×

সম্পাদকীয় ও মুক্তচিন্তা

এক অধম্য ছাত্রের অভীষ্ট লক্ষ্য এবং মা-বাবার প্রত্যাশা

Icon

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক অধম্য ছাত্রের অভীষ্ট লক্ষ্য এবং মা-বাবার প্রত্যাশা
   

‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো।’ এটি জন্ম নিয়ে বহুল আলোচিত প্রবাদবাক্য। এ প্রবাদবাক্য জানে না এমন লোকের মেলা ভার। জন্ম নিয়ে এত বৃত্তান্ত বলার কারণ হলো, এ অধমের জন্মদিন পালনের আকাক্সক্ষা বা বাসনার ইতিবৃত্ত- এটি যেন গরিবের ঘোড়ারোগ হওয়ার শামিল। যার ঢাল নেই তলোয়ার নেই, তার আবার কীসের জন্মদিবস; এমনিতে জন্মদিবসের যা না ফিরিস্তি আছে। কেউ কেউ জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়। সেইসব বিতর্কিত জন্মদিবস পালন করার চেয়ে নীরব থাকা শ্রেয় নয় কী?

এমনিতে মাঝে মাঝে নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যাই। এমন চিন্তা-ভাবনা মোটেই কাক্সিক্ষত না; কিন্তু যত সমস্যা হলো সামাজিক প্ল্যাটফর্মের। দীপ্তি ঘুমের ঘোরে দিন অতিবাহিত, অর্থাৎ দিনের সাড়ে ১০টা চেতন হওয়ার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেকটা বাপের কাঁধে বন্দুক রেখে গলধঃকরণ। অবশ্য বাবা না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১৯৯৯ সালের ৪ মার্চ রাত ১টা ১৫ মিনিটে। বাবা কবিয়াল সেকান্দর মিয়ার কথা মনে এলে শুধু দীর্ঘশ্বাস আসে। আল্লাহ আমার বাবার মতো সবার বাবাকে বেহেশত নসিব করুন।

অবশ্য এখন গা-গা থাকা। বলতে হয় জন্মটাই অসার; কিন্তু অবস্থা বেঁধে এমনই অনুমেয়। হ্যাঁ, প্রভাতে সূর্য দেখে বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। কথা আছে, জীবনে যারে দাওনি মালা মরণে কেন দিতে এলে ফুল। যাক এ অভাগার জন্মদিনটাও ঘটা হয়ে প্রবাহের ক্ষণকালে। জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৬৯। ওইদিন না হয় কম করে হাজারো লোকের জন্মদিন। বিশিষ্ট ছড়াকার ও সাংবাদিক রাসেদ রউফ, কবি, শিক্ষক ও প্রকাশক শামসুদ্দিন শিশির, কবি, সাংবাদিক ও লিটলম্যাগা সম্পাদক এজাজ ইউসুফি, প্রকাশ আফসার উদ্দিন, কবি, প্রকাশক ও প্রফেসর রুহুল প্রমুখের। যা কিনা স্কুলে মাস্টার মশাইয়ের বদৌলতে। অর্থাৎ নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে আরোপিত এ জন্ম তারিখ কপালে জুটে যাওয়া। তবে আমাদের বেলায় একটু ভিন্ন আছে। বিশাল পরিবার। ১৪ জন ভাইবোন। তাহলে কী করেই দিনক্ষণ স্মরণে বা টুকে রাখে গুরুজনরা। তখনো শিক্ষার হার ছিল যৎসামান্য। বলতে হয়, উনিশ শতকের শেষার্ধে পর্যন্ত মুসলিম পরিবারগুলো শিক্ষাদীক্ষায় অনেকটা পিছিয়ে ছিল। বিংশ শতাব্দীতে এসে একটু নড়েচড়ে ওঠে। এখন ঘরে ঘরে শিক্ষিত মা-বোন। এবং জন্মের দিনক্ষণও লিপিবদ্ধ করার মতো যথেষ্ট অবস্থা আছে। সঙ্গে ঘটা করে এবং নানাভাবে পালন করা হয় জন্মদিবসও। কেউ কেউ বর্ণিল-বর্ণাঢ্যতা ছেড়ে যায় আয়োজনে।

সর্বশেষ জীবিত সাত ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম এবং চৌদ্দজনের মধ্যে এগারোতম।

যে কথা না বললে নয়, রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা উইশ করতে থাকে জন্মদিনের। অনেকে ফোন করে অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানালেন। আবার কেউ কেউ একপায়ে খাড়া- আপনি কোথায়, আসুন এবং আপনার জন্মদিবস পালন করা হবে! আমি বাবু সোজাসাপ্টা উত্তর দিই, ওইসবে আমি নেই- কেককাটা, বেলুন উড়ানো, মোম প্রজ¦ালিত করা- হ্যাঁ, বড়জোর চেরাগির মোমিনের দোকানের গরম গরম শিঙ্গাড়া, ডালপুরি, আলুর চপ খাওয়া যেতে পারে। যথাসময়ে সন্ধ্যায় মোমিন সওদাগরের দোকানে যারা উপস্থিত হলেন। তবে ঘটা করে না হলেও তিন দফা বিল পরিশোধ করতে হয়। প্রায় হাজার টাকা ধাক্কা লাগে। তবু আমার মতো অখ্যাত জনের জন্মদিন পালন করা হবে! আমি কেন, যে কেউ পুলকিত হবে। কেউ কেউ একগুচ্ছ রজনীগন্ধা-গোলাপ দিয়ে ভালোবাসায় সিক্ত করেন। অগ্রজ কবি ও প্রফেসর হোসাইন কবির, প্রাজ্ঞ রাজনৈতিক জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি প্রদীপ খাস্তগীর, তরুণ শিল্পপতি জিয়াউর রহমান, বিনোদন সাংবাদিক ও গীতিকার আশিক বন্ধু, সাংবাদিক ও সংগঠক খ ম জিয়া, সংগঠক আসিফ ইকবাল, কবি নির্লয় দে, সাংস্কৃতিক সংগঠক তুষার দে, আবৃত্তি শিল্পী মো. হামিদ, সাংবাদিক রোজিসহ অনেকে উপস্থিত থেকে কৃতার্থ করেছেন। সঙ্গে সংগঠক ও কবি শাহরিয়ার পারভেজ তার ফেজে ছবিসংবলিত উইশ করা এবং ৫৫তম জন্মদিনে অনলাইন চ্যানেল ‘চট্টল ভয়েস’ বিশেষ সাক্ষাৎ প্রচারসহ সাক্ষাৎ গ্রহণে আবৃত্তি শিল্পী ও সাংবাদিক খ ম জিয়াকে অভিবাদন। তবে শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছে না। এমনিতে চোটের ক্ষত বহন করে চলেছি। এর মধ্যে শার্টার (দরজা) ওঠাতে গিয়ে ডান পাশের কোমর বরাবর টান লেগে যায়। একটু একটু ব্যথাও অনুভব করছিল। প্রথম কয়েক দিন এভাবে চলে গেল। এর মধ্যে এক রাতে সিএনজি অটোরিকশা করে বাড়ি ফেরাকালে ঠাণ্ডা পেয়ে বসে। গায়ে যথাযথভাবে কোট, সোয়েটার ও মাফলার ছিল। তারপরও প্রচণ্ডভাবে ঠাণ্ডা পেয়ে বসে। একেবারে কনকনে ঠাণ্ডা। বিশেষ করে শীতের এ মৌসুমে কোনোভাবেই অটো-সিএনজির পেছনে সিটে বসা একদম ঠিক না। যদি বসা হয় পর্দা টেনে বসা উচিত। সিএনজির কনকনে বাতাসে নিউমোনিয়া আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য মহাবিপদ সংকেত! একেবারে নাক-মুখ ডেকে না বসলে, কোনো জারিজুরিতেও কাজ হবে না, নিশ্চিত রাতের মধ্যেই হাসপাতালে যেতে হবে। এর মধ্যে অ্যাজমাজনিত রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের জন্য মোটেই সহনীয় নয়। তাই শীতকালে, বিশেষ করে রাতে সিএনজি এড়িয়ে চলা উচিত।

দ্বিতীয় দিন মেজোবোনের বাড়িতে যাওয়া। সঙ্গে বড়বোনও রয়েছেন। মূলত একসঙ্গে যাওয়া। যাওয়ার কথা ছিল টেক্সিক্যাবে করে। কিন্তু টেক্সিক্যাবের সংকটে যেতে হয়েছে বাসে করে। তবে বাসে করে যাওয়াটা সমস্যা কিছু না। বারৈয়ারহাট থেকে করেরহাট-শুভপুর পর্যন্ত যেতে হবে অটোচালিত সিএনজি করে। পথে বাসে দেখি শীতের সোয়েটার-মাফলার আনা হয়নি। আসতে বড়বোনের বাসায় রেখে আসি। কিন্তু গায়ে যথাযথভাবে কোট রয়েছে। দুপুর ২টার দিকেও সিএনজি চড়ে যেতে গিয়ে একটু একটু ঠাণ্ডা পেয়ে বসে। এটি রাতে মালুম হয়নি। শোয়ার সময় নাক থেকে বিনা খবরে পানি ঝরতে থাকে। দ্বিতীয় দিন এটি আরো বেশি মালুম হলো ফেরার কালে। আমরা পেছনের সিটে তিন যাত্রী বসি। সেই যথাযথভাবে অটোচালিত সিএনজি। অবশ্য অটো-সিএনজি ছাড়া বিকল্প নেই। আমরা পেছনের সিটে যে-ই তিন যাত্রী বসেছি, তার মধ্যে একজন বয়োবৃদ্ধ নারী। হতদরিদ্র হবে, পোশাকে-আশাকে তা বোঝা যাচ্ছে। দ্বিতীয় জন তরুণ। যা বলতে যাচ্ছি, কতটুকু যাওয়ার পর পেছনের আমরা তিন যাত্রী সমানে খুক খুক কাশতে থাকি। তরুণ যাত্রীর কাশির হার কম হলেও বৃদ্ধ মহিলাটি দম ফেলতে পারছেন না রীতিমতো। আমি কোনোভাবেই চেপে যেতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু অটোর সামনের দুই যাত্রীর কোনো মালুমই হয়নি বা সে রকম আলামত দেখা গেল না। এটি ছিল বিষয়টির ওপর অনুসন্ধান চালানো বা গবেষণার প্রাথমিক পর্ব বলা যেতে পারে। এর শেষও আরো কয়েক পর্ব আছে। তৃতীয় দিন এ ঠাণ্ডা প্রকোপে পা পর্যন্ত বাড়াতে পারছি না। পুরো একপাশ ধরে আছে। রীতিমতো হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। ডাক্তার জানালেন, রেস্ট করতে হবে। কিন্তু দায় হলো, আমরা তৃতীয় বিশ্বের লোক, চাল নেই চুলো নেই, ধরারও দড়ি নেই। তাহলে বিশ্রামে যাওয়া হবে কোত্থেকে।

মূল যে বিষয়টি- সেটি হলো ভাগিনা সৌরভ কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে কানাডা গমন। সে রাত ১২টার দিকে বাড়ি থেকে ঢাকা এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হবে ভাগিনা। তারপর দিন ১২ জানুয়ারি দুপুর ১২টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে তাদের প্লেন ছেড়ে যাবে। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছে। সেই এক দীর্ঘ পরিক্রমা। তার মা অর্থাৎ আমার মেজোবোনের অক্লান্ত পরিশ্রম। অসহনীয় পরিবেশ ও দুঃখ-কষ্টকে সহে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো। মেজোবোনের স্বামী একজন স্কুলশিক্ষক। ছেলেদের লেখাপড়ার ব্যয় ও সংসারের ভরণপোষণের ভার বহন করা। সে কি কলুর বলদের মতো খাটুনি। তাতেও ক্লান্তি হিসেবে নেয়নি। যাক, শেষ হাসি দেখার বাসনা পূরণ হলো। অবশ্য তাতো কখনো একা সম্ভব হয় না; অর্ধাঙ্গিনীর যদি সহযোগিতার হাত না বাড়ায়। আমাকেও মাঝে মাঝে কালের সাক্ষী হয়ে থাকতে হয়। বলি একসময় না একসময়ে অধরা হাতের মুঠোয় আসবেই।

ভাগিনা তানভীর হাসান সৌরভ ২০২৩ সালে ঢাকাস্থ আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে (অনার্স) ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করে। এরপর মনোনিবেশ হয় অভিসন্দর্ভ সম্পন্ন করা। তার অভিসন্দর্ভ ছিল ‘প্লাগিমারিজম ডিটেকশন ইউসিং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’। সেটি প্রকাশিত হয় আইজেসিআইএম (ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম) জার্নালে। এরপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে আরো অধ্যয়ন। এর জন্য আমেরিকা অথবা কানাডা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার আগ্রহ ছিল। দুই দেশ থেকে ভালো রেসপন্স পায়। সর্বশেষ কানাডার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’তে দীর্ঘমেয়াদি দুই বছরের কম্পিউটার সায়েন্সের ওপর এমএসসি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করার অধ্যয়ন। এ বিশ্ববিদ্যালয় কানাডার একটি প্রদেশ-কুইবেক প্রদেশের মন্ট্রিয়াল সিটিতে অবস্থিত।

ভাগিনা তানভীর হাসান সৌরভ শিশুশ্রেণি থেকে মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছে। সে ২০১৫ সালে ছাগলনাইয়া বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি (বিজ্ঞান) ও ২০১৭ সালে ফেনী মৌলভী শামছুল করিম কলেজ থেকে এইচএসসি (বিজ্ঞান) উত্তীর্ণ হয়। ভাগিনা সৌরভরা তিন ভাই। বড়ভাই মেহেদী হাসাব শুভ ব্যাংকার, ছোটভাই মাহমুদুল হাসান গৌরব অধ্যয়নে আছে। সে ভাইদের মধ্যে মেজো। তার বাবা আব্দুল মান্নান মাস্টার একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক। মা রওশন আরা বেগম গৃহিণী এবং আমার মেজবোন। তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে আমরা আমন্ত্রিত হই। তার বড় খালা আনোয়ারা বেগম ও ছোট খালা সাজেদা বেগম এবং বড় খালার বড় মেয়ে হাসিনা আক্তার ও মেয়ে ইকরা মণিকে সঙ্গে নিয়ে সমাবেত হয় তাদের বাড়ি মিরসরাই উপজেলায় করেরহাট ইউনিয়নের জোয়ার পূর্বজোয়ার গ্রামে। দিনভর খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজব ও খুনসুটি নিয়ে মেতে থাকা। সঙ্গে ছবি সেশনও হয়। তার মায়ের মাথার ওপর তার গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির ক্যাপ পরিয়ে দেয়া; সেই এক অপরূপ ক্ষণ। যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মিঞা জামশেদ উদ্দীন : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও কবি।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App