এবার কম্পিউটার হ্যাক করে অভিনব প্রতারণা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:০১ পিএম
কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আর ব্যবহার করার মত অবস্থায় থাকছে না। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পরও বন্ধ করা যাচ্ছে না কম্পিউটার। বন্ধ করতে গেলেই স্ক্রিনে ভেসে আসছে একটি বার্তা। ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালের লোগোসহ ওই বার্তায় নির্দেশ করা হচ্ছে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমের জরিমানা পরিশোধ করতে। দ্রুত টাকা পরিশোধ না করলে বাড়িতে যাবে পুলিশ আর জরিমানা পরিশোধ না করে কম্পিউটার বন্ধ করার চেষ্টা করলে দেয়া হচ্ছে জেলের হুমকি। সম্প্রতি ভারতের নিষিদ্ধ কিছু পর্নোগ্রাফি সাইট বারবার খোলার জন্য কম্পিউটার ব্লক করে দিয়ে এরকম ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে ভারতে বিভিন্ন রাজ্য এমনই অনেকগুলো ঘটনা সামনে এসেছে। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইন্টারনেট সুরক্ষা দিবসের আগে এ ঘটনায় নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। খবর এনডিটিভির।
জানা গেছে, গত একমাসে কলকাতা, বিধান নগর ও ব্যারাকপুরসহ আরো বেশ কিছু এলাকায় পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ তদন্ত করতে নেমে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন এটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার নতুন একটি কৌশল। মূলত বিদেশে বসে ভারতের কম্পিউটার বা ল্যাপটপকে নিশানা কো হচ্ছে। সাইবার অপরাধীরা এমন সব কম্পিউটার বা ল্যাপটপকে নিশানা করছে যেগুলো শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা ব্যবহার করে।

কোলকাতা লালবাজারের এক তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি বেহালার এক বাসিন্দা প্রথম পুলিশের কাছে এ সম্পর্কিত একটি অভিযোগ করেন। ওই ব্যক্তি অভিযোগে বলেন তার ১২ বছরের ছেলে স্কুলের কাজে যে কম্পিউটার ব্যবহার করে সেটি হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অফিস থেকে ফিরে ওই ব্যক্তি দেখেন, মাউস বা কি-বোর্ডের কোনোটিই ঠিকমতো আর কাজ করছে না। কম্পিউটারটি চাইলে বন্ধও করা যাচ্ছে না। উল্টে, তাতে একটি ওয়েবসাইট খোলা। যেখানে লেখা, পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট দেখার জন্য যন্ত্রটি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ব্লক খুলতে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। না দিলে বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হবে। কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে ভুক্তভোগী প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খোয়ান।
ওই পুলিশ কর্মকর্তার জানান, ‘ভুক্তভোগী পরিবারের সম্মান ও সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেক অভিভাবকই টাকা পরিশোধের চেষ্টা করেন। সেই ফাঁদে পড়েই অনেকে শেষ পর্যন্ত খুইয়েছেন মোটা অংকের টাকা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা অন্য সমস্যায় ভোগা সন্তানের ক্ষেত্রে যদি এমন ঘটে, তখন অভিভাবকরা আরো বেশি তৎপর হয়ে ওঠেন টাকা পরিশোধের জন্য। তারা ধরেই নেন, হয়তো তাঁদের সন্তান না বুঝেই কিছু ঘটিয়ে ফেলেছে।’
একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সন্তান অনলাইনে নিরাপদ কি না তা নিয়ে বিশেষ সচেতন নন অনেক অভিভাবকই। সাম্প্রতিক পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী, মামলা হওয়ার ঘটনায় ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশই অনলাইন অপরাধের শিকার হয়েছেন। কেউ অনলাইনে হুমকি পেয়েছেন, কেউবা হয়েছেন সাইবার বুলিংয়ের শিকার। দেখা গেছে, মামলার ঘটনায় প্রায় ১৫ শতাংশই সাইবার বুলিংয়ের শিকার। আবার ১৪ শতাংশ শিশু, কিশোর-কিশোরী আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছে এমন ঘটনার শিকার হয়ে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, যেখানে কাউকে চাপ দিয়ে তৈরি করানো হচ্ছে ডার্ক ওয়েবের কন্টেন্ট, কেউবা নিজের অজান্তেই শিশু পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছেন।
গত বছরের ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) রিপোর্টে জানা গেছে, শিশুদের মধ্যে অনলাইন অপরাধের শিকার হওয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভারতের ৮৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সাইবার বুলিং এবং ৪২ শতাংশ অনলাইনে বিভিন্ন যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছেনে। ২৮ শতাংশ ব্যক্তিগত ক্ষতির হুমকি পেয়েছে। কিন্তু সন্তান অনলাইন অপরাধের শিকার হলেও অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না অভিভাবকরা। ৯০ শতাংশ অভিভাবক এই সংক্রান্ত আইন নিয়ে মোটেই সচেতন নন। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা মন্তব্য করেন, ‘দ্রুত অভিযোগ জানালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতি আটকানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি।’