পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভারতের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কে টানাপোড়েন আছে
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২৮ পিএম
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
ভারতের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্কে 'টানাপোড়েন আছে' বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার যেভাবে দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছেন, সেটিও 'খুব অপ্রত্যাশিত কিছু না' বলে মনে করেন তিনি।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এটা (দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে তলব) খুব অপ্রত্যাশিত কিছু না। সাধারণত এটা ঘটে। একজনকে ডাকলে আরেকজনকে ডাকা হয়, বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, এটা বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই ভালো যে, আসলে এই সরকারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত (সম্পর্কে) টানাপোড়েন তো আছেই ভারতের সঙ্গে। তবে 'সম্পর্কের এই টানাপোড়েন' মেনে নিয়েই বর্তমান সরকার ভারতের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, তবে আমরা চাইলেই যে হবে, এমন কোনো কথা নেই। দুইপক্ষ থেকেই সম্পর্ককে এগোনোর চেষ্টা করতে হবে।
এর আগে, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে তাদের। এই উদ্বেগ জানাতেই তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
আরো পড়ুন : বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারত
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। তাকে তলব করেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিএম) বি শ্যাম। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গত রোববার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। তার তিন দিনের মাথায় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলবের ঘটনাকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে বুধবার দুপুর ২টা থেকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভ্যাক) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ জানাতেই বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে। এ সময় তার দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করা হয় কিছু ‘চরমপন্থী গোষ্ঠীর’ কর্মকাণ্ডের দিকে, যারা ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে নিরাপত্তা সংকট তৈরির পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরমপন্থী মহল যে ভুয়া বয়ান ছড়ানোর চেষ্টা করছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। একই সঙ্গে অভিযোগ করা হয়, এসব ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ করেনি কিংবা ভারতের সঙ্গে অর্থবহ তথ্যপ্রমাণ বিনিময় করেনি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যার ভিত্তি গড়ে উঠেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন যৌথ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পরবর্তীকালে উন্নয়ন সহযোগিতা ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে ভারত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
এ ছাড়া কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় সব মিশন ও পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে—এমন প্রত্যাশার কথাও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তুলে ধরে নয়াদিল্লি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনো সেখানে অবস্থান করছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। এ ঘটনায় তার প্রত্যর্পণ চেয়ে বাংলাদেশ একাধিকবার ভারতের কাছে অনুরোধ জানালেও এখনো সাড়া পায়নি।
ঢাকার পক্ষ থেকে ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ড দ্রুত বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে গত রোববার সকালে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে বার্তা দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা ভারতীয় দূতকে জানান।
