ফেনীতে তীব্র স্রোতে ডুবছে জনপদ, বন্যার আতঙ্কে লাখো মানুষ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৪ পিএম

বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ছবি : সংগৃহীত
ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে একের পর এক গ্রাম, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখো মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১টা থেকে বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, স্পিডবোটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকা ঘিরে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন দুর্গত অঞ্চলে সেনাবাহিনী পৌঁছাবে।
ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ সতর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা ডুবছে। তীব্র স্রোতে সবকিছু পানির নিচে চলে যাচ্ছে। গেল বছরও একইভাবে ঘরবাড়ি হারিয়েছিলাম। দেশে সরকার পাল্টায়, ক্ষমতা পাল্টায়, কিন্তু আমাদের ভাগ্য বদলায় না।’
আরেক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সড়ক ডুবে যান চলাচল বন্ধ। বিদ্যুৎ আর নেটওয়ার্ক নেই। এখনো একমুঠো শুকনো খাবারও মেলেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের কারণে প্রতিবছর আমাদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গেল বছরের ক্ষতির ঘা মেটেনি, তার আগেই আবার বন্যা।’
আরো পড়ুন : ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, জেলার ওপর টানা চার দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৫০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবারও জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, দুপুর ১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীতে পানি কমলেও বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার ছয় উপজেলায় এ পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্গতদের জন্য সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া ছয় উপজেলায় ত্রাণ তৎপরতার জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।