প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের মরদেহ উদ্ধার!

নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৬ পিএম

নিহত সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ। ছবি : সংগৃহীত
প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ (২০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। তবে নিহতের পরিবারের দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের পাশাপাশি বাম হতের একটি আঙ্গুলের নখও ওঠানো অবস্থায় পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১১টার পর গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় মাসুমকে উদ্ধার করেন অটোরিকশা চালক সুজন। পরে তাকে উদ্ধার করে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতিকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল (মধ্য পাড়া) গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
জানা যায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরশুনা গ্রামের শিমুল সরদারের মেয়ে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীর সাথী খাতুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো মাসুমের। পারিবারিক ভাবে তাদের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তাদের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে। এর মাঝে বুধবার (৩০ জুলাই) মাসুম এলাকা ছেড়ে ঢাকায় কাজের সন্ধানে বড় বোনের বাসায় গিয়ে ওঠেন।
আরো পড়ুন : ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার পর প্রেমিকার বিয়ের খবরে ঢাকার উত্তর বাড্ডা থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সকাল ৯টার দিকে চাচাতো ভাই তরিকুল তার মুঠোফোনে কল করে জানতে পারেন মাসুমের অবস্থান লোহাগড়ায়। তরিকুল তাকে অনুরোধ করেন বাড়িতে ফেরার জন্য। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি মাসুমের।
বেলা ১১টার পর গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের সীমান্তবর্তী কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় মাসুমকে উদ্ধার করেন অটোরিকশা চালক সুজন। পরে তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তার কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি ভেঙে যাওয়া নিজের মোবাইলে মাসুমের সিম ব্যবহার করে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অটোরিকশা চালক। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি কালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাসুমের মৃত্যু হয়। পরে লোহাগড়া থানায় খবর দিলে পুলিশ মরদেহটি হেফাজতে নেয়।
এরপর থেকে মাসুমের রহস্যজনক মৃত্যুতে এলাকায় চঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ প্রশ্ন ওঠছে সবার মনে। তুলারামপুর হাইওয়ে থানা ও লোহাগড়া থানার কয়েক দফায় ঠেলাঠেলিতে সুরতহাল শেষে রাত পৌনে ১২টায় সদর হাসপাতাল মর্গে পৌঁছায় নিহতের মরদেহ।
অটোরিকশা চালক সুজন বলেন, গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়ার দিকে যাচ্ছিলাম। মধুমতি সেতুতে উঠতেই দেখি পাশের বড় লেনে (বড় গাড়ি চলাচলের রাস্তা) ভুট (উপুড়) হয়ে একজন পড়ে আছে। আমরা কাছে গিয়ে দেখি বেঁচে আছে, আমার গাড়িতে থাকা যাত্রীদের সাহায্য নিয়ে তাকে উঠাই। পরে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।
ঘটনাস্থলে দুর্ঘটনার কোন আলামত দেখতে পেয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নে সুজন আরো বলেন, সেখানে দুর্ঘটনার কোনো ছিটেফোঁটা আমরা দেখিনি। জিজ্ঞেস করছিলাম, আশপাশের কেউ ও দুর্ঘটনার কথা শোনেনি। তার শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সম্ভবত তাকে কেউ হয়তো গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।
নিহত মাসুমের বোন জামাই হাচিবুল ইসলাম বলেন, মাসুমের সঙ্গে পাশের গ্রামের সাথীর সম্পর্কের বিষয়টা আমরা পারিবারিক ভাবেই জানতাম। সাথীর পরিবার যেহেতু মেনে নিচ্ছে না, আমরা তাকে সবাই বুঝাইছি। আগে সে জাহাজে চাকরি করতো, তবে দীর্ঘদিন সে আর জাহাজে যায়নি। পারিবারিক সমস্যার কথা বোঝানোতে সে আবার জাহাজে চাকরিতে যেতে রাজি হয়। বুধবার আমার ঢাকার বাসায় যায়, পরদিন আমাদের বলে একসঙ্গে শুক্রবার ঘুরতে যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সে হুট করে বলে সকালে বাড়ি যাবো। তাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, সাথীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে কারণে। তাকে আমরা আবার বোঝাই। কিন্তু সে শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে রওনা করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে কল করে জানাই।
নিহত মাসুমের ছোট চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের (মাকড়াইল বিল পাড়া) সাইফুল মোল্যার কাছে সাথীর চাচা লতিফ সরদার সকাল ১০টার দিকে ফোন করে জানান, মাসুম ঝামেলা করতেছে। তার ছেলেপেলেরা মাসুমকে পেলে অবস্থা খারাপ হবে। আমরা খবর পাই মানিকগঞ্জ বাজারের এক পার্লারে সাথীর সঙ্গে মাসুম দেখা করে কথা বলছে। সাথীর চাচা ফোন করে হুমকি দেয়াতে আমরা মাসুমকে খুঁজতে বের হই, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিলো। পরে হাসপাতাল থেকে একজন ফোন করে। বড় গাড়িতে এক্সিডেন্ট করলে তো হাত পা অক্ষত থাকবে না। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন, তার বাম হতের একটা আঙ্গুলের নখ ও ওপড়ে ফেলা হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে সাথীর পরিবার তাকে হত্যা করছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুম এর প্রেমিকা সাথী খাতুন বা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেতন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।