এসএসসির ফল : বাস্তব মূল্যায়নে কমতে পারে ‘এ প্লাস’

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:১৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফলাফল প্রকাশ করবে।
ফল জানা যাবে অনলাইন, এসএমএস ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তবে এবার ফল প্রকাশে থাকছে না অতীতের মতো কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আনাড়ম্বরভাবেই প্রকাশিত হবে ফলাফল।
গুণগত মূল্যায়নের দিকে নজর
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার ফল তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত উত্তরের ভিত্তিতে খাতা মূল্যায়নের ওপর। অতীতে ‘সহানুভূতির নম্বর’ দেওয়ার যে প্রথা প্রচলিত ছিল, এবার তা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে ‘এ প্লাস’ পাওয়ার সংখ্যা কিছুটা কমে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘খাতা মূল্যায়নে আমরা উদার বা কঠোর নই, বরং বাস্তবতার ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। বেশি জিপিএ-৫ নয়, বরং মানসম্মত শিক্ষার্থীই আমাদের লক্ষ্য।’
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু সংখ্যা নয়, গুণগত মানের শিক্ষার্থীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাই সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার।’
অতীতে ‘এ প্লাস’ এর উলম্ফন
২০০১ সালে দেশে প্রথমবার গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়েছিল, তখন মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল। অথচ ২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জনে। সংখ্যায় এই সাফল্য থাকলেও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অনেক শিক্ষার্থী ফেল করছে, এমনকি মানসিক চাপে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে—যা শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে।
একাধিক বোর্ড পরীক্ষক জানান, আগে অনেক সময় ২৮ বা ৩০ নম্বর পেলেও শিক্ষার্থীকে ৩৩ নম্বর দিয়ে পাস করিয়ে দেওয়ার অলিখিত নির্দেশনা থাকত। এমনকি অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিলেও নম্বর দেওয়ার নজির আছে। তবে এবার সেই ‘সহানুভূতি’ বাদ দিয়ে বাস্তব মূল্যায়নই প্রাধান্য পেয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার অশনি সংকেত
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এবারও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ফরম পূরণের পরও পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ৬ হাজার ৩৮৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেনি, যাদের মধ্যে ৪২ শতাংশ অনুপস্থিত ছিল বিয়ের কারণে। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশই ছাত্রী, যারা মূলত গ্রামাঞ্চলের।
জরিপ অনুযায়ী, অনুপস্থিতদের মধ্যে ২৫ শতাংশ অসুস্থতা, ১২ শতাংশ প্রস্তুতির অভাব, ৬.৭ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ, ৩.৬ শতাংশ বিদেশে যাওয়া, ১.৬ শতাংশ গর্ভধারণ ও ১.৪ শতাংশ মৃত্যুজনিত কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত ছিল মানবিক বিভাগ থেকে—৬৮ শতাংশ, যার বড় অংশই মেয়ে ও গ্রামীণ এলাকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘মেয়েরা বড় হলেই বিয়ে দিতে হবে—এখনো সমাজে এই মানসিকতা বিদ্যমান। দিনমজুর পরিবারের সন্তান পড়ানো বিলাসিতা মনে করা হয়। তাই মেয়েদের পড়াশোনার বদলে বিয়েকে সমাধান হিসেবে দেখা হয়।’
ফল জানার পদ্ধতি
দুপুর ২টার পর শিক্ষার্থীরা অনলাইনে www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফল জানতে পারবে। মোবাইলে ফল জানতে চাইলে মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখতে হবে:
SSC <বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর> <রোল নম্বর> 2025
এবং পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। উদাহরণ: SSC Dha 123456 2025।
দাখিল পরীক্ষার্থীরা www.bmeb.gov.bd বা www.educationboardresults.gov.bd থেকে ফল জানতে পারবে। মোবাইলের জন্য মেসেজ করতে হবে:
Dakhil MAD <রোল নম্বর> 2025 এবং পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফল জানতে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা https://eboardresults.com/v2/home ওয়েবসাইটে ‘ইআইআইএন’ নম্বর ব্যবহার করে ফল ডাউনলোড করতে পারবেন।
ফল রিভিউয়ের সুযোগ
ফলাফল নিয়ে কেউ অসন্তুষ্ট হলে ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত খাতা পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে ১৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আবেদন করতে হবে শুধুমাত্র টেলিটক মোবাইল অপারেটর থেকে।
মেসেজ অপশনে লিখতে হবে:
RSC <বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর> <রোল নম্বর> <বিষয় কোড>
এবং পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। একাধিক বিষয়ের জন্য কোড কমা দিয়ে লিখতে হবে (যেমন: ১০১,১০২)। বিস্তারিত নির্দেশনা টেলিটকের ওয়েবসাইট www.teletalk.com.bd-এ পাওয়া যাবে।
এবার পরীক্ষা দিয়েছে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রী ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন এবং ছাত্র ৯ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ জন। দেশের ৩ হাজার ৭১৫টি কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী প্রায় এক লাখ কমেছে।