যে তিন কারণে এসএসসির ফলাফলে বিপর্যয়

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
মূলত তিনটি কারণে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটেছে। কোভিডের ছোবলে বছরের পর বছর স্কুলে ক্লাস না হওয়া, পরীক্ষায় গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানে কঠিন প্রশ্ন এবং মূল্যায়নে অতি কড়াকড়ি’র মতো বিষয়ের কারণে ফলাফলের এমন দশা হয়েছে। তবে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ফল তৈরি হয়েছে ‘বাস্তব মূল্যায়ন’ নীতিতে। প্রসঙ্গত, ফল প্রকাশ উপলক্ষ্যে এবার কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছেন, গোঁজামিল ও বাহুল্য এড়িয়ে, স্বচ্ছতায় গুরুত্ব দিয়েই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
ফলাফল প্রকাশের পর তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে চলতি বছর এই পরীক্ষায় পাসের হার তীব্রভাবে কমেছে। এরই মধ্যে কেবল গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ১৪.৫৯ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। শুধু পাসের হারেই নয়, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭। এর আগে ২০১৮ সালে একবার পাসের হার কমে ৭৭.৮ শতাংশ হয়েছিল। উল্টোদিকে গত ১৫ বছরের মধ্যে পাসের হার ৯৩.৬ শতাংশ হয়েছিল।
কিন্তু এবার সবকিছু কমে এত বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ বছর যারা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারা ২০২০ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু সেবার কোভিডের ছোবল থাকায় তারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস করতে পারেনি, অটো পাস হয়ে একের পর এক ক্লাসে উত্তীর্ণ হলেও পড়াশুনা একেবারেই হয়নি। এরপরে নতুন শিক্ষাক্রমের ডামাঢোলেও পড়াশুনা বিঘ্নিত হয়। সর্বশেষ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরীক্ষার আগে প্রায় ৮ মাস পড়াশুনা একেবারেই ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানে কঠিন প্রশ্ন ছিল। সবশেষে মূল্যায়নেও অন্যান্যবারের চেয়ে কড়াকড়ি ছিল। সবমিলিয়ে ধাক্কা লেগেছে পাসের হারে।
তবে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবিরের মতে, যে ফল প্রকাশিত হয়েছে সেটি প্রকৃত ও সত্য। কোনো ধরনের অতিরিক্ত নম্বর দেয়ার জন্য কাউকে বলা হয়নি। সামগ্রিকভাবে এবারের ফলে প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল তিনি বলেন, আগে কী হয়েছে সেটি আমরা বলব না। তবে, এখন যে তথ্য দিয়েছি সেটিই প্রকৃত। যা হয়েছে সেটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের ওপর মহল থেকে কোনো ধরনের চাপ ছিল না। আমাদের বলা হয়েছে, রেজাল্ট হবে সেটিই দিতে হবে। আমরাও পরীক্ষকদের এ অনুরোধ জানিয়েছি। তাদের যথার্থভাবে খাতা মূল্যায়ন করার জন্য বলা হয়েছে।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের দুর্বল ফলাফলের কারণে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডে সামগ্রিক পাসের হার ব্যাহত হয়েছে। এই দুই বিষয়ে ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। তবে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা বলছেন, প্রকৃত অবস্থা জানতেই সহানুভূতি দেখানো কিংবা খাতায় অতিরিক্ত নম্বর দেয়া হয়নি। যার স্পষ্ট প্রভাব পড়েছে রেজাল্টে। বোর্ডের বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বরিশাল বোর্ডে বাংলা বিষয়ে পাস করেছে ৯২ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে যথাক্রমে ৯২ দশমিক ১০ ও ৯১ দশমিক ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে।
আইসিটিতে সবচেয়ে ভালো ফল, পাসের হার ৯৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। পৌরনীতি ও নাগরিকতায় ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং অ্যাকাউন্টিংয়ে পাস করেছে ৮৬ দশমিক ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। কিন্তু ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের ফল বিপর্যয়ের চিত্র স্পষ্ট। ইংরেজিতে পাসের হার মাত্র ৬৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং গণিতে আরো কমে মাত্র ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ, ইংরেজি ও গণিত এই দুটি মূল বিষয়ের প্রতিটিতেই প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষক সংকট এবং নিয়মিত ক্লাস ও অনুশীলনের অভাবও ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
জানতে চাইলে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, এবার পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে আমরা যথাযথ নিয়ম মেনে চলেছি। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল পর্যন্ত সবাই কঠোরভাবে কেন্দ্র তদারকি করেছে। আমি নিজেও বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এবার স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল শিক্ষার প্রকৃত মান যাচাই করতে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না। সেই নির্দেশনা অনুসরণ করেই আমরা কঠোরভাবে পরীক্ষাটি পরিচালনা করেছি। ফলে এবার যে ফলাফল এসেছে, সেটিই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অবস্থা প্রতিফলিত করেছে। তবে এই দুই বিষয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত ক্লাস, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আধুনিকতা আনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সব বোর্ডেই গণিতে ভরাডুবি
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সব বোর্ডেই গণিতে পাসের হার আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় গণিতেই বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি। ফলে সব শিক্ষাবোর্ডে গণিতেই ভরাডুবি ঘটেছে। ১১টি বোর্ডের বিভিন্ন বিষয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো ফল হয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে, যেখানে গণিতে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই ফল অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় অনেকটাই ভালো হলেও বাকি সব বোর্ডেই চিত্রটা হতাশাজনক। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গণিতে পাস করেছে ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে এ হার কিছুটা ভালো ৮৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। যশোর বোর্ডেও তুলনামূলক ভালো ফল হয়েছে, পাসের হার ৮৫ দশমিক ০২ শতাংশ।
তবে কুমিল্লা, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ফল অনেকটাই খারাপ। কুমিল্লা বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৭২ দশমিক ০১ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে মাত্র ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডে এই হার আরও কম, মাত্র ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে গণিতে পাস করেছে ৮১ দশমিক ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও আশানুরূপ নয়। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার কম, যেখানে ৭৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণিত বিষয়টিকে শিক্ষার্থীরা এখনো ভয় পায়। পাশাপাশি স্কুলে গণিত শিক্ষকের সংকট, মানসম্মত পাঠদানের অভাব এবং পর্যাপ্ত অনুশীলনের সুযোগ না থাকায় এমন ফলাফলের দেখা মিলছে। একইসঙ্গে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে গাণিতিক ধারণার দুর্বলতা, অনুশীলনমূলক প্রশ্নে অনভ্যস্ততা এবং পাঠ্যবই নির্ভর না হয়ে কোচিং ও গাইড নির্ভরতা বৃদ্ধিও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুলপর্যায়ে গণিতশিক্ষার পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং হাতে-কলমে শিক্ষাদান ও অনুশীলনের সুযোগ বাড়ানো না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের ভরাডুবি এড়ানো কঠিন হবে।
জানতে চাইলে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে না পারায় পাসের হার কমেছে। বিশেষ করে মানবিক বিভাগে ফেল করা শিক্ষার্থীর হার বেশি। তিনি বলেন, দুর্গম হাওরাঞ্চল ও গ্রামের অনেক প্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন গণিত ও ইংরেজি শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী প্রবণতা, অমনযোগিতা এবং শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবও খারাপ ফলাফলের অন্যতম কারণ। তিনি আরো বলেন, সব দিক বিবেচনায় সার্বিক ফলাফলে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট। যেসব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমের কারণ হিসেবে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো ক্লাস হয়নি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরাও পড়ার টেবিলে হয়তো মনোনিবেশ করতে পারেনি। তা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের ‘অন্যকিছু’ ভাববার অবকাশ ছিল না। এসব কারণে ফলাফলে কিছুটা প্রভাব ফেলতেও পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। চলতি বছর গণিত ও ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা একটু খারাপ করেছে বলে তিনি জানান। অন্যান্য বিষয়ে ৯০ শতাংশের ওপরে পাস করলেও এবার ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীরা ৮৫ শতাংশ পাস করেছে।
টানা ১০ বছর এসএসসিতে পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর মানে হল ৬২৬,৯৮১ ছেলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, যেমন ৬৭৬,৪৪৫ মেয়ে পাস করেছে। মেয়েরাও বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে যার মধ্যে ৭৩,৬১৬ মেয়ে এবং ৬৫,৪১৬ ছেলেরা। সেই হিসাবে এবারও পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। এ নিয়ে টানা ১০ বছর এসএসসিতে পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা। বিগত ১১ বছরের এসএসসি ও সমমানের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবশেষ ২০১৫ সালে ছাত্রীদের চেয়ে পাসের হারে এগিয়ে ছিল ছাত্ররা। সে বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ। তার মধ্যে ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতিবছর পাসের হারে এগিয়ে ছাত্রীরা।
এর আগে দুপুর ২টায় চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এ বছর পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির ফল ঘোষণা করে বলেন, দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ বছর ফলাফলে পাসের গড় হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। এবার এসএসসিতে পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন। দাখিলে পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬৬ জন। কারিগরিতে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৯৪৮ জন।
তিনি বলেন, দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র সাত লাখ এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী সাত লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা দুই হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠানসংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং এক লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ আট হাজার ৩৮৫ এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৫ সালের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষা ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ মে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ১০ এপ্রিল। পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কম ছিল। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর এবারের এসএসসি ছিল বাংলাদেশে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। অন্যান্য বছরের মত, ফলাফল প্রকাশের আগে পরীক্ষার সারসংক্ষেপ এবং পরিসংখ্যান সরকার প্রধানের কাছে হস্তান্তর করার কোনো অনুষ্ঠান ছিল না।
এবার পাস করতে পারেনি ৬ লাখ ৬৬০ পরীক্ষার্থী : এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৯ লাখ চার হাজার ৮৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। তবে উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৬ লাখ ৬৬০ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭১৬ জন ছাত্র এবং ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৪ জন ছাত্রী। প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৩ হাজার ৭১৪টি কেন্দ্রে ৩০ হাজার ৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। সেই হিসেবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৬ লাখ ৬৬০ পরীক্ষার্থী।
দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৫৬ জন পরীক্ষার্থী। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৭২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পরীক্ষায় পাস করে ১ লাখ ৯৫ হাজার ১১৫ জন পরীক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হতে পারেননি ৯১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৭ শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৩৬ হাজার ৪৪৭ জন।