দেশে গত বছর আত্মহত্যা করেছে ৩১০ জন শিক্ষার্থী

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাগজ প্রতিবেদক : গত বছর দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেন কিশোর-কিশোরীরা- যা মোট আত্মহত্যার ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর লিঙ্গ ভিত্তিক বিশ্লেষণে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন মেয়ে শিক্ষার্থীরা, এ হার ৬১ শতাংশ। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা : সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ওই সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার স্তর অনুযায়ী আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে, ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। গতকাল শনিবার ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪ সালের আত্মহননের এই চিত্র তুলে ধরেছেন সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্য ফারজানা আক্তার লাবনী। দেশের ১০৫টি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে আঁচল ফাউন্ডেশন এ সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ ও আইনজীবী নওফেল জামির, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৩২। সে তুলনায় গত বছর আত্মহননের ঘটনা কম ঘটার তথ্য মিলেছে। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার খবর হয়তো গণমাধ্যমে কম এসেছে বলে তারা ধারণা করছে। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনিতার ওপর জোর দেন বক্তারা। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহায়তার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোরও আহ্বান জানানো হয়।
সংগঠনের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ছিল স্কুলগামীদের মধ্যে, এ হার ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কলেজ পর্যায়ে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। মাদ্রাসা শিক্ষার্থী
ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ছিল ৬ থেকে ১২ বছর বয়সি ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সি ৪৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আর শিক্ষার স্তর অনুযায়ী, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ ও স্নাতক পর্যায়ের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, ডিপ্লোমা পর্যায়ের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং সদ্য পড়ালেখা শেষ করা বেকার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
আঁচল ফাউন্ডেশনের এ সমীক্ষা বলছে, গত বছর সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনার তথ্য পাওয়া যায় ঢাকা বিভাগে, ২৯ শতাংশ। তারপরে খুলনায় ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, রাজশাহী ও বরিশালে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ করে, রংপুরে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ২ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার কারণ প্রসঙ্গে সংগঠনের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন অভিমান করে, এ হার ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রেমের সম্পর্কের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাধ্যমিকে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কলেজ পর্যায়ে ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন। পড়ালেখার চাপে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। তাদের মধ্যে ছিল স্কুল পর্যায়ে ৫৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, কলেজ পর্যায়ে ২৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন মানসিক অস্থিরতার কারণে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনতে আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করা হয়।