×

অর্থনীতি

বাংলাদেশ কি ট্রাম্পের শুল্ক চিঠি পেল?

Icon

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

বাংলাদেশ কি ট্রাম্পের শুল্ক চিঠি পেল?

ট্রাম্পের শুল্ক চিঠি

বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত করে ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আবার কোনো কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করার পথে হাঁটেনি হোয়াইট হাউস কিংবা সেই দেশগুলো থেকে এই বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে এখনো চুক্তি হয়নি ট্রাম্প প্রশাসনের। এ অবস্থায়  বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা থেকে বিভিন্ন দেশকে চিঠি পাঠাতে শুরু করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছে কি না এখনো খোলাসা হয়নি। তবে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আজ মঙ্গলবার আবার বৈঠক রয়েছে। বৈঠক থেকে সমাধান না বেরোলে নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে বাংলাদেশকে।  

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, যুক্তরাষ্ট্র সময় সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে শুল্ক কিংবা চুক্তির চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকবে কি না, থাকলেও কোন তালিকায় থাকবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের নয়া শুল্কনীতি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামীকাল বুধবার সেই স্থগিতকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। 

সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’কে রাজস্ব সচিব স্কট বেসান্ত জানিয়েছেন, সময়সীয়া শেষ হওয়ার আগে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলার মুখে পৌঁছে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামীকাল ৯ জুলাইয়ের মধ্যে অন্যান্য দেশকে নতুন শুল্কহার জানিয়ে দেয়া হবে। এসব শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে। তিনি বলেন, যেসব দেশ চুক্তি করতে ব্যর্থ হবে, তাদের ওপর উচ্চহারে শুল্ক বসবে। এর আগে গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ১০ শতাংশভিত্তিক শুল্ক এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন। যদিও সেটি তৎক্ষণাৎ কার্যকর না করে ৯ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। এখন নতুন সময়সীমা অনুযায়ী, উচ্চহারে শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। রাজস্ব সচিব স্কট বেসান্ত জানিয়েছেন, চিন, ব্রিটেন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে ইতিমধ্যে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনা এখনও চলছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরাও যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গিয়েছেন। বাংলাদেশ-সহ বেশ কিছু দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে। এরইমধ্যে বেসান্ত আরও জানান, শুল্ক কমানোর কথা বলে ১০০টি দেশকে চিঠি পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প। সময়সীমার মধ্যে ওই দেশগুলো মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক না কমালে আগামী ১ আগস্ট থেকে ওই দেশগুলোর উপর চড়া হারের শুল্ক কার্যকর হবে। 

এদিকে, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, বেশ কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক যাতে আরোপ না হয়, তার জন্য সম্ভাব্য এ চুক্তির বিষয়ে দর-কষাকষি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। আগামীকালের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত করে চুক্তি করা না গেলেও ঢাকার ওপর বাড়তি শুল্ক কার্যকর না করার আশ্বাস দিয়েছে ওয়াশিংটন। ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন, প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের ওপর ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ঘোষণা করা হয় ৩৭ শতাংশ। তবে ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক ইস্যুতে চুক্তির খসড়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে চুক্তির খসড়া নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক কার্যকর করা হবে না। এ ছাড়া বৈঠকে ইউএসটিআর আশ্বাস দিয়েছে, ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিদের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে না বাংলাদেশ। বৈঠকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোন কোন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চায়, তার একটি তালিকা চেয়েছে। সূত্র জানায়, তালিকা হাতে পেলে সেটি সরকারের অন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত করবে বাংলাদেশ এবং তারপর যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশে শুল্ক নিয়ে কোনো চিঠি পাঠিয়েছে কি না তা সেই বৈঠক থেকে জানানো হয়নি। চলমান আলোচনা থেকে শুল্ক সংকটের সমাধান আসবে বলে আশাবাদী সরকার। আজ এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে কম, বরং বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাই তাদের কাছে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশকে ৩৭ শতাংশ শুল্কের মতো কঠিন বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপকভাবে বিদেশি সহায়তা কমিয়েছে উল্লেখ করে সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতি বিষয়ক সাময়িকী ফরেন পলিসির উইকলি সাউথ এশিয়া ব্রিফিংয়ে কুগেলম্যান বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেয়া কিংবা রাষ্ট্রগঠনে অর্থব্যয়ে তাদের আগ্রহ ‘নিতান্তই কম’। এ সময়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যকার সাম্প্রতিক ফোনালাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উভয় দেশের পক্ষ থেকে ওই ফোনালাপের যে বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট হয়েছে, ওয়াশিংটনের কাছে এখন ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব বাণিজ্য ও আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেয়ার ক্ষেত্রে। তার মতে, দুই নেতা অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (ইন্দো-প্যাসিফিক) নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনা করেন। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তার অর্থ হলো চীনের প্রভাব মোকাবিলা। কিন্তু এ দুটো লক্ষ্যই বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করেন এই এই দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি না হলে বাংলাদেশকে ৩৭ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়তে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিতে অটুট রয়েছে, এতে কোনো বড় শক্তির পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান না নেয়ার কৌশল অনুসরণ করা হয়। এর আগে ৩০ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর ফোনালাপে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতা নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনাগুলোর একটি। কুগেলম্যান বলেন, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার দেশ থেকে পলায়নের পর গণতন্ত্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে উন্নয়ন সহায়তা ও কারিগরি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ফোনালাপের পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধান উপদেষ্টা উভয়েই যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত শুল্ক নীতিমালার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এ সংকট মোকাবিলায় গত এপ্রিলে জরুরি বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এরই অংশ হিসেবে নতুন শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি সহজ করার চেষ্টা চলছে।


সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, মৃত্যু ৩ জনের

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ, মৃত্যু ৩ জনের

মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কী বলেন তার বংশধররা?

মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে কী বলেন তার বংশধররা?

নির্বাচনে কোন দল কত ভোট পাবে, জরিপে যা জানা গেলো

নির্বাচনে কোন দল কত ভোট পাবে, জরিপে যা জানা গেলো

এবার আনিসুল, হাওলাদার ও চুন্নুকে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি দিলেন জিএম কাদের

এবার আনিসুল, হাওলাদার ও চুন্নুকে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি দিলেন জিএম কাদের

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App