মতিঝিল-কমলাপুর মেট্রোরেল প্রকল্পে ব্যয় কমছে ১৮৬ কোটি টাকা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ০২:১৪ পিএম

কাজের অগ্রগতি ধীর থাকায় সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকাবাসীর স্বস্তির পরিবহন মেট্রোরেল এবার মতিঝিল ছাড়িয়ে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্ধিত এই অংশে ট্রেন চলাচল শুরু হতে সময় লাগবে আরো দেড় বছর। তবে সবচেয়ে বড় সুসংবাদ—এ প্রকল্পে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়েছে ১৮৬ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এ ব্যয় কমানো সম্ভাব হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠিকাদারদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় দর-কষাকষি চালিয়ে ব্যয় হ্রাস করে। মূলত আগে ৬৫১ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হলেও তা ধাপে ধাপে কমে এসে ৪৬৫ কোটি টাকায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে। ফলে এই অংশের জন্য বরাদ্দের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানায়, বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার রুটে মেট্রোরেল চলাচল করছে। বর্ধিত অংশ—মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত—দূরত্ব ১.১৬ কিলোমিটার।
এই অংশে উড়ালপথ ও স্টেশন নির্মাণকাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৈদ্যুতিক সংযোগ, রেললাইন ও সংকেতব্যবস্থা স্থাপনের পরেই ট্রেন চালু করা যাবে।
আরো পড়ুন : সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমলো
এই বর্ধিত অংশের কাজের জন্য আগে ভারতের লারসন অ্যান্ড টুবরো ও জাপানের মারুবিনি করপোরেশন যৌথভাবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা ছিল। তারা কাজটি "ভেরিয়েশন" হিসেবে দাবি করেছিল, অর্থাৎ মূল প্রকল্পের অংশ হিসেবেই চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের নিয়োগ আর চূড়ান্ত হয়নি।
পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার ডিএমটিসিএলের এমডি হিসেবে ফারুক আহমেদকে নিয়োগ দেয়। তিনি ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও হংকংয়ে মেট্রোরেল খাতে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন প্রকৌশলী। তার নেতৃত্বেই শুরু হয় কঠোর দরপত্র পুনর্মূল্যায়ন ও দর-কষাকষি। সরকার এমনকি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের হুমকি দিয়েছিল যদি ঠিকাদার ব্যয় না কমায়। শেষ পর্যন্ত ৩ মাস আলোচনার পর তাদের প্রস্তাব ৪৬৫ কোটি টাকায় নেমে আসে।
প্রকল্পটির শুরুতে এই অংশের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ২৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রস্তাবিত দর একপর্যায়ে ৬৫১ কোটি টাকায় উঠে যায়। অতিরিক্ত ব্যয় সরকার মেনে না নেওয়ায় কয়েক দফা দরপত্র সংশোধন করে বর্তমান প্রস্তাব দেওয়া হয়। এখন এই চূড়ান্ত প্রস্তাব সরকারের পর্যালোচনায় রয়েছে।
ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেন, কমলাপুর পর্যন্ত দ্রুত মেট্রোরেল চালু করা যেমন অগ্রাধিকার, তেমনি কম খরচে মানসম্পন্ন কাজ করাও বড় লক্ষ্য। ঠিকাদারের সর্বশেষ দর প্রস্তাব এখন সরকারের বিবেচনায় আছে। খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে।
মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালে। এর স্টেশন ও উড়ালপথ নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের জুনে। কিন্তু বাস্তবে কাজের অগ্রগতি ধীর থাকায় সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।