অন্যায় করে ফেলছি, ভাই মাফ করা যায় না? ঘুষ নেওয়ার পর ওসি লিটন

হারিছ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৭ এএম

কিশোরগঞ্জের রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লিটন মিয়া
কিশোরগঞ্জের রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বসতবাড়ির রেইনট্রি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে এক সাধারণ পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার এই অভিযোগে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। পরে সাংবাদিক ওসি লিটন মিয়ার মোবাইলে কল দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই অন্যায় করে ফেলেছি মাফ করা যায় না? আসেন এক সাথে বসে আলোচনা করে শেষ করে ফেলি।
ঘটনার সূত্রপাত ১৭ জুন, মঙ্গলবার। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. রতন মিয়ার বসতভিটার রেইনট্রি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে রেলওয়ে থানায় অভিযোগ যায়। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পিডব্লিউ) আনিসুজ্জামান রাজন এ বিষয়ে রেলওয়ে থানার ওসি লিটন মিয়াকে জানান। এরপর ঘটনাস্থলে যায় এএসআই পারভেজ ও কনস্টেবল রুবেল মিয়া। পুলিশ গাছ কাটা বন্ধ করে গাছ ও ট্রলি রতন মিয়ার জামাই দ্বীন ইসলামের জিম্মায় রেখে যায়।
ভুক্তভোগী দ্বীন ইসলাম জানান, পরদিন তিনি অসুস্থ শাশুড়ি কমলা আক্তারকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানায় যান। সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বিকেলে ওসি লিটন থানায় আসেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ওসি বলেন, রেলওয়ের মামলা বুঝেন? বাড়িঘর বিক্রি করেও শেষ করতে পারবেন না। এরপর সঙ্গে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। শেষে ৫ হাজার টাকা দিলে ওসি ফোন করে জানান, গাছ কাটতে আর সমস্যা নেই।
রতন মিয়ার স্ত্রী কমলা আক্তার বলেন, আমি হাত ভাঙা অবস্থায় থানায় যাই। ওসি স্যার আমাদের হুমকি দিয়ে টাকা চান। আমি তিন হাজার টাকা দিলে বলেন, হবে না। পরে মেয়ের জামাই আরও দুই হাজার টাকা এনে দিলে মোট ৫ হাজার দিয়ে ফিরে আসি।
অন্যদিকে, রেলওয়ের পিডব্লিউ রাজন বলেন, আমি কেবল বিষয়টি জানিয়েছি। পরে কী হয়েছে, আমি জানি না। কেউ আমার নাম ভাঙিয়ে কিছু করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি লিটন মিয়া প্রথমে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে, কথা বলতে পারব না। পরে অবশ্য তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কমলা বা তার মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে আমার কোনো লেনদেন হয়নি। আমি শুধু গাছ কাটার বিষয়ে পুলিশ পাঠিয়েছি। তাদের বলেছি, এটা আমাদের বিষয় না, পিডব্লিউ-আইডব্লিউ এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কিছুক্ষণ পর কল দিয়ে ভুল হয়েছে ভাই মাফ করা যায় না? আসেন একসাথে বসে আলোচনা করে শেষ করে ফেলি, আমার ইজ্জতটা শেষ করবেন না ভাই।
তবে অভিযোগকারীদের বক্তব্য ও ঘটনাপ্রবাহ ওসির বক্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন—‘রেলওয়ের জায়গা নয়, পৈত্রিক বসতবাড়ির গাছ কাটা নিয়েও যদি পুলিশ ঘুষ দাবি করে, তাহলে সাধারণ মানুষের ভরসা কোথায়?’
ঘুষের বিনিময়ে আইনি সহায়তা বিক্রির অভিযোগে ওসি লিটনের ভূমিকা নিয়ে এখন তদন্ত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ দাবি করছে এলাকাবাসী।