকি অর্থ থেকে লেবারের মজুরি দিতে হয়। ফলে এক লাখ টাকা ইনভেস্ট করেও লাভ কম।

ধনঞ্জয় পাল বলেন, একটি প্রতিমা তৈরি করতে প্রায় ১০ দিন সময় লাগে। লেবার লাগে ৪০-৫০ জন, সর্বনিম্ন মজুরি ৮০০ টাকা, কারিগরের জন্য ১,২০০ টাকা। সাথে খাওয়া-দাওয়াও যুক্ত। ১০ বছর আগের তুলনায় খরচ অনেক বেড়েছে। এই পেশায় টিকে থাকা এখন কঠিন।

আরেক কারিগর দেবেশ পাল, আমিনপুর থানার সাগরকান্দি ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের বাসিন্দা। তিনি ৩০ বছর ধরে পাবনা শহর, আটঘরিয়া, ঈশ^রদী, সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করছেন। এবছরও ৫ জন শ্রমিক নিয়ে ১৫টি মন্দিরের জন্য কাজ করছেন। মাটির কাজ শেষ, এখন রঙের কাজ চলছে।

দেবেশ পাল জানালেন, এবছর সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার একটি প্রতিমা তৈরি করছেন। খড়, কাঁদামাটি, কাপড়, বাঁশ-কাঠ ও রঙে খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। লেবারের মজুরি দিতে লাগবে ১৫-২০ হাজার টাকা। ১০ বছর আগে ৬০ হাজার টাকার প্রতিমার খরচ ছিল ১৫ হাজার টাকা, লেবার বিল পরিশোধের পর লাভ হতো অর্ধেকের বেশি। এখন সবকিছুতে খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে, কিন্তু বাজেট বাড়েনি।

শ্রমিক ভজন পাল জানান, পূজার সময় দিনে ৫০০ টাকা হাজিরায় কাজ করতে হয়। সংসার চালানো, সন্তানদের লেখাপড়া করানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পূজা শেষে গ্রামে গিয়ে মাটির জিনিস বানানোর কাজও করতে হবে, কিন্তু সেখানেও সমস্যা রয়েছে।


পাবনা জেলায় এবছর ৩৪৫টি মন্দির বা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা সদরে ৫১টি, ঈশ্বরদীতে ৩০টি, আটঘরিয়ায় ১৫টি, চাটমোহরে ৫২টি, ফরিদপুরে ১৭টি, ভাঙ্গুড়ায় ২১টি, বেড়ায় ৬৩টি, সাঁথিয়ায় ৪১টি এবং সুজানগরে ৫৫টি মণ্ডপে উৎসব উদযাপিত হবে। জেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রভাস কুমার ভদ্র জানিয়েছেন, মন্দিরগুলোতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। জেলা পুলিশ ও প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মশিউর রহমান মন্ডল বলেন, দুর্গাপূজার সময় জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মন্দিরগুলো নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সম্ভাবনা নেই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

কয়েকশ কোটি টাকার বডি ক্যামেরা আনা হবে পুলিশের জন্য

কয়েকশ কোটি টাকার বডি ক্যামেরা আনা হবে পুলিশের জন্য

সালমান শাহ মৃত্যুর মামলায় রিভিশন শুনানির তারিখ নির্ধারণ

সালমান শাহ মৃত্যুর মামলায় রিভিশন শুনানির তারিখ নির্ধারণ

প্রতিমা তৈরিতে দ্বিগুণ খরচ, বাড়েনি পারিশ্রমিক

সংকটে কারিগরের জীবিকা প্রতিমা তৈরিতে দ্বিগুণ খরচ, বাড়েনি পারিশ্রমিক

উসমান দেম্বেলে বর্ষসেরা, ১৩ পুরস্কারের মধ্যে বার্সার ৪

ব্যালন ডি’অর উসমান দেম্বেলে বর্ষসেরা, ১৩ পুরস্কারের মধ্যে বার্সার ৪

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App