×

ব্যাংক

অর্থনীতি

ছোট আমানত ব্যাংকমুখী, সরে যাচ্ছেন অতি ধনীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৪ পিএম

ছোট আমানত ব্যাংকমুখী, সরে যাচ্ছেন অতি ধনীরা

ছবি : সংগৃহীত

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবাহের চিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন বড় অঙ্কের আমানতের ওপর ভর করে থাকা ব্যাংকগুলোতে ভিড় বাড়ছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের। বিপরীতে সরে যাচ্ছেন বড় অঙ্কের আমানতধারীরা।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নীতিগত পরিবেশের পরিবর্তন ধনী গোষ্ঠীর আচরণে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অনেকেই আবার মনে করছেন, অতি ধনীদের ব্যাংক থেকে সরে যাওয়া বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। কারণ, বড় অঙ্কের আমানতই ব্যাংকের শক্তিশালী তারল্যভিত্তি তৈরি করে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত এক বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতধারীর ব্যক্তিগত হিসাবের সংখ্যা ৭২টি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৬টিতে। একই সময় ২৫ থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাবও ১৫১টি থেকে কমে হয়েছে ৭৮টি। 

বিপরীতে ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৪টি, যা গত জুনে বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯ হাজার ৪৫৫টিতে। আর আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনে ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এদিকে, অতি ধনীদের হিসাব কমলেও গত এক বছরে সার্বিকভাবে ব্যক্তি কোটিপতি আমানতকারীর বেড়েছে প্রায় আড়াই হাজার। একই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীও বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তনের পর বিপুল অঙ্কের অর্থধারীদের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাংক থেকে তাদের হিসাব গুটিয়ে নিয়েছে, যা ব্যাংকপাড়ায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠীর অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের কেউ কেউ জবাবদিহিতা, তদন্ত বা খাত-সংক্রান্ত কঠোরতা মোকাবিলা না করতে গুটিয়ে ফেলছেন ব্যাংক হিসাব। আবার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে অনেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বড় অঙ্কের সম্পদধারীরা বরাবরই রাজনৈতিক ও নীতিগত পরিবেশের বিষয়ে অধিক সংবেদনশীল। তাই পরিবেশ পরিবর্তনের পর তাদের মধ্যে নিরাপদ গন্তব্যে অর্থ স্থানান্তরের প্রবণতা বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ব্যাংক খাতে বড় অঙ্কের আমানত হিসাব কমার ক্ষেত্রে এমনটি ঘটার সম্ভাবনাই বেশি।

স¤প্রতি ‘ব্যাংকিং সেক্টর আপডেট’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে প্রথমবার ব্যক্তি আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাব এবং তাদের জমানো অর্থের পরিমাণ তুলে ধরা হয়। এর বাইরে, এতদিন তিন মাস পর পর ‘শিডিউল ব্যাংক স্টাটিস্টিকস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের হিসাব ও আমানতের পরিমাণ একত্রে প্রকাশ করা হয়।

ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সুদ হার ও মূল্যস্ফীতির কারণে অতি ধনী ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে তেমন বড় লাভ পাচ্ছেন না। খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় তারা ঝুঁকি মনে করছে এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ খাত যেমন রিয়েল এস্টেট, বিদেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা প্রসার করা ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করছে। তাছাড়া নি¤œ মধ্যবিত্তের সাধারণত নিরাপত্তা, সরকারি ভাতা প্রাপ্তি, ডিজিটাল লেনদেন এসকল কারণে বাড়তে পারে।

দেশের কোটিপতির সঠিক সংখ্যা কত তা জানা না থাকলেও ব্যাংক আমানতের তথ্য থেকে একটি আনুমানিক ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিবেদনে শুধুমাত্র সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে। এর বাইরে আরো অনেকেই আছেন, যাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, কিন্তু যাদের তথ্য এ প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। 

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত জুন পর্যন্ত দেশে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে- এমন হিসাবের সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি। ফলে গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে ৮ হাজার ৫৫২টি। এর মধ্যে ব্যক্তি কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়েছে ২ হাজার ৫৫৫টি।

গত জুন শেষে ব্যক্তি আমানতকারী ব্যাংক হিসাব দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩৬টি। আর প্রতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৩০০টি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতধারীর হিসাব ছিল ৭২টি। ওই সময়ে এসব হিসাবে মোট আমানত ছিল ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো। এক বছরের ব্যবধানে হিসাব সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২৬টিতে এবং আমানত পরিমাণও কমে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় নেমেছে।

অন্যদিকে ২০২৪ সালের জুনে ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার মধ্যে আমানতধারীর হিসাব ছিল ১৫১টি। ওই সময়ে এসব হিসাবে মোট আমানত ছিল ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই হিসাব সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৭৮টিতে এবং আমানতের পরিমাণও কমে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এমন পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, বড় আমানতকারীদের একাংশ ব্যাংকিং খাত থেকে তাদের অর্থ তুলে নিচ্ছেন।

ব্যক্তি খাতে বড় অঙ্কের আমানত হিসাব কমলেও অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি আকারের আমানত হিসাব বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে- শূন্য থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত, ২ লাখ ১ টাকা থেকে ২৫ লাখ এবং ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ পর্যন্ত আমানতধারীর হিসাব এক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছরের জুনে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর হিসাব ছিল ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮টি; আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

গত জুন শেষে তাদের ব্যাংক হিসাব বেড়ে হয়েছে ১৪ কোটি ৭৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫৬টি; আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

গত জুন শেষে ২ লাখ ১ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকার আমানত হিসাব বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫২টি, যা গত বছরের জুনে ছিল ৮৮ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৪টি। এসব হিসাবে গত জুনে আমানত বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনে ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

গত বছরের জুনে ২৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৭৪টি, যা গত জুনে বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯ হাজার ৪৫৫টি। আর আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনে ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

গত জুন শেষে ৫০ লাখ ১ কোটি থেকে ১ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৯টি, যা গত বছরের জুনে ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৪৬টি। এসব হিসাবে গত জুন শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনে ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

গত বছরের জুন শেষে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটি টাকার আমানত হিসাব ছিল ৩৪ হাজার ২৫৮টি, যা গত জুনে বেড়ে হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৩২টি। এসব হিসাবে গত জুন শেষে আমানত দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের জুনে ছিল ৮০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এটি ইঙ্গিত করে যে, দেশে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত সঞ্চয় শ্রেণির উত্থান ঘটছে এবং তাদের ব্যাংকিং খাতে অংশগ্রহণ বাড়ছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষক মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ব্যাংক খাতে সার্বিকভাবে অস্থিরতা বিরাজ করছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সুদ হার ও মূল্যস্ফীতির কারণে অতি ধনী ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে তেমন বড় লাভ পাচ্ছেন না। খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় তারা ঝুঁকি মনে করছে এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ খাত যেমন রিয়েল এস্টেট, বিদেশে বিনিয়োগ, ব্যবসা প্রসার করা ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করছে। তাছাড়া নিম্ন মধ্যবিত্তের সাধারণত নিরাপত্তা, সরকারি ভাতা প্রাপ্তি, ডিজিটাল লেনদেন এসব কারণে বাড়তে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ঈশ্বরদীতে ৮ কুকুরছানা হত্যার মামলায় নিশি রহমান গ্রেপ্তার

ঈশ্বরদীতে ৮ কুকুরছানা হত্যার মামলায় নিশি রহমান গ্রেপ্তার

রাজনীতি: দুই ‘মিত্রের’ ভোটের টক্কর

রাজনীতি: দুই ‘মিত্রের’ ভোটের টক্কর

ছোট আমানত ব্যাংকমুখী, সরে যাচ্ছেন অতি ধনীরা

অর্থনীতি ছোট আমানত ব্যাংকমুখী, সরে যাচ্ছেন অতি ধনীরা

বিবাহবার্ষিকীতে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা নিকের

বিবাহবার্ষিকীতে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে আবেগঘন বার্তা নিকের

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App