চলচ্চিত্রের আকাশে অমর নক্ষত্র নায়করাজ রাজ্জাক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৪ এএম

নায়করাজ রাজ্জাক। ছবি : সংগৃহীত
নায়করাজ রাজ্জাকের কখনও মৃত্যু হয় না, কথাটির ভেতরে একেবারেই কোনো মিথ্যা নেই। কারণ, চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে, রাজ্জাকও বেঁচে থাকবেন রুপালি পর্দায়। ১৯৬৪ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। ছিলেন সামাজিক সিনেমার সর্বজনপ্রিয় অভিনেতা, ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অনুকরণীয় রোল মডেল।
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়ে তিনি বিদায় নিলেন এই পৃথিবী থেকে। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আকাশ থেকে ঝরে পড়ে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তবে তিনি নেই, তবু রয়েছেন তার অগণিত সিনেমার চরিত্রে, যা আজও দর্শকদের আপ্লুত করে।
পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো নায়করাজের শেষ জীবনের কিছু স্মৃতিচারণা ও বক্তব্য।
নায়ক হওয়ার গল্প
রাজ্জাক স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, আমার আগে যারা নায়ক হিসেবে অভিনয় করতেন, সবাই ছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব। আনোয়ার হোসেন ভাই, খলিল ভাই, শওকত আকবর ভাই, তাদের কলেজপড়ুয়া রোমান্টিক হিরো হিসেবে দর্শক মানতে পারছিল না। আমি যখন এলাম, রোগা-পাতলা এক যুবক। অনেকেই বিরক্ত হয়ে অফিস থেকে চলে যেতে বলত। পরে সেই পরিচালকরাই আমাকে দিয়ে ছবি করেছেন।
নায়ক রাজ বলেন, আমার চেহারা ফটোজেনিক ছিল। যদিও খুব রোগা-পাতলা ছিলাম, কিন্তু দর্শক আমাকে রোমান্টিক হিরো হিসেবে লুফে নিল। এটাই ছিল আমার জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
ইমেজ ভাঙা ও সময়ের দাবি
তিনি বলেন, যুদ্ধের পর দেখলাম দেশের যুবকদের মধ্যে অস্থিরতা। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের ইমেজটাকে ভেঙে নতুন করে দাঁড় করাব। ‘রংবাজ’ করলাম। সমাজের অবহেলিত যুবকের অস্থিরতা ও সমাধানের গল্পে ছবি সুপারহিট হলো। এরপর ‘বেঈমান’ করলাম, সেটিও সুপারহিট। একজন হিরোকে বুঝতে হয় সময় কী চাইছে। আমি সেটাই করেছি।
নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা
রাজ্জাক জানান, সব সময় চাইতাম ইন্ডাস্ট্রি যেন শূন্যতায় না ভোগে। তাই পরিচালক-প্রযোজকদের পরামর্শ দিলাম নতুন নায়ক আনতে। আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা সবাই আমার হাত ধরে এলো। তাদের সঙ্গে আমার নায়িকারাই নায়িকা হলো। কবরী, ববিতা, শাবানা, রোজিনা সবার সঙ্গেই ওরা সফল হলো। ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে শূন্যতা আসেনি। আমার পর জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চনরা এসে শক্তভাবে হাল ধরল।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, দুঃখের কথা হলো, জনপ্রিয় নায়ক থাকা সত্ত্বেও প্রথম দিকে ‘চিত্রালি’র সাংবাদিক এসে বলেছিল, আমার স্টোরি শুধু ব্যাক পেজে ছাপাবে। অথচ এখন? কোনো অভিনেতা ছবি মুক্তির আগেই তারকা হয়ে যাচ্ছে।
সম্মাননা ও পুরস্কার
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে নায়করাজ রাজ্জাক শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৫ সালে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করেন। এছাড়াও রেকর্ড সাতবার আজীবন সম্মাননা এবং অসংখ্য দেশি-বিদেশি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।