সিলেটের জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিন

সাকিবুল হাছান
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সিলেটের জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। বর্ষা মৌসুম এলেই সিলেটে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। সিলেটের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্যতম বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাটসহ অনেক এলাকা। এলাকাগুলোতে দুই-তিন ফুট পর্যন্ত পানি ওঠে। কিন্তু এই পানি নেমে যেতে তিন থেকে চার দিন আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসখানেকও লেগে যায়। যার ফলে রাস্তাঘাটে মানুষ এবং যানবাহন চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
গত ২৭ মে থেকে সিলেটে আগাম বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহব্যাপী চলমান এ বন্যায় আক্রান্ত হয় প্রায় ১২টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার আগেই সিলেটে আবারো দেখা দিয়েছে বন্যা।
সিলেটে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আাসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আবারো বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সিলেটের অন্তত ৪টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে তলিয়ে যায়। ৪টি উপজেলা হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনগাট, কানাইঘাট ও ওসমানীনগর। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে দুটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে যদি এভাবে বৃষ্টিপাত অবিরাম চলতেই থাকে, তাহলে সিলেটের অবস্থা খুবই ভয়াবহ হতে পারে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে যদি প্রতিদিন ২০০ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হয় তা হলে সিলেটে বড় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেটের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে বিশেষ করে সুরমা, কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, সিলেট মহানগর ও তার আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জলাশয় পুকুর, দীঘি, খাল-বিল, ছড়া ইত্যাদি ভরাট হয়ে যাওয়া ও দখল হওয়া এবং সিলেটের উজানে মেঘালয়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ইত্যাদির কারণেই সৃষ্টি হয় পাহাড়ি ঢল এবং পরে বন্যা এবং শহরে জলজট। সিলেটের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খালগুলো অবৈধ দখল ও কঠিন বর্জ্যে ভরাট হয়ে আছে। সিলেট নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক সুয়ারেজ লাইন দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারছে না। ড্রেনেজ সিস্টেমেও সমস্যা রয়েছে। যেখানে সহজেই পানির সঙ্গে বিভিন্ন বর্জ্য যেমন- পলিথিন এবং অন্যান্য অপচনশীল পদার্থ ভেসে গিয়ে নালার মধ্যে আটকে যায়, ফলে পানি সহজে নিষ্কাশন হতে পারে না, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার।
গত তিন দশকে ভরাট হয়ে গেছে সিলেট নগরীর অর্ধশতাধিক দীঘি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ১৫/২০ বছর আগেও সিলেট শহরে অর্ধশতাধিক বড় দীঘি ছিল। কিন্তু এখন টিকে আছে ১০/১১টি মাত্র। বাকিগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সিলেটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি প্রাকৃতিক খাল। পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে খালগুলো মিশেছে সুরমা নদীতে। এসব খাল দিয়েই বর্ষায় পানি নিষ্কাশন হতো। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না।
এখন এসব খালের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। অনেক ছিন্নমস্তক মানুষ থাকে যাদের নিজস্ব বাড়িঘর নেই। রাত হলে তাড়া আশ্রয় নেয় শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তারা সেই আশ্রয়টুকুও হারান। আবার পথচারী থেকে শুরু করে ছোট আকারের যানবাহন প্রায়ই গর্তে পড়ে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। অনেক সময় মারাত্মক আহত হতে হয়। তাই সিলেট শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এটি ভেবে বসে থাকলে এর ফল হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেটকে বন্যামুক্ত রাখতে হলে সুরমা নদীর খনন এবং দুই পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করে বন্যা রোধ করা সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি নিজে সতর্ক হতে হবে এবং অন্যকেও এই বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। তাহলে সিলেট শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
সাকিবুল হাছান : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।