চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনা, ১০ ছাত্রী বহিষ্কার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’ হলের সামনে নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙতে যাওয়া ছাত্রদের বাধা দেয়ার পর প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার’ অভিযোগে ১০ ছাত্রীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির’ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম।
রেজিস্ট্রার বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এক ছাত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ৯ ছাত্রীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের সঙ্গে তদন্ত কমিটি কথা বলেছে। তারা ক্ষমা চেয়েছিলেন, কিন্তু দোষী প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি দেয়া হয়েছে।
স্থায়ী বহিষ্কার করা ছাত্রীর নাম আফসানা এনায়েত এমি। তিনি আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক বজলুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা হলের ১৩ জন ছাত্রী, প্রভোস্ট, দুইজন হাউস টিউটর, দুইজন নিরাপত্তা কর্মী, উপাচার্যের বাংলোর উপরে ও নিচে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচজন নিরাপত্তা কর্মী, নিরাপত্তা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ২৪ জনের সাক্ষাতকার, বিভিন্ন স্থানের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলোর পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে তদন্ত কমিটি।
সহকারী প্রক্টর বজলুর রহমান বলেন, বিভিন্ন ফুটেজ ও সাক্ষাতকার গ্রহণের সময় যাদের সম্পৃক্ততা সরাসরি পাওয়া গেছে এমন ১০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আরো অনেকের সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক বজলুর বলেন, “আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি ঘটনার সঙ্গে আরো অনেকেই সম্পৃক্ত ছিল। তাদের পরিচয় শনাক্তে আরো তদন্ত প্রয়োজন।
“আমরা ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য বলেছিলাম। আরো কিছুদিন সময় পেলে হয়ত সম্পৃক্ত আরো অনেককেই শনাক্ত করতে পারতাম। কিন্তু শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আর সময় না দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক’শ ছাত্র ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের’ সামনে থাকা নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙতে যান। এ সময় হল থেকে এক দল ছাত্রী বের হয়ে তাদের বাধা দেন। বাধার মুখে ছাত্ররা সরে গেলেও ছাত্রীরা সেখানে অবস্থান নেন।
দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর সেখানে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা হলে গেলে তাদের সঙ্গেও ছাত্রীরা বিতণ্ডায় জড়িয়ে যান।
এ সময় ছাত্রীরা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের ‘সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী’ বলে দুয়ো দেয় এবং সহকারী প্রক্টর কোরবান আলীকে ‘শারীরিক লাঞ্ছিত’ করার অভিযোগ ওঠে। তাছাড়া সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদেরও ‘লাঞ্ছিত’ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে।
পরে ছাত্রীরা উপাচার্যের বাংলোর সামনে গিয়েও বিক্ষোভ দেখান।
এ ঘটনার শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইসমত আরা হককে প্রধান করে তিনি সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসমত আলী ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান।