প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে ম্যানিলায় গণবিক্ষোভ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম
দুর্নীতির অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের বিরুদ্ধে জনরোষ চরমে উঠেছে। ছবি : সংগৃহীত
ফিলিপাইনে জলাশয় নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের বিরুদ্ধে জনরোষ চরমে উঠেছে। তার পদত্যাগের দাবিতে রোববার (৩০ নভেম্বর) রাজধানী ম্যানিলায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এতে পুরো রাজধানীজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
জনগণের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন ‘কিলুসাং বায়ান কোন্ত্রা-কোরাকোট’ (কেবিকেক) এর ব্যানারে লুনেটা ন্যাশনাল পার্ক থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিল প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ মালাকানিয়াং-এর দিকে অগ্রসর হয়। আয়োজকদের দাবি, এতে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। অনেকেই প্রেসিডেন্ট মার্কোস ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তের মুখোশ পরে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত কুমির’ হিসেবে নির্মিত বিশাল প্রতিকৃতি প্রদর্শন করেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘মার্কোস পদত্যাগ করো’ এবং ‘সব দুর্নীতিবাজকে জবাবদিহির আওতায় আনো’।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ‘ট্রিলিয়ন-পেসো দুর্নীতি’ নিয়ে জনরোষ গত কয়েক মাস ধরে বাড়ছিল। অভিযোগ, ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিলিয়ন পেসো ঘুষ নিয়েছেন, বহু প্রকল্প ভুয়া দেখানো হয়েছে বা নিম্নমানের নির্মাণে সরকারি অর্থ অপচয় হয়েছে। সাম্প্রতিক দুটি শক্তিশালী টাইফুনে ২৫০ জনের বেশি প্রাণহানির পর ক্ষোভ আরো তীব্র হয়।
আরো পড়ুন : ঘূর্ণিঝড়-টানা বৃষ্টিতে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৬০০, বাস্তুচ্যুত কয়েক লাখ
এ ঘটনায় সরকারের দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। একই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সাবেক আইনপ্রণেতা জালদি কো অভিযোগ করেছেন—অনিয়মিত ব্যয়ের জন্য প্রেসিডেন্ট মার্কোস নিজেই তাকে ১১০০ কোটি পেসো বরাদ্দ বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি ২০২৪ সালে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ১০০ কোটি পেসো নগদ ভর্তি সুটকেস প্রেসিডেন্টের বাসভবনে পৌঁছে দেন বলে দাবি করেন তিনি। বর্তমানে তিনি পলাতক। তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল জাপানে।
মার্কোস অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অনলাইনে যে কেউ যা খুশি বলতে পারে। যদি কিছু প্রমাণ থাকে, তাহলে দেশে ফিরে আসুক।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২১ বছর বয়সী ছাত্র ম্যাট ভোভি ভিলানুয়েভা বলেন, সেপ্টেম্বরের পুলিশি দমন-পীড়নের পরও তিনি রাস্তায় ফিরেছেন। সেদিন ৩০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়। তিনিও মারধর ও পাঁচ দিনের আটক থাকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তার দাবি, আমাদের বোকা ভাবা হচ্ছে। ন্যায়বিচার পেতে হলে মার্কোস ও সারা দুতার্তের পদত্যাগ জরুরি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তেও সরকারি তহবিল অপব্যবহারের অভিযোগের মুখে রয়েছেন।
এদিকে বিরোধী দল ও ক্যাথলিক চার্চের সমর্থনে ইডিএসএ অ্যাভিনিউতে আলাদা একটি ‘ট্রিলিয়ন পেসো মার্চ’ অনুষ্ঠিত হয়—যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ জড়ো হয়। এ গোষ্ঠী দুতার্তের পদত্যাগ দাবি করলেও মার্কোসের বিরুদ্ধে ‘আরও সুস্পষ্ট প্রমাণ’ না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার কথা জানায়।
প্রেসিডেন্ট ভবনের চারপাশে ১২ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা মালাকানিয়াংয়ের প্রবেশপথ থেকে এক ব্লক দূরে ব্যারিকেডে আটকা পড়ে এবং সেখানে প্রতিকৃতি ছিঁড়ে ফেলে স্লোগান দেন—‘সব দুর্নীতিবাজকে কারাগারে পাঠাও।’
বামধারার সংগঠন ‘বায়ান’-এর নেতা রেমন্ড পালাতিনো বলেন, মার্কোস বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করেছেন, তাই দুর্নীতির দায় তারও রয়েছে। তিনি মার্কোস–দুতার্তে জুটির পদত্যাগ ও একটি বেসামরিক নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ গঠনের দাবি জানান।
রাষ্ট্রপতির প্রেস অফিসার ক্লেয়ার কাস্ত্রো এসব দাবি ‘অসংবিধানিক’ ও ‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচারণা’ বলে মন্তব্য করেন।
দুর্নীতি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুলাইয়ে ‘ইনডিপেনডেন্ট কমিশন ফর ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ (আইসিআই) গঠন করেন। কমিশন ৯ হাজারের বেশি প্রকল্প—মোট ৫৪৫ বিলিয়ন পেসোর—অনিয়ম তদন্ত করছে। এর বাইরে সিনেট ও হাউসও নিজস্ব তদন্ত চালাচ্ছে। সংসদে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ১১৮.৫ বিলিয়ন পেসো দুর্নীতির কারণে অপচয় হয়েছে।
এ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মার্কোসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও আত্মীয় মার্টিন রোমুয়ালদেজ স্পিকার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে আইসিআই এখনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ তদন্ত শুরু করেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর সল ইগ্লেসিয়াসের মতে, কমিশন গঠন করেও প্রেসিডেন্ট দুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত হতে পারেননি। সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ দমন-পীড়নের পর সরকার দ্রুত বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।
