সম্পাদকীয়
গ্যাস সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আগে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা গেলেও বর্তমানে রাজধানীজুড়েই দেখা দিয়েছে ভয়াবহ গ্যাস সংকট। তীব্র গ্যাস সংকটে নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন। গ্যাস সংকটের কারণে অনেক শিল্প-কারখানার কাজ দিনে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বাসাবাড়ি, সিএনজি স্টেশন, পেট্রোল পাম্প- সর্বত্রই একই অবস্থা। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছে। শিল্পে উৎপাদন তলানিতে ঠেকেছে। মাঝরাতে ঘুমের পরিবর্তে চলছে রান্না-খাওয়া। সকালে নাস্তার জন্য রেস্টুরেন্টই এখন অনেকের ভরসা। দুপুরের খাবার আগের রাতেই রান্না করে রাখতে হয়। রাজধানীর মধ্যাঞ্চল বাদে বাকি প্রায় এলাকাতেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু গ্যাস সমস্যার সমাধানে সুখবর দিতে পারছে না জ^ালানি মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা ও তিতাস। একদিকে গ্যাস সংকট ও অন্যদিকে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়াতে সরকারের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২৫০ কোটি ঘনফুট। এ অবস্থায় ১৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। মূলত এ কারণেই গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখানে যদি ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যেত তাহলেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। সহজেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী কয়েক মাসে সুখবর আসবে, এমন নিশ্চয়তাও খোদ জ্বালানি উপদেষ্টা বা জ্বালানি সচিব দিতে পারছেন না। এদিকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী অঞ্চলের কারখানাগুলোর ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। গ্যাসনির্ভর গার্মেন্টস, সিরামিক, ইস্পাত ও টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। রাজধানীর সিএনজি ফিলিং স্টেশনে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। কোনো কোনো ফিলিং স্টেশন বন্ধও করে রাখা হয়। এখনো দেশীয় উৎস থেকে উৎপাদিত গ্যাস দিয়েই চাহিদার ৭৫ শতাংশ পূরণ হয়। বাকি ২৫ শতাংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে পূরণ করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতেও সংকট চলছে। পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন গড়ে ২৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। এর মধ্যে আমদানি এলএনজি থেকে পাওয়া যায় গড়ে ৮৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জানান, গ্যাস সমস্যা সমাধানে আমরা এলএনজি আমদানি অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছি। অন্তর্বর্তী সরকার নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ১৫০টি গ্যাসকূপ খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে না পারলে গ্যাস সংকটের কোনো সমাধান মিলবে না। আগামী দিনগুলোয় গ্যাসের সংকট আরো বাড়বে। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে গুরুত্ব দিতে হবে। পুরনো ও পরিত্যক্ত গ্যাসকূপগুলোর ওপর মনোযোগ দিতে হবে। সিস্টেম লস কমিয়েও গ্যাস সরবরাহ সাশ্রয় করা যেতে পারে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানির পরিমাণও প্রয়োজনমাফিক বাড়াতে হবে। সরকার দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।