ভুক্তভোগী ও উত্তেজিত জনতার হাতে সংঘবদ্ধ পিটুনির শিকার হয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) বরখাস্ত হওয়া আলোচিত উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব হাসান। তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষকেও আটক করে চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) মধ্যরাতে রাজশাহী নগরের হাজির মোড় এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর সংঘবদ্ধভাবে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাহবুব হাসান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে দলীয় প্রভাবে তিনি পুলিশে চাকরি পান এবং আরএমপির গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) পোস্টিং নেন। এসময় বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও শিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও পঙ্গু করেন মাহবুব হাসান। তবে শুধু রাজনৈতিক বিরোধীরাই নয়, সাধারণ মানুষও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, চাঁদাবাজি এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মাহবুব হাসানের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর এসআই মাহবুব হাসান সাদা পোশাকে নগরের শিমলাবাগান এলাকা থেকে রাজীব আলী রাতুল (৩১) নামের এক যুবককে তুলে নিয়ে যান। এরপর রাজীবের বাবাকে ফোন করে জানানো হয়, তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা না দিলে ছেলেকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। ভয়ে শিমলাবাগানে গিয়ে মাহবুব হাসানের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন বাবা মাসুদ রানা। এসময় মাহবুব হাসান রাজীবের বাবাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন এবং রাজীবকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরদিন রাজীবকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

দীর্ঘ ১৬ মাস কারাভোগ করার পর জামিন পান রাজীব। এর এক মাস আগে নগরের রেলগেট এলাকায় মাহবুব হাসানের সঙ্গে দেখা হলে তিনি টাকা ফেরত চান। তখন মাহবুব হাসান মারমুখী আচরণ করে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করেছেন। টাকা চাইলে মেরে ফেলা হবে বলে ভুক্তভোগীকে ভয় দেখান। এছাড়া গত বছর গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীতে দুজন শহীদ হন—আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম। ডিবির বরখাস্ত হওয়া এসআই মাহবুব হাসান দুটি হত্যা মামলারও আসামি।