রিজভী
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পিএম

অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা মানুষের কাছে ম্লান হয়ে যাবে। ছবি : ভোরের কাগজ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আইনের শাসন কায়েম করে জুলাইয়ের সকল হত্যাকারী ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা মানুষের কাছে ম্লান হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ইউনূস গুড উইল বলে একটা কথা আছে। ইউনূস গুড উইলের আমরা প্রতিফলন দেখতে চাই। সেই প্রতিফলন শুধু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে নয় দেশের মধ্যে সুশাসন, আইনের শাসন এবং ভয়ংকর জুলাইয়ে যে নারকীয় গণহত্যা হয়েছে সেই অপরাধীদেরকে গ্রেপ্তার এবং বিচারের নিশ্চয়তা না দিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ মাহামুদুরর রহমান সৈকতের মোহাম্মদপুরের বাসায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, তিনি অবৈধ লুটের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পুতুলের মত নিষ্পাপ শিশু, বাচ্চাদের রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করেননি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সবার সমর্থন আছে। কিন্তু কাজের গতি যদি স্লো হয়, কাজের গতি যদি অত্যন্ত নিম্নগতির হয় তাহলে তো এদেশের মানুষের কাছে আপনারা দিনকে দিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বেন। আপনারা একটি বিপ্লবী সরকার। এই কিশোর বাচ্চাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে পৃথিবী কাঁপানো যে বিপ্লব হলো ৫ই আগস্ট, আপনারা তার সরকার। ওই সমস্ত অপরাধীরা ঘুরে বেড়ায় তারা পিকনিক করে লাঠি মিছিল করে আর আপনারা যদি নিশ্চুপ থাকেন তাহলে তো আপনাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।
তিনি বলেন, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকত নিজের জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে আমাদের মুক্ত বাতাসে নিয়ে এসেছে। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল, অদম্য প্রত্যয় ছিল। একজন ভালো ছাত্র। একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিল সে। এই দেশকে তার আরো অনেক দেয়ার কিছু ছিল। অথচ তার আগেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। তার বিদায় স্বাভাবিক ছিল না। তার মত শহীদদের জীবনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি কারাগার থেকে বেরিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে। কিন্তু সৈকতের মত এমন টগবগে একটি কিশোর ছেলের স্বৈরাচারের গুলিতে মারা যাওয়ায় আজ গোটা দেশ, গোটা জাতি শোকে স্তব্ধ।
আরো পড়ুন : আরেক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান
রিজভী এসময় প্রশ্ন রেখে বলেন, 'শেখ হাসিনা, তোমার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কি এত রক্ত, এত লাশের দরকার ছিল! এই বাচ্চাদের লাশ দেখে তুমি খুশি হয়েছিলে! আজ তোমার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। তুমি তোমার মেয়ের সঙ্গে দিল্লিতে একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছো। কতটা নির্লজ্জ তুমি!'
তিনি আরো বলেন, যারা দেশটিকে নিজেদের কব্জায় নিতে চেয়েছিল, শেখ হাসিনা ছিলেন তাদের প্রতিনিধি। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে তিনি নিজ দেশের তরুণদের রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করেননি।
রিজভী বলেন, সৈকতের মৃত্যুর ঘটনায় হতভাগ্যের পিতা একটি মামলা করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনো প্রধান আসামিসহ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আর পারবেই বা কি করে। পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তারা ছিলেন ভয়ংকর এক দুরাচারী সরকারের দোসর ছিলেন। স্বৈরাচারের রক্তপিপাসু শাসনকে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তা না হলে সৈকতকে গুলি করে হত্যাকারী এসআই শাহরিয়ার গ্রেপ্তার হতো। সাবেক ভূমিমন্ত্রী, সালমান এফ রহমানদের মত দুরাচাররা পার পেয়ে যেতো না। প্রশাসন ও আদালত নানা ধানাই ফানাই করছে।
শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ১৫ বছর ধরে দেশটিকে খেয়ে ফেলেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শেখ হাসিনা তার প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের মাধ্যমে হরিলুটের রাজ্য কায়েম করেছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তারা উপহাস করেছে সে সময়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ব্যাংকে রাখা অর্থ লোপাট করায় সিদ্ধহস্ত ছিল। আর সেই অর্থ দিয়ে বিদেশে বাড়ি করবে। পাচার করবে। তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠলেই কণ্ঠরোধ করা হতো। তারা সেটাই করতে চেয়েছিল। তারা মনে করেছিল গণতান্ত্রিক শক্তি আর আওয়াজ করবে কোথা থেকে। জনগণ যে ভেতরে ভেতরে ফুসে উঠেছিল তারা সেটি টের পায়নি।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, যুবদল নেতা মেহেবুব মাসুম শান্ত, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল রহমান তুষার প্রমুখ।