ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম

ফেনীতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ছবি : সংগৃহীত
টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেনী জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে প্রতিদিনই। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত জেলার তিন নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে গেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর চারটি জায়গায় ভাঙনের ফলে ১০০টিরও বেশি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
দুই উপজেলার অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি, মিটার ও ট্রান্সফরমার ডুবে যাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রায় ৩১ হাজার ২০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বানভাসি মানুষদের জন্য।
ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তীব্র স্রোতে হু-হু করে পানি ঢুকে পড়ছে। একাধিক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। এতে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
আরো পড়ুন : ফেনীতে প্রস্তুত ১৩১ আশ্রয়কেন্দ্র, চালু কন্ট্রোল রুম
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার কিছু অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার ৮২৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গত এলাকায় ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মিলে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে প্রায় ২০ হাজার মানুষ এই বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় সাত হাজার মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য জেলার ছয় উপজেলায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ফুলগাজীর ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করেছেন, নদীর পানি কিছুটা কমলেও বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তীব্র স্রোতে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। অনেকেই গলা সমান পানিতে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক না থাকায় তাদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। তারা জানিয়েছেন, অনেক জায়গায় এখনো খাবার বা প্রশাসনিক সহায়তা পৌঁছায়নি।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, জেলায় গত তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি কিছুটা কমলেও ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমে গেলে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবল চাকমা বলেন, মাঠ পর্যায়ে থেকে দুর্গত মানুষের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।