শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালান যুগান্তর, ডিবিসি ও দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫৫ পিএম

নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সড়কে শামীম ওসমানের দুই পাশে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুইজন। এরমধ্যে শামীম ওসমানের পেছনে দুটি অস্ত্র হাতে ছিলেন ডিবিসি টেলিভিশন ও যুগান্তর পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদ। দেশ রূপান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি কমল খানকেও অস্ত্রের মহড়ায় দেখা যায়। ছবি: ভিডিও থেকে নেয়া।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছিলেন যুগান্তর, ডিবিসি ও দেশ রূপান্তরের সাংবাদিক। গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনীর অগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করার এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দুটি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছিলেন ডিবিসি টেলিভিশন ও যুগান্তর পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদ। দেশ রূপান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি কমল খানকেও অস্ত্রের মহড়ায় দেখা যায়।
১৯ জুলাই শামীম ওসমানের নেতৃত্বে গুলি চালানোর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। তারা জানান, সেদিনে পরিস্থিতি ছিল ভীতিকর। ওই পরিস্থিতিতে ছবি ও ভিডিও ধারণের কোনো সুযোগ ছিল না। ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে একজন সাংবাদিক মারধরেরও শিকার হন।
গত ১৯ জুলাই চাষাড়ার বঙ্গবন্ধু সড়কে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করার ভিডিওতে দেখা যায়, শামীম ওসমানের বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মুহুর্মুহু গুলি ছুড়ছে। ভিডিওতে শামীম ওসমানের শ্যালক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটুকেও গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।
আরো পড়ুন- শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করে বরখাস্ত হলেন যুগান্তর সাংবাদিক রাজু আহমেদ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শামীম ওসমান ও তার বাহিনী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে শহরের ডিআইটি এলাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এসময় তার শ্যালক বিসিবির পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটু মিছিলের সামনে অবস্থান করে হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছেন।
শামীম ওসমানের পেছনে দুটি অস্ত্র হাতে ছিলেন ডিবিসি নিউজের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি রাজু আহমেদ। আর পেছনের সারিতে পিস্তল হাতে ছিলেন শামীম ওসমানের বেয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলু ও তার ছেলে মিনহাজুল ইসলাম ভিকি। এসময় তাদেরও গুলি ছুঁড়তে দেখা যায়। একই বহরে অস্ত্র হাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়াডের্র কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ও তার ছেলে রিয়ানকেও দেখা গেছে। ওই মিছিলে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুচর ব্যবসায়ী অনুপম কুমার সাহা, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনুসহ অসংখ্য ব্যক্তির হাতে অস্ত্র দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ছিল নারায়ণগঞ্জ শহর। সেদিন বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া থেকে মন্ডলপাড়া মোড় পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র হাতে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী কয়েক দফায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরে কোনো পুলিশ সদস্য না থাকলেও বিকেলের পর পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, ভিডিওতে না আসলেও সেদিন শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামও গুলি চালিয়েছেন। অস্ত্রের মহড়ায় ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, ছাত্রলীগ নেতা আহম্মেদ কাউসার, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাইল রাফেল প্রধান, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সম্রাট, সাধারণ সম্পাদক রাসেল প্রধানও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একাধিক সাংবাদিকও ঘটনাস্থলে ছিলেন। ভীতিকর ওই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের পক্ষে ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণের কোনো সুযোগ ছিল না বলে জানান সাংবাদিকরা। এলাকার লোকজন বলছেন, ওই ভিডিওতে যেসব অস্ত্র দেখা গেছে তা আগে কখনোই দেখা যায়নি। তানভীর আহম্মেদ টিটু, ভিকিসহ অনেকের হাতে ছিল অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্র। যা সাধারণ মানুষের কাছে থাকার কথা না।
এর আগে, শহরের জালকুড়িতে একই দিনের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই ভিডিওতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায় শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নকে। তার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন শামীম ওসমান। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নামে নারায়ণগঞ্জে ৯টি হত্যা মামলা করা হয়েছে।