মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা হজম করতে পারলেন না প্রধান শিক্ষক

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
দৈনিক ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নত আলী উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বাড়তি টাকা হজম করতে না পেরে ফেরত দিয়েছেন বলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নত আলী পরিক্ষার ফিসসহ টাকা আদায়ের রশিদে বিবিধখাত উল্লেখ করে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে আদায় করেছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার "উপবৃত্তিপ্রাপ্তদের গুনতে হচ্ছে হাজার টাকা" শিরোনামে দৈনিক ভোরের কাগজে একটি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নত আলী সহকারী শ্রেণি শিক্ষকদের মাধ্যমে টাকা আদায়ের রশিদে টাকার পরিমাণ কাটছাঁট করে শিক্ষার্থীদের ৪শ টাকা করে ফেরত দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এরকম বাড়তি টাকা শুধু এ তারিখেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়নি। প্রতিনিয়ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু ইতোপূর্বে এ বিষয়ে জোরালো কোনও সংবাদ প্রকাশিত না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ওই টাকা হজম করে ফেলেছেন। এ তারিখেও এ বিষয় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত না হলে নিঃশব্দে এই টাকা গিলে ফেলতেন তিনি। কিন্তু ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা স্যারের পেটে হজম না হয়ে উল্টো বদহজম হয়েছে।
তারা বলেন, এ স্কুলের বিভিন্ন অনিয়মিত ও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য অনেকবার অনেক সাংবাদিকই এসেছিলেন। কিন্তু পরিশেষে সে সংবাদ পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হয়নি। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক ভোরের কাগজের মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সুরেশ চন্দ্র রায়কে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং প্রথম সারির জনপ্রিয় দৈনিক ভোরের কাগজের উত্তরোত্তর সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। এই সাংবাদিক ও ভোরের কাগজ এভাবেই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
স্থানীয় কতিপয় সচেতন অভিভাবক বলেন, সরকার ঘোষিত পরিপত্রে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনওভাবেই টিউশন ফি আদায় করা যাবে না। তাই এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নত আলী ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রশিদ বইতে বেতন বা টিউশন ফি না লিখে সুকৌশলে পরিক্ষার ফিস বাবদ ৪০০ টাকা, উন্নয়ন/বিদ্যুৎ বিল ১৮০ এবং বিবিধ বিল ৪২০ টাকাসহ মোট ১০০০ টাকা আদায় করেছিলেন। আর উপবৃত্তিবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন।
তারা বলেন, গত এসএসসি পরিক্ষার সময়ও ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেছেন। ওই সময় কিছু শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়ার ভয় দেখিয়েছিলেন তাদের। এ তারিখে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা ফেরত দিয়েছেন। প্রতিটি মানুষেরই টাকার প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যেভাবে টাকা নেয়া উপার্জন শুরু করেছেন, তা আসলেই প্রশ্নবিদ্ধ।
অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষকতা একটি সম্মানিত পেশা। এ কারণেই অভিভাবকরা এতদিন তার পেশাকে সম্মান দেখিয়ে চুপচাপ ছিলেন। প্রধান শিক্ষক যদি এরপরও সংশোধন না হন তাহলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা তাকে আর ছাড় দেবেন না। কারণ, তার হাঁড়ির খবর এলাকাবাসীর অজানা নয়। তিনি আগে কোথায় শিক্ষকতা করেছেন, তার পূর্বের আমলনামা এবং কিভাবে এই বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন সেটি এলাকার সচেতন মহল অবগত আছেন।
মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান শিক্ষক জিন্নত আলী নিজেকে বহুত বড় কিছু মনে করেন। আসলে তিনি নিজের গণ্ডি সম্পর্কে অবগত নন। সামাজিকতা বলতে যা বোঝায় তার বিন্দুমাত্রও এই ব্যক্তির মধ্যে নেই। উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা না নিতে তাকে সহকারী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কারো কথা কর্ণপাত করেননি। কিন্তু ভোরের কাগজে এ মর্মে সংবাদ প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বাড়তি টাকা ফেরত দিয়েছেন। এখন তার মানসম্মান বাড়লো না কমলো? এই বোধশক্তি মূলতঃ তার নেই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিন্নত আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা ফেরত দিয়েই কী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ও জবাবদিহি শেষ নাকি তার বিষয়ে আরো কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতেই মূলতঃ শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পদাধিকার বলে মহাদেবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. জাকির হোসেনকে একাধিকবার ফোন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমীর হোসেন দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনেক যুক্তি দাঁড় করাতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ৪০০ টাকা করে ফেরত দিয়েছেন। এই টাকা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়ায় এটিই প্রতীয়মান হয়েছে তিনি অতিরিক্ত টাকা নিয়েছিলেন। এটি অবশ্যই একটি অপরাধ। তিনি এই অপরাধ কেন করলেন-এ মর্মে তাকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। সন্তোষজনক কারণ দর্শাতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।