×

অর্থনীতি

যুদ্ধের অজুহাতে বাড়ছে রডের দাম, নেপথ্যে কারসাজি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২২, ০৮:২১ এএম

যুদ্ধের অজুহাতে বাড়ছে রডের দাম, নেপথ্যে কারসাজি

প্রতীকী ছবি

   

দেশের বাজারে আবারো হু হু করে বাড়ছে রডের দাম। তারই ধারাবাহিকতায় সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি টন রডের দাম ৮৯ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। গত ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশের বাজারে রডের টন সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকায় উঠেছিল- যা তখন ইতিহাসের রেকর্ড দাম ছিল। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টন রডের (৬০ গ্রেডের ওপরে) দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এক মাস আগেও প্রতি টন রড ৭৪ থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, কাঁচামাল সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রডের দাম বাড়ছে। তবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও ক্রেতাদের অভিযোগ- উৎপাদনকারীদের সিন্ডিকেটের কারণে লাগামহীন রডের বাজার। রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বাড়ি নির্মাণকারী, আবাসন ব্যবসায়ী ও সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির স্ক্র্যাপ (পুরনো লোহার টুকরো) ও পুরনো জাহাজের দাম বেড়ে গেছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রডের বাজারে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, দেশে স্বয়ংক্রিয় ইস্পাত কারখানা আছে ৩০টি। সনাতন পদ্ধতির কারখানা আছে ১০০টির মতো। বছরে দেশে রডের চাহিদা আছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টন। এই হিসাবে মাসে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টন রড দরকার হয়। রড তৈরির কাঁচামাল হলো পুরনো লোহার টুকরো। এই কাঁচামাল সরাসরি আমদানি করে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন উৎপাদকরা। বাকি প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ আসে জাহাজভাঙা শিল্প এবং লোকাল ভাঙারি বর্জ্য থেকে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শাহরিয়ার স্টিল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় রডের দামও বেড়েছে। তিনি বলেন, একসময় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে স্ক্র্যাপ কেনা হতো প্রতি টন ৩০০ ডলারে। এখন কেনা হচ্ছে ৬৪০ ডলারে। এর আগে বেশ কিছু দিন ৬০০ ডলার ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অনেক দেশ; যারা আগে দুদেশ থেকে রড তৈরির স্ক্র্যাপ কিনতো, তারা এখন মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া থেকে কিনছে। আমরা আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে স্ক্র্যাপ কিনেছি। এখন আরো বেশি দেশ এসব দেশ থেকে কেনার কারণে প্রতি টন স্ক্র্যাপে ৪০-৫০ ডলার করে দাম বেড়ে গেছে।

দেশে রড উৎপাদনকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রড তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে স্ক্র্যাপের বাজার আরো অস্থির হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুদিন আগে যে স্ক্র্যাপের টন ৬৬০ ডলার ছিল, বৃহস্পতিবার তা ৭৪০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। দুদিনের ব্যবধানে স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি বেড়েছে ৮০ ডলার। বর্তমানে কেএসআরএমর প্রতি টন রড বিক্রি করা হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৬ হাজার টাকায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্প থেকে আগে যে পরিমাণ স্ক্র্যাপ পাওয়া যেত তা অনেক কমে গেছে। অধিকাংশ ইয়ার্ডে জাহাজ নেই। শিপইয়ার্ডের প্রতি টন স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়। ইউক্রেন থেকে স্ক্র্যাপের পাশাপাশি প্লেট আমদানি করা হতো। যুদ্ধের কারণে দেশটি থেকে কোনো স্ক্র্যাপ আমদানি করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অন্য দেশ থেকে স্ক্র্যাপ আমদানি করতে হচ্ছে। গত ১৫ দিন ধরে আন্তর্জাতিকভাবে জাহাজ ভাড়া বেড়েছে তিন থেকে চারগুণ। মূলত এসব কারণে রডের দাম বেড়েছে।’

রিয়েল এস্টেট এন্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অতিমাত্রায় রডের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত। রডসহ প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু যে আবাসন খাতে এই সমস্যা হচ্ছে তা নয়, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেকেই বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। রডের বাজার স্থিতিশীল রাখতে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বারবার দাবি জানিয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাই।

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ইসিবি চত্বরে রড-সিমেন্ট বিক্রেতা মো. বাবুল বলেন, গত এক মাসের ব্যবধানে রডের দাম টনপ্রতি ১০-১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বুধবার বিএসআরএম স্টিলের রড কিনতে হয়েছে ৮৯ হাজার ৫০০ টাকায়, বায়েজিদ স্টিলের রড ৮৭ হাজার টাকা, কেএসআরএমের ৮৮ হাজার টাকা এবং একেএস স্টিলের রড কিনতে হয়েছে ৮৮ হাজার টাকায়। রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে নানা অজুহাতে রডের দামে বাড়িয়েছে। এজন্য সরকারের তদারকি বাড়ানো দরকার।

তিনি বলেন, রডের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি সিমেন্টের দামও বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বর্তমানে রুবি সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ টাকা, রয়েল সিমেন্ট ৪৭০ টাকা, কনফিডেন্স সিমেন্ট ৪৭৫ টাকা। অথচ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রুবি সিমেন্ট কিনেছি ৪২০ টাকা, কনফিডেন্স সিমেন্ট ছিল ৩৯০ টাকা ও রয়েল সিমেন্ট ছিল ৩৯৫ টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App