গোপালগঞ্জে ‘বলপ্রয়োগ’ হলেও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার হয়নি: সেনাসদর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ পিএম

সেনাসদরে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন কর্নেল শফিকুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
দুই সপ্তাহ আগে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের সময় ‘জীবননাশের’ হুমকি তৈরি হলে ‘আত্মরক্ষার্থে’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘বলপ্রয়োগ’ করলেও ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার হয়নি বলে দাবি করেছে সেনাসদর।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ছিল। যেখানে শুধু ইট পাটকেল নয়, ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যখন সেখানে জীবননাশের হুমকি ছিল, তখন আত্মরক্ষার্থে আমাদের যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ছিল তারা বল প্রয়োগ করেছে বা করতে বাধ্য হয়েছে। এখানে প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়নি।
সেনাবাহিনীর তরফে সাম্প্রতিক সময়ে যৌথবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এদিনের বিফ্রিংয়ে আসেন স্টাফ কর্নেল শফিকুল।
গোপালগঞ্জে গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে পুরো শহরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে চারজন নিহত এবং অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় ‘দুষ্কৃতকারীদের’ গুলিতে মৃত্যুর কথা বলা হলেও সেদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুলি চালাতে দেখার দাবি করেছেন স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, শহরের গলির মুখে দাঁড়ানো হামলাকারীদের সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে গুলি চালানো হয়। তবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আইএসপিআর ১৭ জুলাই যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়, তাতে সেনাবাহিনীর তরফে ‘আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হওয়ার’ কথা বলেছিল; ঘটনার ১৫ দিন পর সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রায় একই ভাষ্য সেনা সদরের।
স্টাফ কর্নেল শফিকুল বলেন, গোপালগঞ্জে কী হয়েছিল, সেটার সত্যতা উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা আশা করি এই তদন্ত কমিটি সত্য এবং সঠিক ঘটানো উন্মোচনে সক্ষম হবে।
এনসিপির প্রতি সেনাবাহিনীর ‘আলাদা নজর’ থাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে বিশেষভাবে কখনো কাউকে সহায়তা করিনি। আমাদের দায়িত্বের মধ্যে কাউকে বিশেষভাবে দেখি না। গোপালগঞ্জে যেটা হয়েছে ওইখানে ওই রাজনৈতিক দলের অনেকেরই জীবন নাশের হুমকি ছিল। তাদের জীবন বাঁচানোর জন্যই সেনাবাহিনী সহায়তা করেছে। এখানে জীবন বাঁচানোই মূল লক্ষ্য ছিল অন্য কিছু না।
স্টাফ কর্নেল শফিকুল বলেন, আমরা আসলে বিশেষ কোনো দলের ক্ষেত্রে আমাদের আলাদা নজর নেই। আমরা দায়িত্ব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সকলেই আমাদের কাছে সমান। যেখানে জনদুর্ভোগ ও জীবননাশের হুমকি থাকে সেখানে আমরা কঠোর হই বা জনসাধারণকে সহায়তা করে থাকি। সেখানে আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করতাম তাহলে তাহলে সেখানে আরও হতাহত বা জীবননাশের সম্ভাবনা থাকত।
গোপালগঞ্জে সহিংসতার বিষয়ে সেনাবাহিনীর কাছে অগ্রিম তথ্য ছিল কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দল কোথায় তাদের সভা করবে এটার ছাড়পত্র নিতে হয় স্থানীয় প্রশাসন থেকে। তাই সে বিষয়ে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ অবগত থাকলেও সেনাবাহিনীর কাছে কোনো ‘কোনো তথ্য ছিল না’।
‘মেজর সাদিক নামে একজন আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে’, এমন একটি বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্টাফ কর্নেল শফিকুল বলেন, মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে বলতে পারব বিষয়টি পুরোপুরিভাবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৫৭৬ জনকে সেনাবাহিনীর গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, চাঁদাবাজ বা এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইনশৃঙ্খলা এজেন্সিগুলো যাদের সর্বাগ্রে দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা যদি কার্যকর হয় তাহলে আরও কমে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সাথে সাথে আমাদের যে অভিযানিক দায়িত্ব রয়েছে সেটা আমরা সর্বদা পালন করছি।
স্টাফ কর্নেল শফিকুল বলেন, সেনাবাহিনীর যে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। সেই ধারাগুলো আমরা শুধু তল্লাশি এবং অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারি। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার পর বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করার পর আসলে আমাদের আর কিছু করার থাকে না। যারা সর্বাগ্রে কাজ করার কথা তাদেরকে আরও কার্যকর হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কথা বলেন সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।