সবজিতে আগুন, ঊর্ধ্বমুখী সব পণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৪৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দাম বেড়েছে প্রতিটি সবজির। ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। বাড়তি দামে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর উত্তর বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা যায়- প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের গোল বেগুন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে যার দাম দ্বিগুণ, বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকা কেজিতে। লম্বা জাতের বেগুনের মূল্য ১৬০-১৮০ টাকা এবং সাদা জাতের বেগুন কেজিপ্রতি ১২০-১৪০ টাকা।
ঝিঙা, ধুন্দল, শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে। ঢেঁড়স, পটল, কাকরোল কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। এর নিচে বিক্রি হচ্ছে শুধু পেঁপে-৪০ টাকা কেজি। প্রতি পিস জালি কুমড়ার দাম ১০০-১২০ টাকা এবং লাউ ১০০-১৫০ টাকা। বরবটি প্রতিকেজি ৮০-১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুমুখী ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে কাঁচামরিচেরও-কেজিপ্রতি ২২০-২৪০ টাকা। পাইকারি বাজারে পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
বাজারে আসা ক্রেতারা জানান, সবজির এমন নাগালবিহীন দামে খরচ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। খরচের ধাক্কা সামলাতে পরিমাণ কমিয়ে কিনতে হচ্ছে সবজি। উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসে স্কুলশিক্ষিকা ইয়াসমিন আরা বলেন, বেগুনের দাম শুনে রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লাম। এক সপ্তাহে এর দর কেজিতে ১০০ টাকা কী করে বাড়ে? বেগুন না কিনে পেঁপে কিনে বাসায় যাচ্ছি।
আরেক ক্রেতা আবদুল গফফার বলেন, সাধারণত এক কেজির নিচে কোনও সবজি কেনা হয় না। আজকে তিন রকমের সবজি আধা কেজি করে কিনে নিয়ে যাচ্ছি। সবজির দাম শুনে মানতেই পারছি না। গত এক বছরের মধ্যে এবারই সবজির দর এত বেশি।
বিক্রেতারা জানান, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এতে করে অনেক ক্রেতাই সবজি না কিনে ফিরে যাচ্ছেন, অনেকে কিনছেন আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে। সব মিলিয়ে তাদেরও মুনাফা কম হচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, এদিন ভোরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবজির প্রতিটির দাম ছিল বাড়তি। মৌসুমের এ সময়ে ফলন কম হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন বিক্রেতারা।
আড়তে বিক্রেতা নূর ইসলাম জানান, পাল্লাপ্রতি সবজির দাম বেড়েছে ১০০-২০০ টাকা। এতে প্রতিকেজি সবজিতে খরচ বাড়ছে। অক্টোবর এলে সবজির দর আবার কমে আসবে।
ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, মার্চ থেকে মাঠে সবজির পরিমাণ কমতে থাকলেও চাহিদা আগের মতোই থাকে। তাই সবজির মূল্য বাড়ে এসময়ে। এছাড়া রাস্তায় গত বছরের তুলনায় এ বছর বাড়তি খরচ বেড়েছে।
শুধু সবজি নয়, উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজও। গত সপ্তাহের ৭৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। পাইকারি বাজারে পাল্লাপ্রতি যার দর ৪০০-৪৩০ টাকা। এর বাইরে দাম বেড়েছে ডিমের। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়। সাদা ডিম ডজনপ্রতি বিকোচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়।
স্থানভেদে সোনালি এবং ফার্মের মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। সোনালি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকায়, ফার্ম ১৭০-১৮৫ টাকায়। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস—কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা; খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১১০০-১২০০ টাকা।
বাজারে দর বেড়েছে সব মাছের। কেজিতে ৫০-২০০ টাকা বেশি দামে তা বিক্রি হচ্ছে। কাচকির দাম ১০০ টাকা বেড়ে বিকোচ্ছে ৬০০ টাকায়। চাপিলা ৪৫০-৫০০ টাকায়। পোয়া সাইজভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৭০০ টাকায়। শিং-মাগুর কেজিপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা। বড় মাছের মধ্যে রুই কেজিপ্রতি ৩৮০-৪২০ টাকা, কাতল ৪০০-৪৮০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-২৮০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২৫০ টাকা, নদীর পাঙাশ ৮০০-১০০০ টাকা, বোয়াল ৮০০-১২০০ টাকা ও আইড় ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে দাম বেড়েছে ইলিশেরও। এক কেজির নিচে মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়, ছোট সাইজের ১২০০-১৬০০ টাকা। এক কেজির ওপরে ইলিশের দর ২০০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবজি ও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারের প্রতিটি পণ্যে। দর কমাতে সিন্ডিকেটের কারসাজি, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি এবং বাজার মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেন তারা।