অভিবাসীদের বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস, সেনা মোতায়েন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম

অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দমনে ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেসে চলমান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দমনে ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের সীমান্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা টম হোম্যান। খবর রয়টার্সের।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সাউথইস্ট অঞ্চলের প্যারামাউন্ট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো শতাধিক বিক্ষোভকারী যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থার (আইসিই) বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামে।
অনেকে মুখে গ্যাসমাস্ক পরে, আবার কেউ কেউ মেক্সিকোর পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে ‘উসকানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এর পরপরই ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, যদি নিউসাম ও লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস তাদের কাজ করতে না পারেন, তাহলে ফেডারেল সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেবে – দাঙ্গা ও লুটপাট যেভাবে মোকাবিলা করা দরকার, সেভাবেই তা করা হবে!
শনিবার বিকেলের দিকে পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও গ্রেফতারের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি।
স্থানীয় টিভি চ্যানেলের ফুটেজে দেখা গেছে, হেলমেট ও গ্যাসমাস্ক পরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সড়কে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়েছেন। আশপাশে উল্টানো শপিং কার্ট ও গ্যাস গ্রেনেড ছোড়ার দৃশ্য দেখা যায়।
প্রতিবাদে অংশ নেওয়া কর্মী রন গোচেজ বলেন, এখন ওরা বুঝে গেছে যে, আমাদের জনগণ যেখানে আছে সেখানে গিয়ে কাউকে তুলে নেওয়া যাবে না—তাদেরকে সংগঠিত ও কঠিন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।
শুক্রবার রাতেই প্রথম দফার বিক্ষোভ শুরু হয়, যখন আইসিই শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪৪ জনকে অভিবাসন আইনের ‘অভিযুক্ত লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে গ্রেফতার করে। এরপর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
হোয়াইট হাউজের উপপ্রধান স্টিফেন মিলার একে ‘যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ’ বলে দাবি করেন। শনিবার তিনি আরও একধাপ এগিয়ে এটিকে ‘হিংস্র বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেন।
ধর্মঘট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) দাবি করেছে, শুক্রবার ১ হাজার দাঙ্গাকারী একটি ফেডারেল ভবন ঘিরে আইসিই কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়, টায়ার ছিঁড়ে ফেলে, ভবনে গ্রাফিতি করে ও সরকারি সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অভিবাসন অধিকার সংগঠন চিরলার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলিকা সালাস জানান, শুক্রবার আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে আইনজীবীরা এখনও দেখা করতে পারেননি, যা চরম উদ্বেগজনক বলে মনে করেন তিনি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসনবিরোধী কড়াকড়ি আরও বেড়েছে। আইসিই প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার অভিবাসী আটক করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
কিন্তু এই অভিযান বাস্তবে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দাদেরও ভুক্তভোগী করছে, যা নিয়ে একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে।
চিরলার মতে, শুক্রবার আইসিই-এর সদস্যরা লস অ্যাঞ্জেলেসের একাধিক হোম ডিপো দোকানের পার্কিং লটে বেস ক্যাম্প করে অভিযান চালায়।
মূলত ফুটপাত ব্যবসায়ী ও দিনমজুরদের লক্ষ্য করা হয়। অভিযানে একটি পোশাক কারখানা ও একটি গুদামও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ডেমোক্র্যাট মেয়র ক্যারেন ব্যাস এক বিবৃতিতে বলেন, আমি এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। এসব অভিযান আমাদের শহরের নিরাপত্তা ও শান্তিকে বিঘ্নিত করে। আমরা এসব বর্বর কৌশল সহ্য করব না।