বাণিজ্য চুক্তির ফ্রেমওয়ার্কে একমত যুক্তরাষ্ট্র–চীন
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং। ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামোতে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। চলতি সপ্তাহেই দেশ দুটির শীর্ষ নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিং এই চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসবেন।
সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেসেন্ট বলেন, প্রাথমিক সমঝোতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রম এবং চীনের বিরল খনিজ রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ স্থগিতের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি জানান, ট্রাম্পের চীনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি কার্যকর হবে এটি তিনি ভাবেননি। কারণ চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সয়াবিন আমদানি করতে যাচ্ছে।
শুল্ক উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের উদ্যোগ
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি অর্থনীতি চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তেজনা এড়াতে সচেষ্ট। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প ও শি জিনপিং বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। বেসেন্ট বলেন, দুই দেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেমওয়ার্কে পৌঁছেছে। শুল্ক আরোপ এড়িয়ে যাওয়া হবে।
চীনা সরকারও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই দেশের আলোচক দল তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে একটি মৌলিক সমঝোতায় পৌঁছেছে এবং বিস্তারিত বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন, যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন, এই নীতি দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াবে। তার এই পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশ নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তবে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল চীন, যার ওপর তিনি সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। জবাবে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, যদিও বর্তমানে উভয় দেশই শুল্ক কার্যকর করা থেকে বিরত থাকতে সম্মত হয়েছে।
ট্রাম্প সতর্ক করে জানিয়েছেন, চীন যদি বিরল খনিজ রপ্তানিতে আরো কড়াকড়ি আরোপ করে, তবে তিনি নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক বসাবেন। তিনি বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে “বিশ্বকে জিম্মি করার চেষ্টা” করার অভিযোগও এনেছেন।
বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাত করে চীন, যা স্মার্টফোন, সোলার প্যানেলসহ নানা প্রযুক্তি পণ্যে অপরিহার্য। ট্রাম্পের আগের শুল্ক সিদ্ধান্তের পর চীন এই খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল, ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলোর মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়।
অন্যদিকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সয়াবিন ক্রেতা, কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর তারা আগের সব ক্রয় আদেশ বাতিল করে দেয়। ফলে মার্কিন কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ে।
বেসেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই পরিস্থিতি শিগগিরই সমাধানের পথে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি নিজে একজন সয়াবিন কৃষক, তাই কৃষকদের কষ্ট আমি বুঝি। আমার বিশ্বাস, চুক্তি ঘোষণার পর সয়াবিন চাষিরা স্বস্তি পাবেন।
টিকটক চুক্তি নিয়েও অগ্রগতি
বেসেন্ট আরো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের কার্যক্রম নিয়েও দুই দেশ সমঝোতায় পৌঁছেছে। জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চীনা মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স-এর কাছ থেকে টিকটকের মার্কিন কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
আগে টিকটককে জানানো হয়েছিল, তাদের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রি না করলে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। তবে আলোচনার স্বার্থে ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময়সীমা চারবার পেছিয়ে সর্বশেষ তিনি ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছেন।
হোয়াইট হাউজ ঘোষণা দিয়েছে, টিকটকের অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণ করবে আমেরিকান কোম্পানিগুলো এবং এর মার্কিন পরিচালনা বোর্ডের সাত সদস্যের মধ্যে ছয়জন আমেরিকান নাগরিক হবেন। প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প টিকটক নিষিদ্ধের হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে অবস্থান বদলান। বিশেষত ২০২৪ সালের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তিনি টিকটক ব্যবহার করেন।
এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাণিজ্য চুক্তি
রোববার যুক্তরাষ্ট্র মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছে, পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এশিয়া সফরের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি দেশের প্রতি আমাদের বার্তা হলো—যুক্তরাষ্ট্র আপনাদের পাশে আছে এবং আমরা দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব চাই।
থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার ফলে চীনের বাইরে থেকেও যুক্তরাষ্ট্র বিরল খনিজে প্রবেশাধিকার পেয়েছে। একইসঙ্গে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে “নজিরবিহীন বাণিজ্য প্রবেশাধিকার ফ্রেমওয়ার্কে” সম্মত হয়েছে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের বোয়িং বিমান ও কৃষিপণ্য ক্রয় করবে।
